সাপ্তাহিক ধারাবাহিক উপন্যাসে সোনালি (পর্ব – ৩০)

রেকারিং ডেসিমাল

মেয়েদের একটু বদনাম আছে। তারা নাকি অন্য মেয়েদের সহ্য করতে পারে না।
রাগ, হিংসে সব তাদেরই নাকি বেশি।
হবেও বা।
তবু ত দেখি পুরুষদের মাথা থেকেই নানান ভয়াবহ নরঘাতী পরিস্থিতি সৃষ্টির প্ল্যান অহরহ বেরিয়ে আসছে।
নতুন বউ মন দিয়ে গল্প শোনে বলেই হয়ত এই সব টপকে গল্প বলেন শ্বাশুড়ি।
হেসে কুটিপাটি হয়ে বলেন, বিয়ের তত্ত্বের গল্প।
ফোরেনের মার্কা দেয়া সব দাড়ি কামানোর ক্রিম, টুথ পেস্টের টিউব পেয়ে এ বাড়ির লোকজন কেমন থতমত খেয়েছিল।
কয়লার ছাই বা দাঁতন দিয়ে দাঁতমাজা মানুষ দাড়ি কামানোর ক্রিম দিয়েই চেষ্টা করেছিল দাঁত মাজতে। এ বাড়ির ছেলেরা ফিটকিরি দিয়ে জল ঘসে দাড়ি কেটে অভ্যস্ত ছিল। টিউব থেকে দাড়ি কামানোর সাবান বেরিয়ে আসবে এ কেউ আশা করেনি।
পুরোনো ছবির এলবাম ও বেরিয়ে আসে।
দিদা গুটিগুটি আসেন এ ঘরে।
ছবি দেখে হাসেন।
এই যে কেশবতী রাজকন্যা, ভাইব্যো না তোমারই একা চুলের বাহার।
এই বড় বউয়ের চুল অহন টিকটিকির লেজ হইলে কি হইবো, বিয়ার সময় তার চুলে জাহাজ বান্ধন যাইতো।
সত্যি, গোলগাল খুকির সাদাকালো ছবিতে বিশাল মোটা বিনুনি।
দিদা নিজের ঘরে চলে গেলে, আরেক প্রস্থ হাসেন বড় বউ।
চুল কি করে থাকবে বল দেখি ? বাবা ফ্রেঞ্চ শ্যাম্পু আনিয়ে দিতেন আমাদের জন্যে বরাবর বাপের বাড়িতে। সেখানে কলেজ যেতাম যখন আগে পিছে জজ সাহেবের আর্দালিরা যেত। একজন ছাতা খুলে একজন বইখাতার ব্যাগ নিয়ে।
এখানে বিয়ের তত্ত্বের সাবান টাবান শেষ হয়ে যেতে দেখলাম সবাই সোডা দিয়ে মাথা ধোয়। আর ভিজে মাথায় সব সময় ঘোমটা দিয়ে থাকা। সব চুল উঠেই গেল।
তাই বলে ত আর বাবাকে বলা যেত না এসব। কষ্ট পাবেন ত।
সব সময় বলতাম খুব ভালো আছি।
কিন্তু এখানে যে কি কাণ্ড হত।
আমার শ্বাশুড়ি খুব আগলে রাখতেন আমায়। আমিও কখনো অবাধ্য হতাম না। এইটা বুঝেছিলাম এই লোকটির সাহায্য না পেলে আমি মারা পড়ে যাব।
আবার এক চোট হাসির পর সেই গল্প আসত।
আরে আমি ত একটা তালায় চাবিও দিতে জানতাম না। ইস। সেকি অবস্থা।
নতুন বউ, মা হতে চলেছে। তার বরের খুব সখ তার মেয়ে হবে।
অন্যমনস্ক হয়ে যায় শুনতে শুনতে।
মনে ভাসে প্রিয় গানের লাইন।
তুম ইতনা যো মুসকুরা রহে হো
কেয়া গম হ্য জিসকো ছুপা রহে হো…
তার চোখে ভাসে একটা আঠারো বছর কলেজের মেয়ে। বিত্তবান পরিবারের। টাইপ করতে শিখে আহ্লাদিত। এক দিনের মধ্যে ছিন্নমূল। অপরিচিত নিম্নবিত্ত পরিবারের মধ্যে প্রতিকূল দিন রাত মুখ বুজে লড়াই, শুধু টিকে থাকার। বেঁচে থাকার। নিজের পরিচয় তৈরি করার। নিজের সম্মান রক্ষার।
কোন অস্ত্রশস্ত্র ছাড়াই অসম লড়াই।
মেয়েদের লড়াইয়ের ইতিহাস কোন ইস্কুলে পড়ানো হয় কই।
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।