কবিতায় স্বর্ণযুগে শিশির দাশগুপ্ত (গুচ্ছ কবিতা)

১| লাশ

ঝিলমিল করে উঠে এসেছে সমস্ত বিশ্বাস
আলো হয়ে ছুঁয়ে গেছে জীবনের শেষ নাভিশ্বাস
বকুলের গন্ধে শরীরে জ্বর ও প্রলাপ
সন্ধে বসেছে, উজ্জ্বল তারা ছড়াচ্ছে উত্তাপ
আনন্দে-বিষাদে ঘন হয়ে বসেছে মন
চিরকাল যেভাবে মৃত হয়েছে জনগন
প্রাতঃকালে তৃণসকল আড়া আড়ি প্রেম
তফাতে জীবন চলে, মৃত্যু হরদম
সূর্য ডুবে গেলে, লাল হয় আকাশ
আবিল মনেতে কেউ কুড়াতে থাকে লাশ।

 ২| প্রলাপ

শ্বাস কমে গেলে তুমি চিনে যাবে রঙ
দৃষ্টিহীনতায় বাড়ে যেমন প্রকৃত আন্দাজ
আসমানী রঙে যদি বুকে আঁকো ছবি
খোঁজো বন্ধু, তালাশ করো আকাশের চাবি
শ্বাস কমে গেলে দেখো প্রস্তুতি সারে কারা?
দৃষ্টিহীন হলে অন্ধকারে ফুটে ওঠে তারা
এক,দুই,তিন ক্রমশঃ বাড়ে শহরের তাপ
জমির তলায় বাড়ে সহস্র উত্তাপ
শ্বাস কমে গেলে, পা-দুটি স্মৃতিপথে চলে
নজর কমে গেলে, ধারণা প্রায়শই মেলে
শহরের ধোঁয়া হ্রাস পেলে
হাল্কা হয় বুক
নেশা কেটে গেলে ফিরে আসে পুরানো অসুখ।।

৩| অবকাশ

তবে কি অবকাশে স্থির হয় মন?
আকুলিবিকুলি শেষে বিছানায় দু দন্ড শয়ান
স্থির হোক না হোক, কদাচিৎ ভ্রমদোষে
বিমানের মতো উড়ে, মেঘেদের সাথে কথা রসেবশে
সেথা দিবসে সন্ধ্যাতারা, স্মৃতিপথে আনাগোনা
ছেঁড়াছেঁড়া প্রেমও আসে, গুপ্তশয্যায় হানা
যদি না অবশেষে, আরামের স্রোতে ভেসে মন যায় ভূমধ্যসাগরে,
তবে আর কিছু নাই, চোখ বুজে তারা গুনি
গুনে গুনে ঢুকে যাই ঘুমের দেশে।।

 ৪| টারগেট

নিশানা ঠিক রেখে, বাজী ধরে মন
শিয়রে স্বপ্নেরা গিজগিজ অনুক্ষণ
লকগেটে তখনো হিসেব, জল ছুঁইছুঁই
পাতালের উপদেশে, মাথা পেতে শুই
অথবা আন্দাজ করি সেকেন্ড,মিনিট ধরে
মন চড়ে রকেটে, চকিতে নিশানাও ছোটে
বেঁচে যায় বিমান, বেঁচে যায় জাহাজ বেহিসাবি দরে
টাকা বাঁচে, বাঁচে দল, বাকি সব মরে হরেদরে।।

৫| জ্যোতির্গণনা

আর নয়, আর নয়
দশা,অন্তর্দশা মিলিয়ে দেখেছি ভয়
মনের মিনারে বুঝেছি আলো নেই
শুধু অবক্ষয়ের নীলপাতালে গিয়ে হারিয়ে ফেলেছি খেই
নক্ষত্রের হিসেবও ধরেছি
গুনেছি ঘর, ঘর, চৌকোনা বরাত
লক্ষ্য, নিশানা কত কী বুঝেছি
মাথা নিচু করে মূর্তির বিধানও মেনেছি
রাত শেষে দেখেছি, তারারা নিভে গেছে
চোখের আলোয় দেখেছি কেঁচোরা সাঁতরে বেড়াচ্ছে
নয়নের পুকুরে একে একে নীলবাসনা ডুবে যাচ্ছে।।
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *