সম্পাদকীয়

প্রতিবাদ হোক পক্ষপাতহীন
সম্প্রতিক অতীতে বেশ কিছু অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে গেছে রাজ্যে ও দেশে। অনেকেই প্রতিবাদী হয়েছেন। আমার সেভাবে প্রতিবাদী হওয়া হয়নি। কারণ দেখেছি প্রতিবাদীদের বেশিরভাগই ভীষণরকম পক্ষপাতদুষ্ট। যেখানেই নারীরা ভিক্টিম হয়েছেন তাঁরা প্রতিবাদী হয়েছেন, অথচ পুরুষ যখন নারী কর্তৃক ভিক্টিম, তখন তাঁরা আশ্চর্যরকম ভাবে চুপ। হয়তো মনে মনে ‘ঠিক হয়েছে’, ‘বেশ হয়েছে’ বলছেন। আমার সম্পাদকীয় বরাবর প্রশংসিত হয়েছে, তবে আজ লিখতে বসে ভাবছি, এই যে লিখছি, অনেকেই হয়তো ক্ষুণ্ণ হবেন। কিন্তু তার জন্য চুপ করে থাকাটা অন্যায় হবে। লিখতে গিয়েও ভাবছি, লেখা কি ঠিক হচ্ছে? এগুলো কি আমার নিছক ছেলেমানুষি? কিন্তু এই যে আমি ছেলেমানুষি বললাম, মেয়েমানুষি কেন হয় না… এমন প্রশ্ন তো বিশ্ববন্দিত লেখিকার কলমেও দেখেছি। বেশিরভাগ ছেলের শখ শেষ হয়ে যায় গ্র্যাজুয়েশনের পর থেকেই। ওখানে আরও পড়বো, আরও ঘুরবো, যখন খুশি বাড়ি ফিরবো, প্রচুর খরচ করবো বা ঘরে বসে আরাম করবো আর শরীরের প্রতি যত্ন নেবো… এগুলো সব বিলাসিতা। সোশ্যাল মিডিয়ায় একটা মিম ঘুরে ফেরে… “ধরো দুর্যোগে পড়েছে তোমার মা ও স্ত্রী, তুমি কাকে আগে বাঁচাবে?” আমরা হয়তো উত্তর দিই একেকজন একেকরকম। সত্যিই যদি সেই পরিস্থিতিতে কোন ছেলে পড়ে, তাহলে নিজেকে বিপন্ন করে হলেও দু’জনকেই বাঁচাবে। কিন্তু ওই যে বললাম, ছেলেদের জীবনের সবচেয়ে কঠিনতম সময় গ্র্যাজুয়েশনের পর থেকে চাকরি পাওয়ার আগে পর্যন্ত। কারো কারো ক্ষেত্রে এই সময়টা মাধ্যমিকের পর থেকেও শুরু হতে পারে, আবার চাকরি পাওয়ার বেশকিছু বছর পর পর্যন্তও চলতে পারে। এই সময়টা কিন্তু কোন স্ত্রী থাকে না ছেলেদের। থাকবে কি করে? তারা তো সুপ্রতিষ্ঠিত ছেলেকেই বিয়ে করে। কিন্তু এই সময়টা মা-বাবা তাদের সহায় হন। ক্রমাগত সাপোর্ট করে যেতে থাকেন। ছেলেরা যদি সেই হিসেবে উপরোক্ত মিমটির উত্তর দিতো, তাহলে কিন্তু স্ত্রীদের খুব সমস্যা হতো। তো এরকম কঠিন সময় পেরোতে গিয়ে ছেলেরা হয়তো সুপ্রতিষ্ঠিত হয়ে ওঠে, কিন্তু শরীরের যত্ন নিতে পারে না। এছাড়াও কিছু জিনগত অভিশাপে ফলে মাথায় চুলের ঘনত্ব কমে যায়, টাক পড়ে যায়, সিক্স প্যাকের পরিবর্তে চর্বি জমে। রোদে পুড়ে পুড়ে মেলানিনের পরিমাণ বেড়ে গিয়ে ত্বক শ্যামবর্ণ হয়ে যায়। বেড়ে যায় বয়স। শখ আহ্লাদ সব মরে যায়। তারপর সোশ্যাল মিডিয়ায় আবার মিম তৈরি হয়… “সুন্দরী মেয়েটি মোটা, কালো, টাকযুক্ত, বোরিং কাকুকে বিয়ে করেছে।” সেখানে কমেন্ট সেকশনে মেয়েরা হাসাহাসি করে। “ঘুঁটে পোড়ে গোবর হাসে” এর মতো কিছু ছেলেও হাসে। তারা ঐক্যবদ্ধ হয় না। ক্রিকেটের ময়দানে বিরাট কোহলি সেঞ্চুরি করলে বলা হয় লেডি লাক… কিন্তু স্মৃতি মান্ধানা সেঞ্চুরি করলে বলা হয় না জেন্টস লাক। বলা হয় না স্ত্রীর চরম জিঘাংসার পরেও মহম্মদ শামির অসাধারণ স্পেলগুলোর কথা, অথবা স্ত্রীর অত্যাচার/ব্যাভিচারে হারিয়ে যাওয়া দীনেশ কার্তিক বা শিখর ধাওয়ানের মূল্যবান সময়গুলোর কথা। আজ এক অদ্ভুত সময়ে আমরা প্রবেশ করেছি যেখানে ডুবন্ত জাহাজকে তুলে ধরতে ধরতে আমরা শূন্যে তুলে দিয়েছি, আর ভেসে চলা ঠিকঠাক জাহাজটিকে হারিয়ে ফেলেছি সলিলের অতলে। আমরা ভারসাম্য হারিয়েছি। আমাদের এই ভারসাম্য ফিরিয়ে আনতেই হবে। একটি মেয়ে চাকরি না পেলেও তার দায়িত্ব নেওয়ার জন্য একটি ছেলে থাকবে। কিন্তু ছেলেটি যদি চাকরি না পায়, তাহলে কিন্তু তার কপালে কোন মেয়ে জুটবে না। অথচ, চাকরির পরীক্ষায় মেয়েদের জন্য রয়েছে সংরক্ষণ, আর ফর্ম ফিলাপ সম্পূর্ণ বিনামূল্যে। আরজিকর ও কসবা নিয়ে যতটা কথা হয়, মেঘালয়ের হানিমুন নিয়েও ততটাই কথা দাবী রাখে। সর্বোপরি এই বলে শেষ করবো যে পৃথিবীর বুকে স্ত্রী ও পুরুষ উভয়ের ভূমিকা ভারসাম্য যুক্ত। তাকে ভারসাম্যহীন করাটা অন্যায়। ব্যতিক্রম থাকবেই, কিন্তু, ব্যতিক্রম কখনো উদাহরণ হয় না, এটাও আমাদের মাথায় রাখতে হবে।
এবারে চলুন দেখে নেওয়া যাক এ সপ্তাহের মূল্যবান লেখনীগুলিকে…
সায়ন্তন ধর