কবিতায় স্বর্ণযুগে সুব্রত ভট্টাচার্য (ঋক তান) (গুচ্ছ কবিতা)

১| আমার শব্দগুলো
আমার কবিতার শব্দরা তালসারি দ্বীপে ছুটে আসে ,
সাগর পাড়ের রোদ পিঠটান নারীর চোখে খেলা করে ।
নীল চোখে একদৃষ্টে তাকিয়ে থাকে
নীল পাহাড়ের সাথে কথা বলে,
আমার শব্দরা উপসি হাঁড়িতে ঢেউ তুলে
যুবকের শরীরে আগুন জ্বলানো উত্তপ্ত বুকে
মৈথুন বাতাসে কামনার ঠোঁটে
নতুন কিছু চাইতে মিশে যায় তারার দলে ।
চুমুর নির্যাসের শেষ রস টেনে
আমার শব্দরা বাউলের সুরে মিশে গিয়ে
একতারাতে বেজে ওঠে রাঙামাটির পথের ধুলায়।
আমার সেই ছোটো ছোটো শব্দরা , গোপনে আগুন জ্বlলে ঝিনুকের ভিতরে ।
ফাগুন রাঙা উষ্ণ ছোঁয়ায় ,
উন্মত্ত নেশায় ,উচ্ছাসের বানভেসে —
আমার অবুজ লাজুক শব্দগুলো একদিন মেঘ হবে
অভিমানে বৃষ্টি হয়ে ঝরে পড়বে তোমার চিবুকে ,
মায়াবী আলোয় আলোকিত করে ,রুপালি ডানা মেলে
একদিন ঠিক ছুঁয়ে আসবে তোমার ছায়াপথ ধরে কালো তিলে ।।
২| আলোর সন্ধানে
আমি তোমাকে খুঁজছি
হাজার চিন্তার মাঝে তোমাকে
এখনো খুঁজছি—-
রাতের বেলায় কুয়াশা ভেজা নীল আলোয় ঠিকরে পড়া
পৃথিবীর কোণে —
শীতের রাতে কুঁড়িতে চুঁইয়ে পড়া শিশিরের শব্দে যে ফুল গান গায় !
ছলাৎ ছলাৎ নৌকার দাঁড়ের
ভাটিয়ালি সুরে পালের হাওয়ার উদাসী শুন্যতা
ভেসে ওঠে উপোসী মনে।
আমি খুঁজছি তোমায়
সমস্ত স্বপ্ন চূর্ণ বিচূর্ণ করে নতুন কিছু ভাবনা নিয়ে
ভেঙে যাওয়া ভাববার তীরে —
ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে এখনো তোমাকে খুঁজছি ,
আমায় দেখে
রাত হেসেছিলো তারার চোখে।
আমি তোমাকে খুঁজেছি
গলে যাওয়া তুষার ঝড়ে স্বপ্নের ওভাল গুলোর মাঝে
নির্ভেজাল প্রতিশ্রুত শব্দ গুলো নিয়ে উত্তাপের মাঝে
গলিত আগ্নেয়গিরির অগ্নুৎপাতের গলিত লাভার উত্তাপে—
সিংহল থেকে আন্তর্টিকার পথে ।
আমি এখনো খুঁজছি তোমাকে
আশা নিরাশার পোড়া ঘাসে
বৃষ্টি ভেজা নীল আলোয় ভেজা কাঠে টস টস ঝরে পড়া পিয়ানোর কোমল সুরে।
চুম্বন ভরা হলুদ শস্যের ক্ষেতে
প্রজাপতির হাই ফ্লাইট থেকে
সব অপশন সরিয়ে রেখে।
আমাতে ঘিরে থাকা সব কিছুতে আমি—-
আমার সবটুকু নিঃশেষ করে
বিষাদি হৃদয়ে দহনে অচেতন হৃদপিণ্ডে —
হয়তো বদলে গেছে সব প্রতিশ্রুতি আধুনিক সভ্যতায়
সব আলো নিভে যাওয়া শুধু
তোমাতে
আমি তোমাকে এখনো খুঁজছি ।
৩| একটা মিথ্যে অনুভূতি
এখনো একটা অনন্ত
প্রতীক্ষায়!
কিসের টানে,কোন ঠিকানায়
পৌঁছে দিতে
নিঃসঙ্গ ক্লান্ত পথিক এর মতো —–
কালিন্দীর উজানে একলা
কোমল সুরে তানপুরার শব্দ
ভেসে উঠে প্রেমিকার কাছে।
অনন্ত দিগন্ত জুড়ে বসুধা এখন ঘুমায়
রাতের জোনাকি সাঁঝতারার সাথে মিটি মিটি আলোয় আলোকিত করে বলে
এখন বসন্ত বিদায় নিয়েছে।
তবুও আলেয়ার সাথে ভাসছে প্রশ্ন , সংশয় ভাসছে—-
কোনো কৃতজ্ঞতায় কেহ নত হচ্ছে না,
শুধু স্বপ্নে একটুকরো মিথ্যে অনুভূতির—–
বিষণ্নতার রঙে ছবি আঁকা
ক্রোধে, হতাশায় পাহাড় জমছে।।
৪| নীরব ভূমিকা
তোমার বুকের কার্নিশে
চুমু দিয়ে যায় ভালবাসার রোদ্দুর,
অথচ তুমি কী নির্দ্বিধায়
অবহেলার পর্দা টেনে রাখো
অপ্রেমের মেঘমালা ছোঁবেনা বলে।
আঙ্গুল ছোঁয়া দিনগুলি
যায় যদি শেষ হয়ে,
হৃদয় ছোঁয়ার দিনগুলি তবু
থেকে যাবে নীরবে মনের গহীনে,
যে দুরারোগ্য ব্যাধি
ডেকে এনেছিলাম দুজনে
গভীর গোপনে।
৫| তুমি সেই মেয়ে
তুমি সেই অলৌকিক মেয়ে,
যার গভীর কালো চোখ
দিঘিতে ফোটে জলপদ্ম,
হাসিতে জন্ম নেয় পবিত্র জোনাক।
যার প্রেমে মন্ত্র মুগ্ধ আমি
চেয়ে থাকি তার
অপলক চোখের তারায়,
ইচ্ছে হয় পুনর্বার জন্মাই
শুধু তোমাকে পেতে।
যাকে দেখলে ছুঁতে চায়না মন
সম্পর্কটা ভেঙ্গে যাবে বলে।
ইচ্ছে হয় কেবল গল্পে ,
কবিতা আর গান শুনিয়েই
মুখোমুখি কাটিয়ে দি ই
তোমার সঙ্গে একটি জীবন।।