সম্পাদকীয়

সংস্কৃতি
আমরা অনেক সময়েই শুনে থাকি যে পাশ্চাত্যের সংস্কৃতি আমাদের ভারতীয় সংস্কৃতিকে প্রভাবিত করছে। আমাদের সংস্কৃতিকে বাঁচিয়ে রাখা প্রয়োজন ইত্যাদি ইত্যাদি। কিন্তু সংস্কৃতিকে কি দেশ কাল সীমান্তে আটকানো যায়? ভারত নিজেই একটা বহু সাংস্কৃতিক দেশ। উত্তরের সাথে দক্ষিণের মিল নেই, পূর্বের সাথে পশ্চিমের মিল নেই। পশ্চিমবঙ্গই যদি ধরি, তাহলেও দেখা যায় পুরুলিয়ার পলাশ পরব, অথচ আমাদের উত্তরবঙ্গে পলাশ ফুটলেও পরব দেখা যায় না। জলপাইগুড়ি, কোচবিহারে তেমনি ভাণ্ডানী পূজা ও মেচেনি মেলা একেবারেই এখানকার নিজস্ব। উত্তরবঙ্গেও পাহাড়ে একরকম সংস্কৃতি, ডুয়ার্সের আর এক রকম সংস্কৃতি, আবার সমতলের সংস্কৃতি আর এক রকম। অথচ এই যে সংস্কৃতির পার্থক্য, তা কিন্তু কাঁটাতারের মতো হঠাৎ একটি শেষ হয়ে অন্যটি শুরু হয়ে গেলো এমন নয়। ডুয়ার্সের সংস্কৃতি ক্ষীণ হতে হতেও সমতলের কেন্দ্রে যেমন পৌঁছেছে, তেমনি সমতলের সংস্কৃতিও প্রভাবিত করছে ডুয়ার্সকে। এভাবেই সংস্কৃতি ক্রমশঃ রূপ পরিবর্তন করছে। আমাদের ভারতীয় সংস্কৃতি কেমন তা আজকের দিনের সংস্কৃতি দেখে বলা মুশকিল, অনার্যদের ভারতে আর্যদের আগমণ হয়েছে, শক, হুণ, পাঠান, মুঘল, বৃটিশরা এসেছে। সাথে নিয়ে এসেছে তাদের সংস্কৃতি। নিয়েছে আমাদের সংস্কৃতি। মিশেলে তৈরি হয়েছে আধুনিক ভারতীয় সংস্কৃতি। আমরা সেই নতুন সংস্কৃতির মানদণ্ডে বিচার করি ভালো বা খারাপ সংস্কৃতি। পাশ্চাত্যের সংস্কৃতির প্রভাবে আমরা গেল গেল রব তুলছি ঠিকই, কিন্তু মনে রাখতে হবে সংস্কৃতি চিরন্তন নয়। এটি পরিবর্তনশীল। তাই আমরা না চাইলেও প্রাচ্য পাশ্চাত্যের মিশ্রণ হবেই। পাশ্চাত্যও ভারতীয় সংস্কৃতি গ্রহণ করছে। তাছাড়া সংস্কৃতি শুধু জাতিগত নয়, ভাষাগত, ধর্মীয় সংস্কৃতিও রয়েছে। আমি তো মনে করি ইউরোপীয় বা আফ্রিকান সংস্কৃতির তুলনায় ভারতীয় ও আমেরিকান (উত্তর ও দক্ষিণ) সংস্কৃতি অনেক বেশি মিশ্র প্রকৃতির। তাই আজ যা বিসদৃশ ঠেকছে, কাল তাই হবে ফ্যাশন। আজ থেকে হাজার পাঁচেক বছর আগে সিন্ধু সভ্যতার পুরুষেরা গহনা পরতো। তার প্রমাণ পাওয়া গেছে, অথচ আজকাল পুরুষের তেমন গহনা দেখা যায় না। খুব ধীরে ধীরে কিছু সংস্কৃতি এই পুরুষের গহনা পরার বিষয়টি ফিরিয়ে আনছে। আমরা হয়তো তাদের হিপি বলি বা এদেশে ভালো চোখে দেখিনা। কিন্তু এটাই স্বাভাবিক। এদিক থেকে বলতে গেলে সংস্কৃতির যেন ভর বা শক্তির মতো নিত্যতা সূত্র রয়েছে। সংস্কৃতির সৃষ্টি বা ধ্বংস নেই, শুধু রূপান্তর আছে। তাই যেকোন সংস্কৃতিই গ্রহণীয়। শুধু দিনকাল সাপেক্ষে শালীনতা বজায় থাকলেই হলো।
সায়ন্তন ধর