কর্ণফুলির গল্প বলায় স্বপঞ্জয় চৌধুরী (পর্ব – ৭)

পরজীবী

 

সাত

থানায় বন্দি আসমা আর সেলিনা। সেলিনার কান্নায় থানা ভারি হয়ে উঠে। আমাকে যেতে দেন। আমার বাচ্চা দুইটা না জানি কেমন আছে। জুলমত একটা খারাপ লোক ও তাদের ক্ষতি করবো। আমাকে যেতে দেন। সেলিনার কান্নায় জেলখানার বাতাস যেন ভারি হয়ে উঠে। আসমাও অনেক আহাজারি করে। স্যার উনারে ছাইড়া দেন। আমারে আটকাইয়া রাহেন, যা খুশি করেন। বেচারি বড় অসহায়। কিন্তু তাদের কথা কেউ শুনেনা। তারা তাদের আহাজারি করতে থাকে। রাত গভীর হয়। থানার বাতিগুলো নিভে যায়। জেলঘরের কোনা দিয়ে ছোট্ট একটা জানালা আছে একবিঘাত খানেক। ওই ছিদ্র দিয়ে আলো আসে। একি চাঁদের আলো! একি স্বপ্ন নাকি সম্ভাবনা। দুঃখ নাকি যাতনার।

 

বাহিরে প্রচুর বৃষ্টি হচ্ছে। চারিদিকে গভীর রাতের মতো অন্ধকার। সাদিবের হাতে রক্ত। তার হাতে জুলমতের অন্ডকোষ। জুলমত মরমর অবস্থায় লুটিয়ে আছে মাটিতে। সাদিব বোনকে কাঁধে নিয়ে বৃষ্টিতে ভিজে ভিজে এক অজানা অচেনা গলির দিকে এগুচ্ছে। কোথায় যাবে? কার কাছে যাবে সে জানে না। তার মায়ের সাথে আর কোনো দিনও দেখা হবে কিনা তাও জানে না। শুধু জানে। বোনকে বাঁচাতে হবে। একেতো প্রথম মাসিক তার উপর ওর কচি যোনিপথে জুলমতের লালসারেখা, মাংসাশী সাপের ছোবল। সে ছোবলের দাগ কিভাবে মুছতে হবে সে জানে না। এ পৃথিবীকে আজ তার অনেক ছোট মনে হয়। পাষÐ বাবা, এক অবরুদ্ধ পরিবার সবই তার চেনা। সে অনেক ক্লান্ত । হাঁটতে হাঁটতে সে রেলস্টেশনের কাছে এসে পৌছে, একটা ট্রেন বিকট শব্দে পু পু শব্দ করে তাদের অতিক্রম করে চলে যায়। আকাশে বিদ্যুৎ চমকাচ্ছি। রেলস্টেশনের পাশে একটি ঝুপড়ি ঘরের পাশে সে লুটিয়ে পড়ে। তার পাশে শুয়ে আছে তার বোন।

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।