T3 || কালির আঁচড় পাতা ভরে, কালী মেয়ে এলো ঘরে || লিখেছেন সুলগ্না চৌধুরী

নিকষ কালো রাত

কখনও পূর্ণিমার আলো ঝলমলে রাতকে ঘিরে, কখনও তমসাময় গাঢ় কালিমায় লেপা অমাবস্যার রাতকে ঘিরে পৃথিবীর উৎসব, উৎসব-এর পর উৎসব আসে এক, এক করে। আমরা সে উৎসব পালনের মধ্যে দিয়ে নিজেদেরকে সমৃদ্ধ করি।

এসেছে হিমের রাতের উৎসব, গাঢ় আঁধারে আলোক প্রজ্জ্বলনের উৎসব, এ তোমার-আমার উৎসব। ভারতবর্ষের সকল দেশ আর জাতির উৎসব।

নিকষ কালো অন্ধকার কে দূরে ঠেলে দিয়ে আলোয়, আলোয় সাজিয়ে তোলার উৎসব তুমি- “দীপাবলি”। চন্দ্রমার ললাট কে সৌন্দর্য্যের ভাগ্য এঁকে দেওয়া গাঢ় আঁধার কিন্তু সেই তুমি –“অমাবস্যা”।

এ নিকষ কালো আঁধার না থাকলে বোধকরি তুমি কি এত প্রাধান্য পেতে গো জোৎস্না? রাতের আকাশ কে আভাময় করে তোলো বটে, সেও তো নিকষ কালোর এত কাছে থাকো তাই একে অপরের পরিপূরক।

দীপাবলির এ উৎসবে আজ অন্ধকারকে বড্ড ভালো লাগে। হিমেল বাতাসে চোখ বোজা সুখে, অনুভব করি আজ কৃষ্ণপক্ষের এই কালিমা। তুমি যে নিছকই একটা ক্ষণ। এ ক্ষণকে ঘিরে আজ শ্যামা মা’য়ের পূজা। আজ তোমার অহংকার, এ উৎসবের এই আয়োজনকে ঘিরে, তোমার এ ক্ষণ আজ আমাদের একান্ত কাম্য।

চতুর্দশ প্রদীপের আলো দিয়ে শুরু হয় এ আঁধারে আলোর উৎসব। বহুদূরে সিল্যুয়েটের মতো হাইরাইডগুলোয় আলো জ্বলে উঠছে গাঢ় আঁধারে, তাই দেখে মুগ্ধ হই, আজ তোমার ঘন কালো আঁধারের বুক চিরে একটা, দুটো করে ফুটে ওঠা আলোরা আরও বেশী করে উজ্জ্বল, কোথাও আলোর ঝালরে মুখ সাজিয়েছে সুদীর্ঘ আবাসনগুলো। কোথাও আলোর মালা গলায় পরে সেজেছে গৃহ-বাড়ী, আকাশ জুড়ে আজ আতশবাজির ছোটাছুটি, আজ সন্তানের মঙ্গল কামনায় মায়ে’র হাতে জ্বলে ওঠা প্রদীপ দেখি আরো বেশী দীপ্তিময়, আজ যে তোমায় ঘিরে উৎসব, তোমার উৎসব ঘিরে আজ কোনো অষ্টাদশীর হাতের মাঝে তিরতির করে দমকা হাওয়ায় কেঁপে ওঠা মোমবাতি বা প্রদীপের শিখা,- “জ্বালাও আলো, আপন আলো সাজাও আলোয় ধরিত্রীরে”।

এ রাত আজ আলোর বন্যায় সেজে উৎসব পালন করবে, অমাবস্যার রাত না হলে বোধকরি এ আলোক সজ্জায় এত উদ্দীপনা থাকতো না, হতো না প্রাণ প্রতিষ্ঠা।

সেই কোন যুগ হতে তোমার নিকষকালো আঁধারের বুক চিরে জোনাকির ওড়াওড়ি ঘিরে, আর আঁধারে জ্বলে ওঠা আলোকে ঘিরে কত সাহিত্যের রচনা হোলো, কিন্তু কি অদ্ভুত দেখো সাহিত্য কিন্তু তোমার আঁধার ঘিরে রচনা ব্রাত্য, যেটুকু ও আছে তাতে আছে গা ছমছম করা কাহিনীর বিন্যাস, সাহিত্যের অঙ্গনে শুধু পূর্ণিমার রাতের আতিশয্য। শুধু উৎসবের ক্ষন কে ঘিরে তোমার ভাগ্য বরাত পায়।

রাতের আকাশে তারার ঝলমল কে তুমি যে কতখানি বর্ণময় করে তোলো সেইদিন বোঝা যায় যেই দিন সেই গাঢ় আঁধারে আকাশের সকল তারারা অক্ষর হয়ে ফুটে ওঠে। নিঃসীম অন্ধকারে এক ভাসমান দৃষ্টি নিয়ে দূরের পানে চেয়ে দেখি। জোনাকি রাত, দূরের নক্ষত্র, আলোকদ্যুতি— এ সব তোমার অন্ধকার রাতের সৌন্দর্য গাঢ় ভালোবাসা। আবারও তাই লিখি “অমাবস্যা” তোমার বুক চিরে এ রাত হয় আরও জৌলুসপূর্ণ তার বুকের আলোর অনাবিল ঝর্ণা, যে আঁধারে আকাশের তারাগুলোকে লক্ষ মাণিক বলে জ্বলতে দেখা যায় আর প্রকট হয় সংখ্যার নিরীখে, তাই বুঝি গোনা যায়, তুমি আজ উৎসবের অমাবস্যার রাত, তোমার গর্ব করা সাজে। আজ তোমার আঁধারে মাণিক জ্বালার উৎসব। যার নাম দীপাবলি।।

আজ সবাইকে আমার দীপাবলীর প্রণাম, শুভেচ্ছা আর ভালোবাসা জানালাম।

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।