বাংলা বর্ষবরণ
চৈত্রের ঝরাপাতায় পুরাতনের রেশ রেখে,
নববর্ষ আসে দ্বারে বৈশাখের সাজে সেজে।
অঞ্জলিভরা ফুলে, ধূপের সৌরভেতে,
বর্ষকে করতে আলিঙ্গন সবাই বর্ষবরণে উঠি মেতে।
পাটভাঙা ধুতি, শাড়ি, নিঙোনো উঠোনে আলপনা,
রিনিঝিনি কাঁকনের সুরে বধূর হাতে বরণ ডালা।
মঙ্গলকলস কাঁখে মঙ্গলগীত গাওয়া,
নববর্ষ যেন আনে শান্তি সুখের নীড়ের ছাওয়া।
হোক না প্রখর তাপ, বর্ষার ধারাপাত,
শীতের পারদ নামুক, যেন হারায় না ভালোবাসার উত্তাপ।
এটুকু মোদের চাওয়া, প্রকৃতি হয়ো না কখনো বিমুখ,
কায়িক পরিশ্রমেই যেন আমরা আনি ঘরের সর্বসুখ।
আমাদের স্বেদে সিঁচে ফলাবো সোনার ফসল,
আমাদের ভালোবাসায় ভরাবো তোমার স্নেহের আঁচল।
বটগাছ সম থেকো, দিয়ো সুশীতল ছায়া,
সন্তানেরে রেখো দুধে-ভাতে এটুকুই সবার চাওয়া।
হাজার রীতির মাঝে মূল কথা এটুকুই,
“বিহু”, “পোঙ্গল”, “নববর্ষ”, নামের তফাৎ শুধু ভাষাতেই।
পুরাতন ভীতে গড়া, নতুনের চলার পথ,
পুরাতনের নিশান লয়ে ছোটে নতুনের বিজয় রথ।
বিগত দিনের স্মৃতি, অভিজ্ঞতার ভাণ্ডার,
প্রতি পদক্ষেপে বাড়ায় উৎসাহ সবাকার।
বিশ্বায়নের স্রোতে হারিয়েছি দেশ-কাল,
ডিঙিয়েছি সীমানা, সংস্কৃতির বেড়াজাল।
ভুলতে পারিনি তবু বাংলা মায়ের টান,
সমধুর বাংলা ভাষা, এ বাংলার কলতান।
কর্মজীবনের নিয়মে ঠাসা ইংরেজি দিনমান,
তবু হৃদয়ে গাঁথা আছে বাংলা বর্ষবরণের স্থান।
পাশ্চাত্যের মোড়কে মোড়া জৌলুসের উচ্ছাসে,
“হ্যাপি নিউ ইয়ারে”র জোয়ার, উদ্দামতায় ভাসে।
বাংলা বর্ষবরণ সে তো ভূমির টান,
হৃদে বর্ষকে বরণ করি, নিয়ে প্রকৃতি মায়ের দান।।