সাপ্তাহিক ধারাবাহিক উপন্যাসে সোনালি (পর্ব – ৭৮)

পুপুর ডায়েরি

যুগসাগ্নিক সম্পাদক, সাহিত্যিক অগ্রজ প্রদীপ গুপ্তদা ইদানীং সেই ত সেই সময়টার কথা বললেন, যখন পরবর্তী কালে বলিউড কাঁপানো সঙ্গীত পরিচালক, শিল্পী বাপ্পি লাহিড়ী তাঁর বাবা মায়ের সঙ্গে টালিগঞ্জ নামক গণ্ডগ্রামে বাস করতেন।
বাপ্পি লাহিড়ীর বাবা ছিলেন অসাধারণ সুরকার গীতিকার গায়ক, শ্রী অপরেশ লাহিড়ী।
ছন্দ আর সুরে, যে নতুন ধরনের গান বেঁধেছিলেন তিনি, তাকে আজকের দিন র‍্যাপ ইত্যাদি বলে আদর করে।
সেইসব লং প্লেয়িং রেকর্ড, তাঁর নিজের হাতে লিখে সই করা, রয়েছে এখনও আমাদের বাড়িতে।
রয়েছে, তাঁর অসামান্য গায়িকা স্ত্রী শ্রীমতী বাঁশরি লাহিড়ীর দেওয়া নানান নান্দনিক উপহার। তিনি বড়ো স্নেহের দিদি ছিলেন, সেই সময়ের উদীয়মান তবলচি এবং সঙ্গীতের জগতের পরিচিত নাম শ্রী বলাই ভট্টাচার্য, মানে আমার বাবা মশাইয়ের।
বাবা তখন নেহাৎ গোঁফ গজানো হিরো। পণ্ডিত জ্ঞানপ্রকাশ ঘোষের বাড়িতে গিয়ে তালিম নেওয়া প্রিয় শিষ্য।
সঙ্গত করতে করতে শিল্পী দম্পত্তির সাথে আলাপ হয়েছিলো।
তারপর, সেই সম্পর্ক একেবারে পারিবারিক হয়ে দাঁড়ায়।
সেই সময়ের কলকাতা, নতুন শিল্পীর সৃষ্টির কদর করেনি।
“ জলের জাহাজ জল কেটে যায় সোঁ ও ও
কলের বাঁশি বাজিয়ে চলে ভোঁ ও ও.. ”
অথবা..

“ নিঝুম রাতে হাট ফেরতা ফিরছে দুখির পো।
ভুতের ভয়ে গা ছমছম।
বুক দুরদুর করে হরদম..
যত ভয় বাড়ে, সে গলা ছাড়ে,
…ভুত আমার পুত
পেতনি আমার ঝি
রাম-লক্ষণ সাথে আছে করবে আমার কী?
সেই বীরের কাহিনী বলো কে না জানে
সেই রামের পাঁচালি বলো কে না জানে? ”
এখনকার ভুলভুলাইয়া সিনেমার গানের চাইতে কম আকর্ষণীয় ছিলো না।
কিন্তু সে সময় তার আদর হয়নি।

তাই খুব গরীব নতুন বসতি, গ্রাহামস ল্যান্ড, টালিগঞ্জ গল্ফ ক্লাবের কাছে, পরে যেখানে ট্রামডিপো হল তার পাশে ভাড়া নিয়ে থাকতে এসেছিলেন লাহিড়ী পরিবার।

ছোটো বাপ্পি যে আমার বাবার কোলে বসে তবলা শিখতো, আর তাঁর বাবা মায়ের দেয়া অজস্র ভালোবাসার উপহার আমাদের বাড়িতে, আমি কখনো মুখ ফস্কেও বলতে ভয় পাই। পাছে নেম ড্রপিং এর গালি লাগে।
বাবা বলতেন, বাপি এক আশ্চর্য প্রতিভাবান শিশু ছিলেন। অতি শৈশবে বাবার কাছ থেকে কঠিন সব টুকরা পরন তুলে বাজিয়ে ফেলতেন সহজেই।
তাঁর একবার কঠিন জ্বর হওয়াতে স্বয়ং লতা মঙ্গেশকরজী নাকি এসেছিলেন দেখা করতে৷
বাবারা তখনও উত্তর কলকাতার বাসিন্দা।
রোজ রেওয়াজ সেরে লাস্ট ট্রাম ধরে ফিরে যেতেন বাড়ি।
অনেক সময়েই বাঁশরিদির হাতের রান্না খেয়ে যেতে হত।
আর প্রতি দিনই অপরেশদা, সাথে বেরিয়ে হই হই করে ট্রাম থামিয়ে তুলে দিয়ে যেতেন।
বম্বে যাবার আগে দু:খ করে নাকি বলে গেছিলেন, অন্য রকম গান করতে চাইলাম কেউ শুনতে চাইলো না।
বলাই তুমি দেখো, বাপিকে দিয়ে এমন গান করাবো, রাস্তার রিকশাওয়ালাও সারা দিন গাইবে।
সেটা ডোভার লেন-এ গাইবে না কেউ। কিন্তু তাতে অর্থের পাহাড় তৈরী হবে।

হয়েছিল যে পরবর্তীতে, সে এখন আমরা সবাই জানি।

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *