সম্পাদকীয়

মন: একটি প্রাকৃতিক সফটওয়্যার
আমাদের যদি একটা যন্ত্রের সাথে তুলনা করি, তাহলে আমাদের শরীরটা হার্ডওয়্যার আর মনটা হলো সফটওয়্যার। হার্ডওয়্যার কিন্তু সহজে নষ্ট হয় না, নষ্ট হলেও ঠিক করে নেওয়া যায়। কিন্তু সফটওয়্যার একবার বিগড়োলে সারাই করা বড়ই মুশকিল। অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়, তবে যদি ঠিক হয়, আবার চিরকালের মতো নষ্ট হওয়ার ভয়ও আছে। যন্ত্রের ক্ষেত্রে নতুন একটা সফটওয়্যার ইন্সটল করা যাবে হয়তো, কিন্তু আর একটা নতুন মন পাই কোথায়? তাই বলা যেতে পারে শরীরের চেয়েও মন বেশী মূল্যবান। মূল্যবান? না না, অমূল্য। শরীরের কাটাছেঁড়ার দাগ মিলিয়ে যায় কোশ বিভাজনের মাধ্যমে। কিন্তু মনে তো কোন কোশ নেই, তাহলে সেই দাগ মিলিয়ে যায় কি? ভাঙা কাচের মতো সে দাগ রয়ে যায় আজীবন। মানুষ কিন্তু শারিরীক স্বাস্থ্যের দিকে যতটা খেয়াল রাখে, ততটা মানসিক স্বাস্থ্যের দিকে রাখে না। নিজের মানসিক সুখ মাপতে তাকিয়ে থাকে তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বীর দিকে। ভুলে যায় মনটা কিন্তু সেই প্রতিদ্বন্দ্বীর কাছে নেই, আছে নিজের কাছেই। যেখানে সারা সপ্তাহের ক্লান্তি শেষে একটা ঝটিকা সফর, সারা দিনের কর্মব্যস্ততার পর রাতে একটু নিজেকে সময় দিতে গল্পের বই বা লেখার ডায়েরীটা টেনে নেওয়া যেতেই পারে, সেখানে আমরা কেমন যেন যান্ত্রিক হয়ে গিয়েছি। কিন্তু ভুলে যাই যন্ত্রের সফটওয়্যারগুলিকেও নিয়মিত আপডেট করতে হয়। মেমোরি রিফ্রেশ করতে হয়। যাক সে কথা, মনের অসুখ সারাতে হলে মনকে সময় দিতে হবে। মন কি চায় তা বুঝতে হবে। মানসিক দিক থেকে অসুস্থ এমন মানুষের সংখ্যা পৃথিবীতে নেহাত কম নয়… জটিল জগতের টানাপোড়েনের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে চলতে গিয়ে মানুষ ব্যক্তিত্বের ভারসাম্য হারিয়ে উন্মাদ রোগ, অবসাদগ্রস্ত রোগ এবং আচরণগত রোগের শিকার…অপরিণত মনও মানসিক রোগের আওতায় পড়ে। মনের জটিল পথে এদের নিমজ্জনের কারণে জীবনের ঐকতান লুপ্ত হয়ে যায়। প্রাক্ষোভিক সংযম এদের আয়ত্তের বাইরে চলে যায়… মানসিক জগতে ঝড় বয়ে যায়… তার চিন্তার জগতে বিভ্রান্তি দেখা দেয়… তার আকাঙ্ক্ষার জীবনে অবসাদ ও অনীহার কালো আঁধার নেমে আসে। আজ বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবসে প্রত্যেকের শপথ নেওয়ার দিন… সহানুভূতি দিয়ে এই বিষয়টিকে দেখবো, আর সাধ্যমতো এদের সুস্থতার জন্য সহমর্মিতার হাত প্রসারিত করবো…
সায়ন্তন ধর