T3 – স্বাধীনতা দিবস সংখ্যায় সংঘমিত্রা ভট্টাচার্য

স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে অগ্নিকন্যাদের কিছু কথা:

স্বাধীনতা সংগ্রামে বাংলা তথা ভারতবর্ষে যে আন্দোলনের ঝড় উঠেছিল তাতে যে বিপ্লবীরা শহীদ হয়েছেন সেখানে অনেক নারীরাও ছিলেন যাঁদের স্বপ্ন ইচ্ছে সব কিছুই তাঁরা পরাধীন ভারতের শৃঙ্খল মোচনের জন্য বলিদান করেছেন। সেখানে সাধারণ ঘরের গৃহবধূ থেকে বিদূষী রমণী আছেন যাঁদের সবার কথা হয়তো আমরা জানতে পারিনা। সেইসব বীরাঙ্গনা কিংবা অগ্নিকন্যা যাঁদের মা দূর্গা কিংবা মা চণ্ডীর সাথে তুলনা করা যেতেই পারে তাতে অত্যুক্তি কিছু হবে না কারণ তাঁদের দেবী রূপের কাছে অশুভ শক্তি হার মেনেছিল। তারই ফল স্বরূপ এসেছে আমাদের ভারতের স্বাধীনতা। এখানে তর্ক বিতর্ক থাকতেই পারে। তবে তাঁদের আত্মবলিদান যে আজকের নারী সমাজের কাছে একটা দৃষ্টান্ত। সে কথা বলাই যায়। আজকের এই স্বাধীনতা দিবসে তাঁদের কে নিয়েই শ্রদ্ধাঞ্জলি। হয়তো ধুপ দীপ কিংবা চন্দনের কোনো ব্যবস্থা নেই। নাই থাক। তবু অন্তরের ভক্তিই আসল।
যার কথা প্রথমেই বলবো তিনি বিপ্লবী অমরেন্দ্র চ্যাটার্জীর পিসিমা ননীবালাদেবী। যিনি ষোলো বছর বয়েসে বিধবা হয়েছিলেন। কুলিন ব্রাহ্মণ পরিবারের বিধবা হয়েও শাঁখা সিঁদুর পরেছিলেন। না কোনো মঞ্চে নয় স্বাধীনতার রঙ্গমঞ্চে। সময়টা ছিল ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষ এবং বিংশ শতাব্দীর প্রারম্ভ যখন বিধবাদের একাদশী পালনই ছিল একমাত্র সঙ্গী। সেখানে তিনি সমাজ কে তোয়াক্কা করেননি একমাত্র দেশ মাতৃকার জন্য।
এবার যার কথা না বললেই নয় তিনি প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার। ব্রিটিশ সরকার যার মাথার দাম রেখেছিলো পাঁচশ টাকা তৎকালীন সময়ে। ছোটবেলা থেকেই প্রীতিলতা মেধাবী ছাত্রী ছিলেন। বেথুন কলেজ থেকে ডিস্টিংশন নিয়ে বি۔এ পাস করে 1932এ নন্দনকানন গার্লস স্কুলে শিক্ষকতার কাজে যোগ দেন। সেই বছরই মাস্টারদা সূর্য সেনের সাথে সশস্ত্র আন্দোলনে যোগ দিয়েছিলেন। কিন্তু ব্রিটিশের কাছে আত্মসমর্পণ না করেই মাত্র একুশ বছর বয়েসে পটাসিয়াম সায়ানাইড খেয়ে আত্মহননের পথ বেছে নিয়েছেন এই বঙ্গললনা।
পঞ্জাবের মেয়ে সুচেতা কৃপালনী ছাব্বিশ বছর বয়সে বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করেন। সেই সময় থেকেই দেশের হয়ে কাজ করতে শুরু করেন। গান্দীজীর নির্দেশে সত্যাগ্রহ আন্দোলনে যোগ দিয়ে গ্রেফতার হন।
এছাড়ারাও চামেলী গুপ্ত কলকাতার নারী সত্যাগ্রহ সমিতির সদস্যা ছিলেন। যিনি গর্ভবতী অবস্থায় গ্রেফতার হন জেলের মধ্যে পুত্র সন্তানের জন্ম দিলেও যখন ব্রিটিশ সরকার তাঁকে মুক্তিদেয় তখন চামেলী ও তাঁর সন্তান কাউকেই বাঁচানো যায়নি।
মেদিনীপুরের কুসুম বাগদি দশ মাসের দুধের সন্তান কে ঘরে রেখে জেলে এসে ছিলেন আইন অমান্য করে।
আর মাতঙ্গিনী হাজরা যাঁকে ব্রিটিশের গুলি এফোঁড় ওফোঁড় করেছিল ঠিকই কিন্তু তাঁকে মুছে ফেলতে পারেনি বাঙালি তথা ভারতবাসীর হৃদয় থেকে।
এঁদের আত্মবলিদানের কাহিনী স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে চিরস্বরণীয় হয়ে রয়ে যাবে।

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *