মার্গে অনন্য সম্মান সুচন্দ্রা বসু (সর্বোত্তম)

অনন্য সৃষ্টি সাহিত্য পরিবার

সাপ্তাহিক প্রতিযোগিতা পর্ব – ১০৪
বিষয় – গণেশ চতুর্থী

ম্যানেজমেন্ট গুরু

গণেশ পুজোয় মেতেছে সারা দেশ।বাড়িতে সমৃদ্ধি আনতে হিন্দু পঞ্জিকা অনুযায়ী ভাদ্রমাসের শুক্লা
চতুর্থী তিথিতে গণেশের পুজো করা হয়।হিন্দু দেবতা গণেশের বাৎসরিক পূজা উৎসব যা,গণেশ
চতুর্থী। সাধারণত এই দিনটি ২০শে আগস্ট থেকে ১৫ সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি কোন একদিন পড়ে।
দশদিন ব্যাপি গণেশোৎসবের সমাপ্তি হয় অনন্ত
চতুর্দশীর দিন।গজানন গণেশ হিন্দুদের বুদ্ধি সমৃদ্ধি ও সৌভাগ্যের সর্বোচ্চ দেবতা।হিন্দুরা বিশ্বাস করেন এইদিন গণেশ তার ভক্তদের
মনোবাসনা পূর্ণ করতে মর্ত্যে আসেন।গণেশের
এই জন্মোৎসব বিনায়ক চতুর্থী বা বিনায়ক চবিথি
কোঙ্কণি ভাষায় চবথ এবং নেপালি ভাষায় চথা নামে পরিচিত।
গণেশ পূজা ভারতের সর্বত্র অনুষ্ঠিত হলেও এই
উৎসব মহারাষ্ট্র মধ্যপ্রদেশ গোয়া গুজরাট কর্ণাটক তেলেঙ্গানা তামিলনাড়ু ও অন্ধ্রপ্রদেশ
রাজ্যে বিশেষ উৎসাহ উদ্দীপনার সঙ্গে পালিত হয়।ভারতের বাইরে নেপালেও এই উৎসব পালিত
হয়।
কথিত আছে শিব, উমার দেহজাত পুত্রের পরিচয় দিয়ে যখন গণপতি বা গণেশের নামকরণ করেন তখন দেবতাবৃন্দ তাকে আশীর্বাদ করে বলেন,যেকোন পুজো বা শুভকাজের শুরুতেই করতে হবে গণেশ পুজো।অন্যথায় শুভকাজের ফললাভ হবে না।গণেশ পুজো করলে যেকোনও কাজে সিদ্ধিলাভ হবে।তাই উনি সিদ্ধিদাতা বিনায়ক।

আমিও গণেশ পুজো উপলক্ষ্যে বন্ধুর বাড়ি গেছিলাম সেদিন। গল্প করতে করতে আমার
বন্ধু ব্যবসায়ী বলল,আমাদের ম্যানেজমেন্ট গুরু
এই গণেশ।ব্যবসাতেও গণেশ সমৃদ্ধি আনে।তাই
জন্য গণেশ বিজনেস মডেল।
আমি জানতে চাই কেন তাকে মডেল হিসাবে
ব্যবহার করা হয়। সে বলল উত্তর লুকিয়ে আছে
গণেশের চেহারাতেই।
তুমি এর উত্তর জানো?
বলব আমি।আগে তোমার ভাবনাটা শুনি।
আমি তো দেখি ইয়া বড় ভুঁড়ি নিয়ে ছোট্ট এক
ইঁদুরের ওপর চেপে বসে বাবাজী দুনিয়া চষে বেড়ায়।আর
ওই ইঁদুর যত্রতত্র সব নথি কেটে ছাড়খাড় করে।একে আবার বিশ্ববাসী ফুল দূর্বাধানে পুজো করে।
কোন যুক্ত আছে এর?
আছে আছে নিশ্চয়ই তার মানে আছে।
এই বিশালাকার ভুঁড়ির মানে আছে?ভুঁড়ি স্ফীত। উদরে সব কিছু আত্মসাৎ করা স্বভাব বলেই আমার মনে হয়।এই স্বভাবের যিনি তাকে পুজো করার মানে হয়?ভাবনা হয় ভুঁড়িটা এতো বড় বাগালো কি করে?.সব কিছু আত্মসাৎ করে?
ভালো বলেছো।প্রথমেই তোমার ভুঁড়িতে নজর?না হয় একটু বেশি খায়।হজম ক্ষমতারও তারিফ করতে হবে। এর পুরোটাই প্রতীকী।
হ্যাঁ বিশ্বটাকেই হজম করে ফেলার ক্ষমতা রাখে।
তা যা বলেছো।অনেক হজম করার ক্ষমতা বলতে,গোপনীয়তা রক্ষার ক্ষমতা আছে তার।তোমার মনে হয় না, যে সব তথ্য নিজের কাছেই রাখতে পারে,গোপনীয়তাও রক্ষা করতে পারে সেই স্টাটেজিস্ট।ব্যবসা করতে গেলে গোপনীয়তা প্রয়োজন যা তার মধ্যে দেখা যায়।অতএব তিনি ব্যবসার আদর্শ স্বরূপ।
খেয়াল করে দেখ মাথাটাও অন্য দেবতাদের থেকে
বড়।
ভেবে দেখি নি। অন্যান্য দেবতার তুলনায় মাথাটা বড় কেন?
মনে হয় কান দুটো বড় বলে, ছোট মাথায় বড় কান ফিট করত না।একদম ভুল কথা।
চিন্তাভাবনা করতে হয় বেশি তাই মাথাটা বড়।বড়
মাথায় ভাবনাগুলো রাখতে হয় সংকীর্ণতার উর্দ্ধে।
এছাড়াও বিশ্বের সবচেয়ে বুদ্ধিমান প্রাণী হাতি।হাতি দুঃখ আনন্দ আত্মসচেতনতা সমবেদনার
প্রতীক।জঙ্গলে হাতি কোন প্রাণীর সঙ্গেই লড়াই করে না।এখানেও লক্ষ্য স্থির রাখা ও অযথা লড়াই এড়িয়ে চলাই একজন বিজনেস লিডারের
গুণ হওয়া উচিত।
বললাম গনেশের সাথে হাতিকে গুলিয়ে ফেললে
হবে না।গনেশ হাতি নয়।
আঃ, গণেশ হাতি হবে কেন। ও তো প্রতীকী। যার মাথাটা শুধু হাতির। যে মাথার ওজন মানুষের মাথার থেকে বেশি।চিন্তা ভাবনাগুলো সংকীর্ণতার
উর্দ্ধে থাকাই বিজনেস লিডারের গুণ হওয়া উচিত।
তবে কান দুটো বড় হওয়ার কারণ কি?
কারণ কিছুই না।শুধু মন দিয়ে কথা শুনতে হবে।
তারপর যা কিছু অপ্রয়োজনীয় সব ঝেড়ে ফেলে দিতে হবে।
ও… অনেক কথা মন দিয়ে শুনে কানে রাখতে হবে।
আর বিরক্তিকর কথাগুলো এলে কান দিয়ে ঝাপটা মেরে তা সহজেই তাড়ানো যাবে বলেই
কান বড়।
হ্যাঁ সাফল্য পেতে গেলে শুনতে হবে অনেক বেশি।এবং কথা বলতে হবে কম।বড় কান
শোনার ক্ষমতা রাখে বেশি।আর হাতির মতোই গণেশের জিভ থাকে অনেক ভেতরে।
একজন ম্যানেজমেন্ট গুরুর এইরকম সংবেদনশীল ও মনযোগী শ্রোতা হওয়াই আদর্শ গুণ।
গনেশ বড় লেখক দেব সমাজের। এটা ভুললে চলবে না।
তাই জন্যই তো ম্যানেজমেন্ট গুরুর আসন তার।
তাই তো সে যেমন বিদ্যেধরী তেমন বুদ্ধিধারী।
দেখেছো চোখদুটো কত ছোট।
মানে খুব মন দিয়ে ভবিষ্যৎ দেখার চেষ্টা করে। আমাদের মতো চোখ সামনে নয়।হাতির মতোই দুপাশে।পেরিফেরাল ভিউ বেশি ফলে কম আলোয় অনেক পরিষ্কার দেখতে পায়।
বেশ বেশ অনেক গভীর ব্যাপার স্থূল চোখে ধরা পড়ে না। তবে তার অন্তর্বতী চোখদুটি
ব্যবসার কঠিন সময় সবদিক থেকে সিদ্ধান্ত নেওয়ার দূরদৃষ্টি রাখে।দূরদৃষ্টি থাকাই একজন স্ট্রাটেজিস্টের আদর্শ গুণ।
এবার নাক বনাম শুঁড়। শুঁড় মানে মুখ বেকিয়ে থাকা সমাজের কল্যাণ থেকে। দরকার মতো
তার চলার পথের বাধা শুঁড় দিয়ে তুলে ছুঁড়ে ফেলা।
তুমি দেখি নিজেই সোজা কথা বুঝতে বা বলতেই
পারো না।তোমার কি বাঁকা পথে চলতে আর বাঁকা
কথা বলতেই ভালো লাগে?
অনেক ট্রাডিশন নাককে সম্মান ও ইগোর প্রতীক
হিসেবে ধরা হয়। নাক যেমন গভীর ইনটিউশন
বোঝায় তেমনই লম্বা নাক বোঝায় দীর্ঘ সময়ের
দায়বদ্ধতা। আশেপাশের পরিস্থিতি কিভাবে বদলে
যাচ্ছে। কিভাবে পরিবর্তিত পরিস্থিতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রাখতে হবে তা নাকের সাহায্যেই আঁচ করা যায়।
আর তার দাঁত কি সূচিত করে? ডান দিকের দাঁত
রয়েছে কিন্তু বাঁদিকের দাঁত ভাঙা।তাই গণেশের
আর এক নাম গণপতি।বলতে পারো ভাঙা দাঁত
কিসের প্রতীক?
শোন তবে,গণেশের দুটো দাঁত ঠিক ও ভুলের প্রতীক। আবেগ ও বাস্তবের প্রতীক।দুই দাঁত আমাদের শেখায় সবকিছুর উর্দ্ধে উঠে জীবনে ঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়া।একজন ভালো লিডারের
প্রতিবাদ করা প্রয়োজন।তাই ডান দিকের দাঁত
রয়েছে।যেখানে নিষ্প্রয়োজন সেখানে অযথা নিজের বক্তব্য না বলে এড়িয়ে যাওয়া প্রয়োজন ভাঙা দাঁত সেটাই বোঝায়।
অন্তর্মুখী ও বহির্মুখী ব্যক্তিত্বের সাম্যের প্রতীক গণেশ।সময় অনুযায়ী নীরব ও সরবতাই সাফল্যের চাবিকাঠি।
আমি আর কথা না বলে,বসে শুধু তার কথা মন
দিয়ে শুনলাম।বন্ধু বলল….
গণেশের মাথা হাতির হলেও গলা মানুষের মতো।
সব প্রাণীর মধ্যে মানুষ একমাত্র কথা বলতে পারে।ভাল স্ট্রাটেজিস্ট হতে গেলে ভাল কথা বলা
অত্যন্ত জরুরী।কথার মাধ্যমে পরিস্থিতি বদলে
ফেলা যায়।
আবার গণেশের চার হাত চার ধরনের প্রতীক।
এক হাতে কুড়ুল মানে, পুরনো যা কিছু ভালমন্দ
কেটে ফেলে বর্তমানে বাঁচো।এক হাতে পদ্ম মানে,
মনকে সদা জাগ্রত রাখো।অপর হাত বিশ্ববাসীকে
আশীর্বাদ করছে।অন্য হাতে সুতো মানে,বস্তবাদ
ছেড়ে মোক্ষের দিকে এগিয়ে চলা।গণেশের এই
চার হাত ধর্ম অর্থ কাম ও মোক্ষের প্রতীক। বিজনেস স্ট্রাটিজির জন্য এই চার বিষয়কে সমান
গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন।এই চারের সংমিশ্রণে আসে সাফল্য।
এমনকি গণেশ কীভাবে বসে বা দাঁড়িয়ে আছেন
তারও শিক্ষা রয়েছে।সাধারণত গণেশ বসেই থাকেন দেখা যায়। একটি পায়ের উপর আরেক পা তুলে।অর্থাৎ তুমি যতই উঁচুতে উঠে যাও মূল
ভিতটা ভুলে যেওনা। একটি পা যেন মাটিতে থাকে।
বন্ধু বলল গণেশের বাহন ইঁদুর। গণেশ যুক্তির প্রতীক আর ইঁদুর সংশয়ের প্রতীক। গণেশ চঞ্চল
ইঁদুরের ওপর বসে থাকে।যার অর্থ হল গণেশ নিজের সংশয় নিয়ন্ত্রণে রাখে নিজের যুক্তি দিয়ে।
যে কোন কাজে সাফল্য পেতে সংশয় যেমন সবচেয়ে বড় বাধা তেমনই যুক্তি দিয়ে সেই সংশয়
দূর করেই জীবনে আসে সাফল্য।
আমি বললাম এই যুক্তি তোমার ঠিক না।ভুঁড়ো পেট নিয়ে চলাফেরা করতে পারে না,তাই সে ইঁদুরে চড়ে ঘুরে বেড়ায় সব সময়।
যদি যুক্তির কথাই বল তবে আমি বলব ইঁদুর হল
আমাদের ইচ্ছের প্রতীক। এই ইচ্ছের কোন শেষ
নেই। দেখনা ইঁদুর সব সময় কিছু না কিছু দাঁতে
কেটেই চলে। তার কাটার ইচ্ছার কোন শেষ নেই।
সেই ইচ্ছেকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। নইলে ধংস
অনিবার্য। এক কথায় ব্যবসায় ইগো থাকলে চলবে
না।সব ইগো ঝেড়ে ফেলতে হবে।আমিত্বকে বর্জন
করতে হবে। তবেই ব্যবসাকে ধরে রাখা যাবে।তাই
গুরুর এতো কদর এখন।

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *