ক্যাফে বিদেশের চিঠি সায়ন্তি ঘোষ

আমেরিকা ইরানে মিসাইল ছেড়েছে। নূর সেরানির তাতে কিছু এসে যায় না। অন্তত আজকে। তার পেটে বড় যন্ত্রণা। অবাঞ্চিত বাচ্চাটা মোচড় দিয়ে বেরিয়ে আসতে চাইছে। এখনো সাত মাসও হয়নি। আহা, আরো কিছুদিন যদি ধরে রাখা যেত। অবশ্য বাচ্চাদের বড় ডাক্তারবাবু বললেন সাত মাসের বাচ্চারা দিব্যি টিকে থাকে। তবে স্পেশাল কেয়ারে থাকতে হবে তিন চার মাস। এখানে সবই সম্ভব। কত বড়, ধনীর দেশ। ইংল্যান্ড।আরতোক কাঁধে হাত রাখে নূরের। আরতোক কবি ছিল। কোন এক কালে। বাচ্চাটা আরতোকের নয়, তবে বড় মায়া তার। কবিরা বুঝি এমনই হয়।
তিন মাস জেলে ছিল নুর। হিজাব বিরোধী এক আন্দোলনে ধরা পড়েছিল সে। আরতোকের ইতিহাসও মোটামুটি তাই। যা কবিতা লিখেছিল, তা সরকারের নাপসন্দ। তিন মাস জেলের অকথ্য অত্যাচারে হাতের নখগুলো খুইয়েছিল নূর আর পেটে এসেছিল সন্তান।
তাও নূরের অপেক্ষা করেছিল আরতোক।
কেমন করে জানি পালিয়ে ছিল দুজনেই। বস্তা বোঝাই মালবাহী লরির পেছনে লুকিয়ে, কিভাবে যে পৌঁছেছিল ইউরোপে, নিজেদেরই বিশ্বাস হয় না।
হাসপাতালের মানুষরা ভালো। তাদের জামা- কাপড়, ওষুধ, সব দিয়েছে তারা। ভাঙ্গা ভাঙ্গা ইংরেজিতে তাদের সাথে কথা বলে নূর। বড় কৃতজ্ঞ সে।
একই দিনে লন্ডনে নেমেছে দুই বিরোধী দল।
এক দলের দাবি বন্ধ হোক ইমিগ্রেশন। দেশের সর্বনাশ করে দিল মুসলমানেরা।
আরেক দল লিবারেল। প্যালেস্টাইন পন্থী। immigrants welcome here. Israel নিপাত যাক। রব তুলেছে তারা।
ইরানের ব্যাপারে যে ঠিক। কী বলা উচিত, ধন্দেতে আছেন বিদ্বজনেরা। স্বৈরাচারী ইরান না স্বৈরাচারী আমেরিকা? বেঁধে গেছে বিতর্ক।
নূর শুধু জানে, তার কথা, নাসরিনের কথা , শিরিনের কথা, আজ মুলতুবি থাকবে। প্রয়োজন মত এরাই একদিন তাদের মতো মেয়েদের ডেকে, ধরিয়ে দেবে বিশ্ব শান্তির নোবেল প্রাইজ। করে দেবে বিখ্যাত। আজ না হয় মায়ার খেলার নায়ক হন মার্কিন অধিপতি। তিনি পাচ্ছেন তো নোবেলটা?