মার্গে অনন্য সম্মান সুতপা ব্যানার্জী(রায়) (সেরার সেরা)

অনন্য সৃষ্টি সাহিত্য পরিবার
সাপ্তাহিক প্রতিযোগিতা পর্ব – ৮৪
বিষয় – চড়ক পুজা
শশ্মান কালী
বাঁধনা গ্রাম যেন পরবেরই প্রতীক্ষা করে থাকে। একেবারে শান্ত জীবনটা যখন ধান মাড়াইয়ের মতো ঝুরো হয়ে যায় তখন ওলাইচণ্ডিতলায় নাম গান কি মনসা তলায় যাত্রা পালা ভোরের বাতাস আনে। গ্রামের বিধিনিষেধের বেড়া ডিঙিয়ে টেঁপি,বাপন,চরণ,বিন্দারা সব একাকার হয়ে যায়। বাপ জ্যাঠার নজর এড়িয়ে বিড়ি ফোঁকে। টেঁপিরা সাঁওতাল নাচের বরাত পায়। পুরোনো লাল পাড়ের শাড়ি মাড়ে টানটান হয়। ওদের রূপের ঝলকে মুগ্ধ হয় বাপনরা। বিন্দার এবার খুব উৎসাহ গাজন নিয়ে, চরণ এবার সন্ন্যাসী ভক্ত হয়েছে। সকলের ঢাক বাদ্যির মধ্যে দিয়ে কালভৈরবকে নিয়ে আসবে মন্দিরের জন্য। বিন্দা বোতল বোতল লেবু জল তৈরী করে রেখেছে। ফলাহারি শরীরে যদি লু লেগে যায় চরণের। কান ফাটানো ঢাকের আওয়াজের মধ্যে ওরা এগিয়ে চলেছে। ইদানিং আবার হিন্দী গানের সুর বাজে,তাতেই পা মেলায় গেরুয়া ধুতি পরা ভক্তের দল। মাথায় রক্ত জবার মুকুট। চরণ ঠাকুরের অর্ঘ্য দেবে বলে বিন্দা আজ নির্জলা উপোস দিয়েছে। ছোট থেকে দেখে এসেছে বাবা গাজন সন্ন্যাসী হলে মাও পুজো তক উপোস,পরে ফল-জল খেয়ে থেকেছে। বেলের পাটা দিয়ে মা গৌরীকে সাজানো হয়েছে।উনিও পুজিতা হন। চড়ক রাতে চড়ক কাঠে বাণ ফুঁড়ে ঝুলবে চরণ। ওর ব্যাথার কথা ভাবতেই বিন্দার চোখ জলে ভরে যায়। যদিও কালা ফুল জোগাড় করে রেখেছে,বেটে লাগিয়ে দেবে বলে,বিশেষ করে জিভে।
কালভৈরবকে মাথায় নিয়ে অমন বেতালা হাঁটছিল কেন চরণ। টেঁপি বলল-“উহার ভর হঁইছে।” বিন্দা শুনেছে এইসময় শিবের কাছে যা চাওয়া হয় সেই মনোষ্কামনা পূর্ণ হয়। ভিড়ের মধ্যেই একবার কানে কানে চরণকে জিজ্ঞেস করেছিল-“তু কী চাইলি?” “তুখে”-উত্তরে এই ছোট শব্দটুকু বলে বিন্দাকে আরো ভাসিয়ে দিল চরণ। চড়ক মেলা থেকে টিপ,প্লাস্টিকের পুঁতির মালা কিনে খুব সাজল বিন্দা। সবকিছু মিটে যেতে চরণের বন্ধু বাপনকে বিন্দা বলল-“শিব বাবা ট কেমন জাগ্রত। চরণদের কেমনধারা ভর হুঁয়েছিল।” বাপন আকাশ থেকে পড়ল-“ভর ,উ সব কটায় মন্দিরের পেছনের মাঠে বসে মদ খাঁইংছিল,তার লেগেই তো ঠিক করে চলতে লারছিল।” বিন্দা চরণের সামনে এসে বলল-“ঐ দিন তু যে কুথাটা বললি সেটা সত্যি?” চরণ-“কী কুথা?” “বাবার ঠেঁয়ে তুই আমায় খুঁজেছিস?”-বিন্দা সোজা তাকিয়ে বলল। “যেদি বলেছি তো মদটার ঘোরে,জ্ঞানত লয়। তু তো জানিস আমার টেঁপির পানে লজর।” বিন্দার মনে হল টিপ,মালা সব খুলে এলোকেশী হয়ে ঐ শশ্মানে মা কালী হয়ে নেত্য করে আর পায়ের তলায় চরণকে শিব করে শুইয়ে দেয়। সত্যি করে কিছুই পারে না করতে নিজের ভাগ্যকে দোষারোপ করা ছাড়া।