সাপ্তাহিক ধারাবাহিক উপন্যাসে শুদ্ধেন্দু চক্রবর্তী (পর্ব – ৯)

ক্ষণিক বসন্ত
দীপক
যমুনাঘাটার মাতৃমন্দিরের কাজ দীপকের কোনও দিন মনে ধরেনি। সে বিজ্ঞানের স্নাতক। এইসব তন্ত্র মন্ত্রে তার বিশ্বাস নেই। অথচ তার বাবা তর্কালঙ্কার। আদি সাতপুরুষ ধরে মায়ের পূজার্চনা করে আসছে তাঁরা। বাবার ইচ্ছে মিথ্যে হতে দিতে পারেনি সে। এছাড়াও অবশ্য আরো একটি কারণ আছে। যমুনাঘাটার এই মন্দিরটি রক্ষণাবেক্ষণ করে পাশেই শিবানুরাগী মঠ। এখানে পুরোহিতের কাজটা চালিয়ে গেলে মাসিক কিছু অর্থপ্রাপ্তি নিশ্চিত হয়। অন্যথায় বিজ্ঞানে তার সঙ্গেই স্নাতক হয়েছে এমন অনেক বন্ধু আপাতত শহরের শপিংমলে বড়মানুষদের গেঞ্জি জাঙ্গিয়া দেখিয়ে দেবার খেপ খাটছে। সেই তুলনায় দীপক অনেক সুরক্ষিত আছে। বাবা পক্ষাঘাতে চলে গেছেন গেল বছর। পক্ষাঘাত না অতিমারী কে জানে। দীপকের বাবা নন্দ ভট্টাচার্য মৃত্যুর আগেও মিনতি করে গেছেন তার কাছে। যমুনাঘাটার মন্দিরের কাজটা যেন সে ছেড়ে না দেয়।
এরই ভিতর ভৈরববাবাকে নিয়ে একটা বাড়াবাড়ি ঘটে গেল। এতে মনে মনে খুশিই হয়েছে অবশ্য দীপক। যেমন হুজুক প্রিয় এই যমুনাঘাটার মানুষ, ঠিক তেমনই এক যোগ্য দোসর জুটেছে তাদের। লোকটি গান মন্দ গায় না। দীপক অবশ্য গানটান তেমন বোঝে না। সে শুধু পূজা সাড়তে থাকে। শ্মশানে শব এলে তার ডাক পড়ে। শ্রাদ্ধশান্তির কাজে ডাক পড়লে নবগ্রহ ভূত পঞ্চেশ্বর পূজাকর্ম সাঙ্গ করে আসে। একমাত্র সমস্যা হয় ওই লুলো ছেলেটিকে নিয়ে। ছেলেটা অনাথ। কদিন আর এসেছে দীপক এখানে। তবে বাবার কাছে শুনেছে দীপক। ছেলেটাকে নাকি এই মন্দিরের চত্বরেই ফেলে গিয়েছিল কেউ। মনোহরকাকু আর বাবা তাকে মানুষ করেছে। লোকজন নাম দিয়েছে ‘কেদার’। ছেলেটা পুজোর ভিতরেই যখনতখন চলে আসে। হাতপা ভর্তি লালা গড়ায়। দীপকের ঘেন্না করে। মনেমনে বিড়বিড় করে বলে ‘যতোসব আদিখ্যেতা’।
তারপর হঠাৎ ভৈরববাবার মৃত্যু ঘটে গেল। মানুষটা যেমন হঠাৎ এসেছিল ঠিক তেমনই হঠাৎ চলেও গেল। লোকমুখের গুঞ্জন শুনতে পায় দীপক। ভৈরববাবার নাকি অলৌকিক শক্তি। সে মরেনি। শ্বেতশকুন হয়ে শ্মশানের ধারে বসে আছে। কেউ বা বলে ভৈরববাবা বিধর্মী। কেউ বলে ভৈরব নাকি মুসলমান ছিল। তার আসল নাম বাহার। সে হোক যা কিছু। জনশ্রুতিতে বিশ্বাস নেই। দীপক এসবে কান দেয় না তেমন। তবে ভৈরববাবার সমাধি হবার পর থেকে সে বুঝতে পারে যমুনাঘাটার মন্দিরের মহিমা যেন কোথায় হারিয়ে গিয়েছে। সব কেমন ছন্নছাড়া ভাব। মনোহরকাকুও আর তেমন উৎসাহ দেখায় না। শোনা যায় সেও নাকি নাটাগড়ের কাছে চলে যাচ্ছে।
দীপক কোনওদিন মায়াকাহনে ভরসা করে না। তার কাজ ভেরিয়েবল আর গুণিতক নিয়ে। তবু তাকেও একদিন মায়ার বাঁধনে আবদ্ধ করে ফেলল মনোহর। যমুনাঘাটায় তিনি কেদারকে সঙ্গে করে নিয়ে যাচ্ছেন একথা আগেই শুনতে পেয়েছিল দীপক। কিন্তু যাবার আগের রাতে তাকে মনোহরকাকু যা যা বলল, তাতে সে বুঝল যমুনাঘাটার মানুষ তাকে কতোটা ভরসা করে।আর সে ভরসার কারণও নেহাত কম নেই। মনোহরকাকু সন্ধ্যারতির পর শ্মশানের পাশেই যমুনা নদীঘাটে বসেছিল। একপাশে দীপক। মনোহর বললেন।
-এই মন্দির দেবোত্তর। কিন্তু এই মন্দিরের উপর তোমাদের বংশের ঋণ তার চেয়েও বেশি। তোমার বাবা তোমাকে হয়তো বলেননি। আজ আমি বলছি। মায়ের গায়ের যতো গয়না তুমি দেখছ, তা সব সোনার। অথচ আজ পর্যন্ত দেখ, কোনও তস্কর যবনের নজর স্পর্শ করেনি মায়ের আভরণ!
দীপক নীরবে শুনে চলে। চৌর্য না হওয়ার ভিতর যে ধার্মিকতা রয়েছে, তাতে তার কোনওদিনই আস্থা ছিল না তেমন। মায়ের আভরণের প্রতি পুত্র তস্করের চোখে তাকাবেই বা কেন ? এটাই তো স্বাভাবিক। মনোহর হয়তো অনুধাবন করতে পারলেন দীপকের মনের কথা। তার সামনে প্রবহমান যমুনা বয়ে চলেছে।উপরে যশোর রোডের উড়ালপুলের হ্যালোজেন আলো যেন জোনাকীর আলোআঁধারি তৈরি করছে।
-এই মন্দিরে মায়ের গহনা নিয়ে আরও একটি কথা যা তুমি জানো না দীপক, সে কথা তোমাকে আজ বলছি। আমি চলে গেলে যমুনাঘাটার আর কেউ তোমাকে একথা বলবে কিনা আমার জানা নেই। না বলার সম্ভাবনাই বেশি। তোমার বাবাও যখন তোমাকে বলেননি। তবে আমার মনে হল তোমার কথাটা জানা উচিত। তাই আজ বলছি।
দীপক কৌতূহলী হয়ে শুনতে থাকে।মনোহর বলে চলে।
-তোমার তখন মাত্র সাড়ে সাত মাস বয়স দীপক। অনেকদিনের মানত সাধনার পর গর্ভবতী হয়েছিলেন তোমার মা।তারপর আর গর্ভবতী হবার সম্ভাবনা ছিল না। ডাক্তার তোমার মায়ের প্রাণ বাঁচাতে তার জরায়ু নাড়ি বাদ দিয়ে দিলেন।তবু তুমি ছিলে ওদের জীবনে আশার একমাত্র আলো হয়ে।কিন্তু জন্মানোর পর জীবনের পথ মসৃণ ছিল না তোমার। প্রসবের পরেই তোমাকে কলকাতার হাসপাতালে রেফার করা হল। সেখানে আঠারো দিন ভেন্টিলেটরে ছিলে তুমি। এরপর যমুনাঘাটায় ফিরে আসার পর এই অসুখ সেই অসুখের পর একদিন ঘটল অন্য বিপত্তি। ঘন ঘন তর্কা। শরীর ধনুকের মতো বেঁকে যিচ্ছিল তোমার। অথচ জ্বর নেই। কোনও অন্য উপসর্গও নেই। শুধু মৃগী আর গা হাতপা নীল হয়ে যাওয়া। তোমাকে নিয়ে এ ডাক্তার সে ডাক্তার ঘুরে ঘুরে কাহিল হল নন্দদা আর বৌদি। কোনও ওষুধেই কিছু হল না। পয়সা খরচ হচ্ছিল জলের মতো। আমরা তখন কলেজে পড়ি। ওদের দেখে আমাদের খুব কষ্ট হত। শেষে মনেমনে ঠিক করল দুজনেই। শেষমেশ চিকিৎসার জন্য দক্ষিণ ভারতে যাবে। ঠিক সেই সময়ে হঠাৎ একদিন এই মন্দিরে এসে উপস্থিত হল এক তেজস্বী তান্ত্রিক। নন্দদা আর তার বৌ তোমাকে নিয়ে একদিন আমার কাছে এলেন…
উদাস চোখে নদীর স্রোতের দিকে তাকিয়ে রইল মনোহর। দীপক বলল,”তারপর?”
জীবনের এতোগুলো বছর কেটে যাবার পর আজ মনোহর প্রৌঢ়। তার মেয়ে চারুকেশী এখন প্রাপ্তবয়স্ক। যমুনাঘাটা ছাড়বার আগে দীপককে তাই সব কিছুই বলে যেতে চাইছিলেন মনোহর।
-নন্দদা আমাকে অনেক করে মিনতি করলেন।তোমাকে নিয়ে একবার ওই তান্ত্রিকের কাছে যেতে হবে আমাকে। আমি শাক্ত হলেও তখন তন্ত্রমনাত্র তেমন মানতাম না। কিন্তু ওরা নাছোড় ছিল। শেষে আমিও রাজি হলাম। তোমাকে নিয়ে সেই তান্ত্রিকের কাছে যাওয়া হল। তান্ত্রিকটি খুব আশ্চর্য মানুষ ছিল। অনেকটা তোমাদের ভৈরববাবার মতোই। তার তন্ত্রে জোর ছিল।সে বলল তোমাকে সম্পূর্ণ সারিয়ে দেবে। কিন্তু শর্তসাপেক্ষে।
-কী শর্ত?
-শর্ত এটাই যে তোমার আয়ুর বদলে তোমার মায়ের আয়ু তন্ত্রসাধককে সাধনার জন্য প্রদান করে যেতে হবে। আর মন্দিরে মায়ের বিগ্রহ তখন নিরালঙ্কার। তোমার মাকে তার স্ত্রীধন অনুদান হিসেবে মা শ্মশানকালীকে দিয়ে যেতে হবে। ওই যে অলঙ্কার দেখছ মাতৃমূর্তির গায়ে, ওগুলো তোমারই মায়ের দেওয়া বিয়ের গহনা। কিন্তু তান্ত্রিক একথাও বলেছিলেন যে এই দানের সংবাদ কারোকে বলা যাবে না। অর্ঘ্যের এই খবর বহুলপ্রচারিত হলে সাধনার ফল অধরা থেকে যাবে।
চোয়াল শক্ত হল দীপকের। তার বাবা যখন মিউনিসিপালিটি হাসপাতালে মৃত্যুযন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে, তখন সে একবার ভেবেছিল বাবাকে কলকাতার কোনো বেসরকারি হাসপাতালে আইসিইউতে নিয়ে গিয়ে একটা শেষ চেষ্টা করবে। দীপকের সেই আশা অপূর্ণ থেকে গেছে। টাকা ছিল না তার।
-এইসব কথা আমাকে কেন বলছেন?আমি জেনে কী করব?
-এটাই জানবে যে সারা জীবন এই মন্দিরের প্রতি কতোটা নিষ্ঠা ছিল তোমার বাবা মার। তাদের ভক্তির জোরেই হয়তো তোমার রোগটা আর হয়নি।
সত্যিই হতে পারে এটা। কারণ জ্ঞানত ফিট হবার কথা দীপকের মনে পড়ে না। তবে কি এই আরোগ্য তন্ত্রসাধনার বলেই?
-আপনি তন্ত্রে বিশ্বাস করেন?
মনোহর মাথা নেড়ে স্মিত হাসেন।
-এখন করি। তন্ত্রর প্রকৃত অর্থ জানলে তুমিও বিশ্বাস করবে দীপক।
-বলুন। তবে মনোহরকাকু। কী তন্ত্রর আসল পরিচয়?
-বলছি। শোনো তবে।
সব ধর্মের যে উদ্দেশ্য, তন্ত্রধর্মেরও সেই একই উদ্দেশ্য। সচ্চিদানন্দর অনুভূতি। সেই শক্তি সকলের মধ্যেই থাকে। প্রথমে সুপ্ত থেকে পরে তারা জাগ্রত হয়। কুণ্ডলিনী শক্তি যখন সুপ্ত, জাগতিক সবকিছুই তখন অবিকশিত। তন্ত্রধর্মের ভিতর নৈতিক আবর্জনা নেই। আছে যোগশাস্ত্র। আর যোগসাধনার আধার হল সপ্তসুর। তোমাকে তান্ত্রিকের যজ্ঞ ভালো করেনি দীপক। তোমাকে রোগ মুক্ত করেছে সেই সপ্তসুর।জীবধর্মের যৌবনে যে শক্তির সূচনা, তন্ত্র সেই শক্তিকে সপ্তসুরে পরিণত করে। তান্ত্রিক যোগী হয়তো সেই কারণেই তার মন্ত্র অতো সুর করে পড়তেন।
মনোহরকাকু চলে গেলে তার কথাগুলো বারবার ঘুরপাক খেতে থাকে তার মনের ভিতর। যতোবার মা ভবতারিণীর দিকে তার চোখ যায়, সে মায়ের মুখ দেখতে পায় না। তার ভিতরে যেন এক দানবিক স্বর বারবার গুনগুনিয়ে ওঠে। বিড়বিড় করে দীপক যেন নিজেকেই নিজে বলতে থাকে, “ও গহনা আমার। আমার ওতে অধিকার”। তান্ত্রিক দীপকের আরোগ্যের মূল্য কড়ায়গণ্ডায় বুঝে নিয়েছিলেন। এখন দীপক বোঝে। যখন তার মাত্র এক বছর বয়স,তার মা মেনিনজাইটিস হয়ে মারা গেলেন। বাবা বহু কষ্টে তাকে বিজ্ঞান পড়িয়েছে। অথচ কখনও গহনার কথা বলেনি। একি ত্যাগ? না বিশ্বাস?নাকি পরম মূর্খতা। দীপক বহুবার নানান আঙ্গিকে নিজেকে এই প্রশ্ন করে। কিন্তু সে প্রশ্নের উত্তর মেলে না কিছুতেই।
মাসের পর মাস কাটে। দীপক গতানুগতিক প্রাতরাহ্নিক সন্ধ্যাহ্নিক আর মাতৃ আচারের ভিতরেই শ্মশানে বসে তার পুরনো পাঠ্যবই পড়তে থাকে। পড়তে পড়তে তার ভিতর হঠাৎ যেন কী পরিবর্তন হয়। মনে হয় পৃথিবীর সমস্ত শক্তি তার সঙ্গে ছলনা করছে। মূর্তির গহনা দেখে তার হাত কাঁপতে থাকে। একদিন বৃহৎকালিকাপূরাণ পাঠ করতে করতে দীপক অনুভব করে তার ভিতর যেন অগ্নিসংযোগ করেছে কেউ। এতো স্বাভাবিক ঘটনা। দীপকের বয়স উনত্রিশ ছুঁইছুঁই। উচ্চশিক্ষার সুযোগ আশা সমস্তকিছু জলাঞ্জলি দিয়ে সে পড়ে আছে যমুনাঘাটায়। অথচ তার শরীর তা শুনবে কেন। তার যে নারীসঙ্গ হলো না কখনো। এই অঞ্চলে তাকে সবাই চেনে। মৃতা যুবতীর নগ্ন দেহ দেখতে দেখতে তার ভিতর উত্তেজনা সঞ্চারিত হয়। কালিকাপূরাণের চতুঃষষ্টিতম অধ্যায়ে তারাবতীর অভিশাপ প্রাপ্তি ও বেতাল ভৈরব জন্ম বৃত্তান্ত পড়তে পড়তে দীপক যেন কামোন্মত্ত হয়ে ওঠে। কবি লিখছেন আর দীপক তা পাঠ করে চলেছে। “স্নান হেতু তারাবতী যান নদীজলে। মহানন্দে করে খেলা অতি কুতুহলে । রম্ভা তিলোত্তমা মাঝে যেমন ইন্দ্রাণী। করিল উজ্জ্বল নদী যেন সৌদামিনী।” লম্পট সাধু কপোত মুনির লাম্পট্য ঘিরে ধরে দীপককে। সামনের গুণিজন মন দিয়ে বেতাল ভৈরব কথা শুনছেন। কিন্তু অসহায় দীপক পাঠ অসমাপ্ত রেখে উঠে পড়ে।
-আজ আর নয়। শরীরে জ্বর আছে। কাল বাকিটা।
সময় ভালো নয়। এক অতিমারী কাটিয়ে আরেক অতিমারী। ফের আরেক। এই প্রকোপ যেন আর কাটতেই চায় না কিছুতেই। তাই সকলেই দীপকের জ্বর এসেছে শুনে আর কথা বাড়ায় না। মন্দির চত্বর শুনশান হতেই রাতের অন্ধকারেই ভৈরববাবার সমাধি পেরিয়ে পুকুরে ডুব দেয় দীপক। কোমর জলে তার পরণের গামছা খুলে ভাসিয়ে দেয়। মনের ভিতর শব্দ ভেসে ওঠে।”পতিভাবে তারাবতী করয়ে সম্ভোগ। রেতঃপাত মাত্রে তার হয় গর্ভযোগ।” স্বয়ং দেবাদিদেব ছদ্মবেশে কপটে পরস্ত্রী ধর্ষণ করছেন।তাহলে দীপক তো সামান্য মানুষ। মনোহরকাকু বলেছিল সপ্তসুর। সে সুর কোথায়? পাপী পৃথিবীর প্রাপ্য সুর নয়। আর্তনাদ। ভাবতে ভাবতে জলের ভিতর আত্মরতিমগ্ন হয় দীপক। নিজের বিপরীতে নগ্ন স্নানরতা তারাবতীকে কল্পনা করে সে। ভেসে যাক। সবকিছু ভেসে যাক। আরও আর্তনাদ চাই। আরও…
এইভাবে কতক্ষণ অতিবাহিত হয়ে গেল কে জানে। গভীর রাতে নিরাভরণ দীপক জল ছেড়ে উঠে এল। তার দেহে একটি সুতোও নেই। কেউ দেখে ফেললে? দেখুক। দীপক ভাবিত হয় না। মন্দিরে সেইভাবে এসে সে একে একে মাতৃমূর্তির গহনাগুলি খুলে পরে নিতে থাকে দেহে। সোনালী গহনার আড়ালে দীপকের নগ্নতা আংশিক ঢেকে যায়। সমস্ত গহনা খোলার পর মন্দিরের দরজা বন্ধ করে নাটমন্দিরের আলো নিভিয়ে দেয় সে। তারপর জামাকাপড় পরে ব্যাগ গুছিয়ে নেয়। আলাদা খোপে যত্ন করে গয়নাগুলো রাখে। তার মনের ভিতর অপরাধবোধ আসে না। কালভৈরবের মতো আজ সেও তারাবতীকে ভোগ করেছে। তার ভয় কি?
তৈরি হয়ে নিয়ে ব্যাগ হাতে স্টেশনের পথে হাঁটা দিল দীপক। যমুনাঘাটার লোক তাকে কী ভাববে? চোর? লম্পট? ব্লাসফেমাস?ভাবুক। আজ এতো বছর বাদে এতো গুলো দিন অপচয়ের পর দীপক তার প্রশ্নর জবাব পেয়ে গেছে। এই গহনা যমুনাঘাটার ঈশ্বরের নয়। তার মায়ের।না হলেও এর বাজারদর অন্তত লাখ কুড়ি হবে। সাতনরি হার, মাথার মুকুট, কানের ঝুমকো। দাম হবেই। সে এই গয়না বিক্রি করে তার স্বপ্নপূরণ করবে। উচ্চশিক্ষার স্বপ্ন। তবে সেটা করতে হলে সবার আগে তাকে চিরকালের জন্য এই যমুনাঘাটা ছাড়তে হবে। শিয়ালদহ থেকে হাওড়ার দিকের ট্যাক্সি ধরল দীপক। তারপর মাঝরাতের এক্সপ্রেস ধরে পাড়ি দিল মুম্বাই।