সম্পাদকীয়

সমালোচনা
সমালোচনা কথাটিকে আমরা সাধারণত নেগেটিভ অর্থে নিই। কিন্তু এটি আক্ষরিক ও অন্তর্নিহিত দুই অর্থেই ভীষণ নিউট্রাল। সম+আলোচনা, অর্থাৎ সমান ভাবে ভালো ও খারাপ দিকটাকে তুলে ধরা, তা নিয়ে আলোচনা করা। ইংরেজিতে যাকে বলে ক্রিটিসিজম। যারা ক্রিটিসাইজ করেন তাদের আমরা সাধারণত খারাপ বলি। কারণ যারা নিন্দা করে, তাদের আমরা বলি ক্রিটিসাইজ করছে। কিন্তু যারা প্রশংসা করছে, তাদের কেন বলিনা? তারাও কিন্তু ক্রিটিসাইজই করছে। শুধু অসফলরাই সমালোচনা বা ক্রিটিসাইজ করে না। আমরা অসফলদের নিন্দুক মনোবৃত্তিকে সমালোচনা নামক মহান শব্দটির সঙ্গে গুলিয়ে হয়তো সমালোচনা শব্দটিকে অপমান করি। একজন সমালোচক বা একজন ক্রিটিক হতে অনেক বেশি জ্ঞানের প্রয়োজন। তাই সমালোচনা করা খারাপ নয়, তবে অজ্ঞান হয়ে নয়। জ্ঞানের সমুদ্র জয় করে তবে সমালোচনা করা উচিত। এটা আমাদের ভুল যে আমরা “তিনি প্রশংসিত হলেন” বাক্যটির বিপরীতে “তিনি সমালোচিত হলেন” বাক্যটি ব্যবহার করি। ভুল করি। বলা উচিত “তিনি নিন্দিত হলেন।” তাহলে “তিনি সমালোচিত হলেন” বাক্যটি কি ভুল? বা এর কোন অস্তিত্বই নেই? অবশ্যই এর অস্তিত্ব আছে। উদাহরণস্বরূপ বলতে পারি- ভারতের সর্বকালের সেরা ক্রিকেট অধিনায়ক সৌরভ গাঙ্গুলী। তিনি একাধারে একজন ভালো অধিনায়ক ও ব্যাটসম্যান। অফ সাইডের ভগবান। একজন পঞ্চম বোলার হিসেবেও যথেষ্ট কার্যকরী। দলের সমস্ত খেলোয়াড়কে উদ্বুদ্ধ করতে পারেন। তবে চাপের মুখে মাথাগরম করে ফেলা, রানিং বিট্যুইন দ্য উইকেট ভীষণ দুর্বল, এজন্য যেমন নিজে অনেকবার আউট হয়েছেন তেমনি উইকেটে জমে যাওয়া সতীর্থকেও আউট করেছেন। তবে বলা যেতেই পারে দোষে গুণে তিনি একজন ব্যালান্সড ক্রিকেটার। হ্যাঁ, এই হলো সমালোচনা।
আর যদি ধরেই নিই সেই সমালোচনা, যা আমরা সাধারণত বলে থাকি, তাহলে বলবো সমালোচনা করা ভালো। কিন্তু সেটা স্টেপ বাই স্টেপ। প্রথমে নিজেকে আদ্যোপান্ত সমালোচনা করতে হবে। তারপর নিজের সমালোচনা শেষ হলে অন্যের দিকে সমালোচনার দৃষ্টি হানতে হবে। কিন্তু যতদিন বাঁচবো ঠিক ততদিনই কিন্তু কেটে যাবে নিজেকে সমালোচনা করতে। তাই অন্যকে সমালোচনার কোন সুযোগই নেই আমাদের।
সমালোচনার বিপরীত কি অসমালোচনা? আমার সঠিক জানা নেই। তবে কারোর শুধুই নিন্দা যেমন একজনকে মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত করে তোলে, তেমনি শুধুই প্রসংশা বিগড়ে দেয়, উন্নতির পথ ও ইচ্ছা সংকীর্ণ হয়। তাই অসম আলোচনা সমালোচনার থেকেও খারাপ।
সায়ন্তন ধর