প্রবন্ধে সজ্জ্বল দত্ত

সমালোচককে কবিপ্রণাম

আমার শরীর, আমার আত্মা, আমার সমস্ত সত্ত্বার পেছন থেকে এক প্রবল আগুন যদি চরাচর গ্রাস করার লক্ষ্যে ছুটে আসতে থাকে, আমি শিল্পী আমি কবি আমি শব্দব্যঞ্জনায় নিজেকে ভাসিয়ে রাখি – আমার দশা কী হবে তবে? … খেয়ে নেবে? গ্রাস করবে? উৎকট মাংসপোড়া গন্ধ বেরোবে? … এমন অলৌকিক কি হতে পারে না? আগুন পৌঁছে গেল, স্পর্শ করল, কই আমি তো পুড়ে যাচ্ছি না! স্পর্শ পেয়েই সরে যাচ্ছি আর আকাশ-বাতাস ঝলসে ফেলা আগুন আমাকে ছুঁয়ে বেরিয়ে যাচ্ছে পাশ দিয়ে। … এমন অলৌকিক কি হতে পারে না? পুড়তে পুড়তে প্রবল গোঙানি আমার, অর্ধদগ্ধ হঠাৎই ছিটকে সরে এলাম, আগুনের ছোঁয়া পেয়ে এতক্ষণ যা কিছু ঘটেছে, সে’সব সারিয়ে তোলা পর্বের শুভসূচনা এইবার! … আমি কবি, সেই আগুন সেই উত্তাপ, আলো, বরাবর পেছন থেকে আসতে থাকে, একটু একটু করে এগোতে থাকে। … পালাতে চাই। না পারলে হু হু বাতাসে পুড়তে পুড়তে অতৃপ্ত আত্মা আমার গুমরে গুমরে কাঁদে । আঙুল তুলে পোড়া চামড়া দেখিয়ে কীসব যেন বলতে থাকে ওরা ! আমি শুনতে পাই স্পষ্ট ।
এদিকে একটা হাড় খসে পড়ল শরীর থেকে। ঝলসানো, কালো ঘেঁষা ছাই-ছাই রঙ। যতটুকু দগ্ধ অংশ, তার চামড়া কখন খুলে ধোঁয়া হয়ে ফুটছে মাটিতে। আমি ধীরে ধীরে অতি স্বাভাবিকে আসি, বুঝে ফেলি, আগুনে পুড়ছি। যারা পোড়া হাড় সংগ্রহ করবে বলে কোমরে গামছা বেঁধে দাঁড়িয়ে, যারা অগ্নিঝড়ের মুখে কতটা পুড়েছে কবি দূর থেকে লক্ষ্য করার জন্য দাঁড়িয়ে, তাদের সকলকে দু’ হাত জোড় করে প্রণাম।
যদি সে কবি হয় …, অর্ধদগ্ধ তাঁরা প্রত্যেকে কবি হয় যদি …, হতাশ হও গো তোমরা, শতবার আগুন ছুটে এলেও জানবে বেঁচে থাকা তাদের অভ্যেস!

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।