সম্পাদকীয়

স্বাধীনতা

এবারের সাহিত্য জোনের জন্য স্বাধীনতা বিষয়ক লেখা আহ্বান করেছিলাম। এডিটিং করতে গিয়ে সব লেখাই পড়া হয়ে যায় কমবেশী। দেখলাম স্বাধীনতার পরপর যে শব্দবন্ধগুলোকে ‘নিষিদ্ধ’ করে রাখা হয়েছিল অর্থাৎ সেই ‘এ আজাদী ঝুটা হ্যায়’ সেই শব্দবন্ধগুলো কবিতা, গল্পে বিদ্রোহ সৃষ্টি করে ফিরে ফিরে আসছে। স্ব+অধীনতা এই থেকে স্বাধীনতা। অর্থাৎ নিজের অধীনে থাকা। নিজের অধীনে মানে নিজের মানুষের অধীনে নয়, নিজের ভালো সত্তার অধীনে। নিজে যদি ঠিক থাকা যায়, প্রতিটি ভারতবাসী যদি নিজে ঠিক থাকে, তবেই স্বাধীনতা। আবার মাথায় রাখতে হবে স্বাধীনতা মানে স্বেচ্ছাচারিতা নয়। আমার কোন কর্ম যদি সমাজে খারাপ প্রভাব ফেলে, তা সযত্নে এড়িয়ে যেতে হবে। আমি ত্রুটিমুক্ত হলে সমাজের কথা ভাবতে হবে। সমাজকে ত্রুটিমুক্ত করতে পারলে দেশের কথা ভাবতে হবে। অবশ্য ভারতের প্রতিটা ‘আমি’ সৎ পথে চলতে পারলে ভারত এমনিতেই সৎ পথে থাকবে। অথচ আমরা আমাদের ‘আমিটাকে’ ভুলে দেশের কথা ভাবছি। কাদা ছোঁড়াছুঁড়ি করছি। এভাবে দেশ স্বাধীন হলেও ‘স্বাধীনতা’ ধরে রাখতে পারে না। স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস পড়তে গিয়ে বারেবারে একটি দ্বিধার কথা শুনেছি মহামানবদের উক্তিতে। কেউ বলেছেন দেশকে স্বাধীন করতে হবে। কেউ বলেছেন দেশকে স্বাধীন করার আগে দেশবাসীকে স্বাধীন দেশ সামলানোর উপযুক্ত করে তুলতে হবে। আবার দেশ স্বাধীন না হলে এই উপযুক্ত করে তোলার কাজও সুষ্ঠুভাবে করা সম্ভব নয়। এভাবেই স্বাধীনতা এসে যায়। না না এমনিতে তো আসেনি স্বাধীনতা। কত লক্ষ কোটি বীর শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত এ স্বাধীনতা। আমরা কি সেই রক্তের দাম রাখতে পারছি? আমাদের দেশ কি আজ বেলাইন হয়েছে? না, আমরা যখন স্বাধীনতা পেয়ে আনন্দে মশগুল, তখনই বেলাইন হয়ে গেছে দেশ। আমরা বুঝতেও পারিনি। স্বাধীনতা পাওয়ার চেয়েও কঠিন তা টিকিয়ে রাখা। স্বাধীনতা সংগ্রামে শত্রু ছিল চিহ্নিত ও বিদেশী। ফলে এত রক্তক্ষয়ী সংগ্রামেও কিছু একটা অ্যাডভান্টেজ ছিল। তখনও যে বিশ্বাসঘাতক ছিল না তা নয়, তবে ‘শত্রু বিদেশী’ এটি একটি সুবিধা ছিল। কিন্তু স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে স্বাধীনতা রক্ষা করার লড়াই কিন্তু কঠিন। লড়তে হবে আমাদের নিজেদের ‘ভোগবিলাসী মন’-এর সাথে। লড়তে হবে আমাদের ‘বিশ্বাসঘাতকতা’-র বিরুদ্ধে। লড়াই আমাদের শোষণের বিরুদ্ধে। লড়াই স্বাধীনতার অপব্যবহারকারীদের বিরুদ্ধে। এ বড় কঠিন সংগ্রাম। শত্রু চিহ্নিত নয়। কে শত্রু কে মিত্র জানতে গভীর অধ্যয়ন দরকার। প্রতারিত হয়ে ভুল করার সম্ভাবনা প্রবল। তবু লড়তে হবে। লড়াই করাই জীবনের অপর নাম। লড়াইতেই তো জীবনের সার্থকতা। আমরা ‘মানবিকতা’ গুণের কথা বলি। মানুষের বৈশিষ্ট্য এই মানবিকতা। কিন্তু মানুষের এই বৈশিষ্ট্যের একটি কালো দিক রয়েছে। মানুষ এক হয়ে চলতে জানে না। এক হয়ে চলা তার স্বভাববিরুদ্ধ। আমরা স্বাধীনতার জন্য বিদেশীদের সাথে লড়েছি। বিদেশীমুক্ত হওয়ার পর ধর্ম নিয়ে লড়ছি। তবু মনে করি কিছু লড়াই জারি থাকাই ভালো। কারণ এ লড়াইতে জয়লাভ করলে অন্যকিছু নিয়ে আবার লড়বো। ইউরোপের এক হারিয়ে যাওয়া দেশের কথা বলি। যুগোস্লাভিয়া, এর গঠন অনেকটা ভারত গঠনের সমসাময়িক। দেশটির গঠনশৈলীও আমাদের মতো ছিল। নানা জাতি নানা ভাষার সমন্বয়ে। অথচ দেশটিতে একটিই ধর্ম ছিল। ধর্ম নিয়ে লড়াই ছিল না বলে তারা ভাষা, জাতি, সংস্কৃতির জন্য লড়লো। আর টুকরো টুকরো ক্রোয়েশিয়া, স্লোভেনিয়া, বসনিয়া-হার্জেগোভিনা, কসোভো, উত্তর ম্যাসিডোনিয়া, সার্বিয়া ও মন্টেনেগ্রো দেশে ভেঙে গেলো। তাই সব কিছু সামলে ভারত এখনও ঐক্য ধরে রাখার চেষ্টা করছে, তা যেন আমরা ধরে রাখতে পারি। সাথে নিশ্চিত করতে পারি আমাদের স্বাধীনতাকে। তবে আমাদের যতই মনে হোক এ কেমন স্বাধীনতা, তবু আমরা স্বাধীন এ বিশ্বাস শুধু নয়, স্বস্তিকে মনে রেখেই আমাদের ভুলত্রুটি শোধরাতে হবে। স্বাধীনতা এসেছে অনেক অমূল্য প্রাণের বিনিময়ে, এটা বিস্মৃত হই কোন্ দুঃসাহসে? স্বাধীনতাকে অস্বীকার করে আমরা আরও সুন্দর দেশ গড়ার লক্ষ্যে কখনোই এগোতে পারবো না। উস্কানিমূলক কথায় কান না দিয়ে বিভেদ ভুলে একতা রক্ষা করে সবল ও শক্তিশালী হয়ে প্রগতির লক্ষ্যে চলতে হবে। সার্বভৌমত্বের প্রাথমিক শর্ত সিস্টেমের মধ্যে থেকে লড়া। ৭৯ তম স্বাধীনতা দিবসের প্রাক্কালে দেখে নিই কে কি ভাবছেন দেশের স্বাধীনতা প্রসঙ্গে… জয় হিন্দ

সায়ন্তন ধর

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *