রাই সিরিজের কবিতায় সুব্রত ভট্টাচার্য (ঋক তান)ন

রাই এখন নীলের ঘরে
রাই তো পাখি হতে চেয়েছিল
আমি বুকটা আকাশ করে তাকে দিয়েছিলাম,
সে আনন্দে ওড়াওড়ি করেছিল।
বেশ কিছুদিন ইচ্ছে মতো ওড়াওড়ি করে বলল,
আমার একটি বাসা চাই
আমি বুকের বাঁদিকে বাসা
বানিয়ে দিয়েছিলাম।
সে আনন্দে আত্মহারা হয়ে
সেখানে ক্লান্তি কাটাতে বিশ্রাম নিত।
তারপর একদিন বললো
আমার একটা গাছ চাই।
মাটিতে পা পুঁতে ঠায় দাঁড়িয়ে রইলাম।
সে আনন্দে এ ডাল সে ডাল ঘুরে ঘুরে ,
একদিন শোনালো অরণ্য বিষাদ।
তারপর সে একটা নদী চাইলো
আমি আমার শরীরের সমস্ত রক্ত দিয়ে স্রোত তৈরী করলাম,
সে মাছেদের মতো নদীতে সাঁতার কাটতে কাটতে দিনান্তের রূপালী আভা ছড়িয়ে,
সে আবার আব্দার করে বললো
আমার পাহাড় চাই
আমি পাহাড়ের চূড়ায় দু হাত
মেলে আকাশ ছুঁতে চাই।
আমি তার পাহাড়ে ওঠার জন্য সিড়ি বানালাম
আমার সমগ্র অস্থি মজ্জার সব টুকু দিয়ে।
আকাশ ছুঁতে দেখতে দেখতে
তার স্বপ্নের প্রজাপতি গুলো
বিবর্ণ হতে থাকে।
একদিন টানতে টানতে
একটা পাহাড়ি ঝর্ণার কাছে নিয়ে এসে বলল,
তারও এমন একটা পাহাড় ছিল।
সেও কখনো পাহাড়ের জন্য নদী হোতো।
আমি ঝর্ণার দিকে তাকিয়ে মেয়েটিকে বললাম,
নদী আর নারীর অবিরাম বয়ে যাওয়ায় বাজে তরঙ্গায়িত হৃদয়ের বীণা।
সে বাচ্চা মেয়ের মতো
কিছু ফুটে থাকা ফুলের দিকে দেখিয়ে
জানতে চাইল,
কি নাম ?
বললাম বুনোফুল।
দুটি তরুণ তরুণীকে দেখিয়ে বলল,
কি নাম ?
বললাম প্রেম।
ও জিজ্ঞাসা করলো
প্রেম কি?
চাঁদের ওই স্নিগ্ধ আলো লাগে ভালো যার।
ফুলের সুবাস মিষ্টি বাতাস
স্বপ্ন ডানা বলাকার।
কষ্ট দুখে আমিও ভাসি
বারে বারে শ্রাবন ধারায়।
আবার হাসি মিষ্টি সুখে দক্ষিণা ওই ফাগুন হাওয়ায়।
এটাই প্রেম।
ও মুখ নিচু স্বরে বললো এটাই প্রেম।
তারপর একটা ছাউনির দিকে দেখিয়ে
জিজ্ঞেস করলো,
এটা কি ?
বললাম ঘর।
সে জানতে চাইলো
কি রং এর প্রলেপ দেয়া হয়েছে
বললাম নীল
সে খুব খুশি হয়ে বলল
এই ঘরটিকে আপন মিত্র করে
নীল দেওয়ালে হেলান দিয়ে
বসবে।
আমি তার মুখের দিকে তাকিয়ে রইলাম।
এবার সে আমাকে বলল,
তুমি সকাল হতে জানো ?
আমি বুকের বাঁদিকে তাকে সূর্য দেখালাম ।
ও হাসতে হাসতে চলে গেল
অসীম বিশ্বাস নিয়ে মনে মনে
নীল রঙের ঘরে।
রাই,তুমি এখন অন্য কারো গল্প, অন্য কারো স্মৃতি
অন্য কোন আঁধার ঘরের বাতি
তুমি নেই,
তোমার ছবিই এখন আমার রাত জাগার সাথী।