T3 || আমি ও রবীন্দ্রনাথ || বিশেষ সংখ্যায় সুদেষ্ণা দত্ত
by
·
Published
· Updated
প্রবহমান
ছোটবেলায় ঠাকুমার পুজোর ঘরে
ঠাকুরের সাথে রাখা থাকত তোমার ছবি,
তোমার জন্যও বরাদ্দ থাকত একমুঠো ফুল,
একটুখানি নকুলদানা,আর একটা আভূমি প্রণাম…
আমি ভাবতাম মহাভারতের মত
সহজপাঠও ঠাকুর লিখেছেন…রবিঠাকুর…
তারপর বয়স বাড়ল..শৈশব থেকে কৈশোর..
আমার পড়ার টেবিলে, আমার তানপুরায়
আমার বালিশের নিচে তখন তোমার একাধিপত্য,
আমার সদ্য যৌবন আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে
খুঁজে চলত এলা কিংবা লাবণ্যকে,
আমার একুশ বছরের বসন্ত ছুঁতে চাইত রঞ্জনকে…
কিন্তু জীবনের গতি বড় সর্পিল ঠাকুর…
গদ্যময় নতুন অধ্যায় ক্রমশ মুছে দিল
কাব্যময় অসমাপ্ত সব গল্প,
সংসারের বালিঝড়ে ধুলো জমল তানপুরায়,
বালিশের তলায় রাখা মোবাইল এলার্ম
কবিতাকে মনে করাতে ভুলে গেল একেবারে,
বিষণ্ন তুমি ফিরে গেলে আমাদের সেই ঠাকুরঘরে।
স্বামী চলে গেছেন বহুকাল,
ক্ষরতপ্ত দিন পেরিয়ে এখন আমি সূর্যাস্তের কাছাকাছি…
একমাত্র ছেলে কাজের সূত্রে অন্য দেশে,
তাদের ব্যস্ততম জীবনে আমি শুধুই একটা খোঁজ…
মেইল,ভিডিও কল আজ আমার একাকিত্বের সঙ্গী,
এরকমই এক বিষণ্ন মধ্যরাতে একটা মিষ্টি মেইল…
‘ঠাম্মি ফেসবুকটা খোল,আজ পঁচিশে বৈশাখ’…
বড়চুল চুড়ো করে বাঁধা,ব্ল্যাক টিশার্ট,শতচ্ছিন্ন জিন্স
আমার নাতির হাতের গিটারে নিখুঁত বেজে চলেছে…
‘পুরানো সেই দিনের কথা..ভুলবি কিরে হায় ওসে..’
ছুটে আসলাম ছাদে,ভোরের আলো সবে ফুটছে..
আসন্ন রবির আভায় নতুন সাজে আকাশ…
অনুভব করলাম, আমাদের জংধরা জীবনযাপনে
তুমি ফিরে আস নতুন গল্পে ,নতুন প্রতিশ্রুতিতে
বারবার…অনেকদিন বাদে আমি গেয়ে উঠলাম…
‘আরেকটিবার আয়রে সখা,প্রানের মাঝে আয়..’
আকাশ তখন রবির আলোয় স্বর্ণবর্ণা….