পুজো আসছে, প্রত্যেক বছরের মতো কাশফুলে ঢেকেছে মফস্বল। ট্রেন খুলতে চলেছে, আগে মেট্রো, তারপর লোকাল, অবশেষে দূরপাল্লা। আমাদের দেশের স্থান দ্বিতীয়, হয়তো দশমীর আগে আমরা প্রথম স্থান দখল করতে পারবো। করোনা, মহামারী, অতিমারী – এইসব সাবধানবাণী শুধুমাত্র মানুষকে মানুষের থেকে দূরে সরিয়ে রাখে, কিছু মানুষের মৃত্যু হতেই পারে, কিন্তু জীবিত মানুষের সংখ্যা অনেক বেশি। সুতরাং, পুজো, লোকাল ট্রেন, সোনার ঠাকুর, একটু ফুচকা আর অনেক আলোর হাতছানি থেকে নিজেকে দূরে রাখার প্রশ্নই ওঠে না। ক্রিকেট খেলার স্কোরবোর্ডের মতো রোজ একটা বোর্ড দেখায়, তাতে সংখ্যাটা ক্রমশ বাড়তে থাকে। হায় এই অভাগার দেশ, এরকম যদি সেনসেক্সের সংখ্যাগুলো বাড়তো !
যাইহোক এবার পুজোর কথায় আসা যাক। খুব একটা ক্ষতি আশা করি হবে না, কিছুদিন আগে এক মন্দির স্থাপনের পরে, প্রধান পুরোহিত ছাড়া কেউ আক্রান্ত হয়নি (কিছু আছে, কিন্তু তারা প্রধান নয়)। সুতরাং, আমাদের আশা , কিছু উদ্যোক্তা আর কিছু পুরোহিত, সাথে কিছু ফেরিওয়ালা আর পথচারী ছাড়া কেউ নতুন করে আক্রান্ত হবে না (উদ্যোক্তারা ভয় পাবেন না, বাঁশ ফেলুন, আর বেশি দেরি নেই)। যারা মধ্যবিত্ত তারা বাড়িতে থেকে পাশের পাড়ার পুজোটা দেখুন, বাকি গুলো টিভিতে দেখে নিন। চিন্তা নেই, পাশের পাড়ার কেউ আক্রান্ত নয়, শুধু পাশের বাড়িটাকে একটু সাবধানে পার করবেন, ওখানে তো এক রোগী আছে, যিনি আপনার প্রতিবেশী।
ভার্চুয়াল পুজো – ভাবুন শুধু – মা আসছেন বড় পর্দায়, প্যান্ডেলের ভিতরে ছটা অ্যাঙ্গেলে ক্যামেরা। একটায় অসুর, একটায় মায়ের মুখ, বাকি গুলোয় ছানাপোনারা। সাথে, মাঝে মাঝে কর্নারে পুরোহিত, সন্ধিপুজোর কভারেজ। কিছু পুজো কমিটি ঘোষণা করে দিয়েছে যে তারা এবার বাইরে একাধিক জায়ান্ট স্ক্রিন বসাবে। কিন্তু সেটা দেখবেন কি করে? একটু বাসে করে যেতে হবে, প্যান্ডেলে ঢুকতে হবে না, রাস্তার মোড় থেকে জায়ান্ট স্ক্রিনে পুজো দেখে চলে আসবেন, শুধু আর দু-পা এগোবেন না, প্যান্ডেলে প্রবেশ করবেন না। চিন্তা নেই, আপনি যে একশো জনের মধ্যে দাঁড়িয়ে জায়ান্ট স্ক্রিনে পুজো দেখছেন, তারা সবাই নেগেটিভ।
সমাজের উচ্চবৃত্তদের জন্যে আমার সহানুভূতি পাহাড়সমান, আমি তাদের সংরক্ষণের কথা চিরকাল বলেছি। সুতরাং তাদের জন্যে একটি উপায় আছে আমার কাছে। পাড়া-ভিত্তিক গ্যাস চেম্বার তৈরী করুন। এক পাড়ার লোক অন্য পাড়ায় যেতে পারবে না। অন্য পাড়ার পুজো দেখতে হলে, টিভিতে অথবা ইন্টারনেটে দেখতে হবে। পুজো শেষ হলে, গণনা শুরু করুন। সরকারকে দোষারোপ করবেন না। পুজোর বাজেট কাটছাঁট করুন, কিছু টাকা রেখে দিন। ক্লাবের টাকায় প্রতি শনিবার ব্লিচিং পাউডার ছড়ান যখন, তখন কি সরকার কে ডাকেন? আর এবার উদ্বৃত্ত টাকায় দিঘা বা মন্দারমণি যেতে পারবেন না, ক্লাবেও একসাথে মহাভোজ হবে না। সুতরাং, ওই টাকায় পুজোর পরে লালারস সংগ্রহ করুন, মিউনিসিপালিটি সাথে আছে। গ্যাস চেম্বার তৈরী, পুজো শেষ, এক মাস ঘরে থাকুন, নতুন আক্রান্তদের মৃত্যু হোক। একমাস পরে, আবার শুরু করুন। কালীপুজো আসছে, একটু মজা করবেন না?