কিছু কিছু সময়ে মনে হয় কতটা পথ কত তাড়াতাড়ি পেরিয়ে এলাম, কত তাড়াতাড়ি ছোটবেলা, শৈশব, কৈশোর, যৌবন সবকিছুই আগল ভেঙে চলে যাচ্ছে বড় দ্রুত।ছোটবেলার রবীন্দ্রজয়ন্তীর প্রেরণা ছিলো দিদা, মা, মাসি আর ইশকুলের দিদিমণিরা। ছোট ছোট নাটক, তার সাথে কিছু সময়ে বড় দাদা দিদিদের তৈরী নৃত্যনাট্য; অবলীলায় সারাদিন চলতো রিহার্সাল আর সেই ফাইনাল দিনের অদ্ভুত এক চিন্তাক্লিষ্ট মুখ আর তারপরেই স্টেজে উঠে ফাইনাল শট দেবার ইচ্ছে। রবীন্দ্রজয়ন্তী নিয়ে স্মৃতিচারণা কিছু জায়গায় শুরু হলে কোনোভাবেই শেষ হবার নয়। রবীন্দ্রনাথ তো জীবনের সাথে ওতঃপ্রোতভাবেই জড়িয়ে গিয়েছেন, জড়িয়ে আছেন সত্তায়, জড়িয়ে আছেন সুখ, দুঃখ, সৃষ্টি, রোষ, অনাসৃষ্টি, কোন কাজটায় তিনি নেই? স্কুলের পোডিয়ামের উপরে সবাই মিলেই হৈচৈ করতে করতে নাটকের ডায়লগ ভুলে যাওয়া অথবা পাড়ার রবীন্দ্রজয়ন্তীতে রাজা, প্রজা, মন্ত্রী, সান্ত্রী সক্কলে একসাথে গ্রিনরুমে সংলাপ মুখস্থ করা, আবার ভুলে যাওয়া, এগুলো কি কম আনন্দের।
একটা দল থাকতো একদম ছোটদের রবীন্দ্রজয়ন্তী পালনের জন্য, তার ঠিক ওপরে, আমরা, যারা তখন হয়তো ক্লাস সিক্স বা সেভেনে পড়ি, আর আরেক দল ছিলো যারা বড়রা, মায়েরা, মায়েদের বন্ধুরা, মাসিরা যারা হারমোনিয়াম, তবলা, এস্রাজ, তানপুরা নিয়ে সুন্দর করে একটা গানের শো করতো, রবীন্দ্রসংগীতের মূর্ছনায় আকাশ বাতাস হালকা হয়ে মনটা কিরকম অচিনপুরে হারিয়ে যেতে থাকতো। কি ছিলোনা তাতে? তাঁর লেখা ঘুড়ির রংও রামধনু হয়ে চোখে ধরা দিতো, ‘আলোকের এই ঝর্ণাধারায় ধুইয়ে দাও’, অথবা ‘প্রাণ ভরিয়ে তৃষা হরিয়ে’ অপটু কণ্ঠে গাইতে গাইতেই গানের মিসের পাশে দাঁড়িয়ে ভাবতাম, প্রত্যেকটা কথার মানে ভাবতাম, প্রত্যেকতা সুর সংগোপনে, চোখ বন্ধ করে অনুভব করতাম। ছুটির দিনে বাবার রেডিওতে, কিংবা আমাদের পুরোনো ট্রান্সিস্টরে যখন ‘শ্রাবণের ধারার মতো…’ ভেসে আসতো, দেখতাম মা শুধু চোখ বন্ধ করে গানটি অনুভব করছে আর প্রশান্তির জল ছলছল করছে তার চোখে। রবীন্দ্রজয়ন্তী নিয়ে কত যে স্মৃতি, কত যে স্মৃতিমেদুরতা তার কোনো পরিসীমা নেই।
আজ সাহিত্য হইচই-এর সম্পাদকীয় লিখতে গিয়ে আলাদা করে তাঁর দিন বলে কোনো একটা তারিখ মনে করবো সেভাবে ভাবিনি, কারণ তিনি তো মনে আর মননে রয়েছেন। তাঁর জীবনদর্শন,কথা, কাহিনী, সর্বরসেই তো আমরা সকলেই জানা-অজানাতে সম্পৃক্ত।
এই সপ্তাহেও আমাদের লেকের ডালি সাজিয়ে এনেছি ধারাবাহিক উপন্যাস, ভূতের গল্প, চিল্কিগড় বেড়ানোর অভিজ্ঞতা, কবিতা এবং পুঁচকেদের আঁকা নিয়ে। সকলে ভালো থাকুন, রবীন্দ্রজয়ন্তী যদি অনলাইন মোডেও হয়, তাহলেও তো তাঁকে আমরা সবরকমভাবেই আমাদের চেতনার বিরাট একটি অংশ করে রেখে দিয়েছি। সেটাই বা কম কি!