সাপ্তাহিক ধারাবাহিক উপন্যাসে সোনালি (পর্ব – ৪৩)

রেকারিং ডেসিমাল

গোলগাল মানুষটি। সাদা কালোর আঁজি কাটা চুলের ছোট্ট খোঁপা। হাতে অবাঙালিদের মত কাঁচের চুড়িও আছে সোনার গয়নার সঙ্গে। দামি শাড়ির আঁচল নেহাৎ অবহেলায় কোমরে গোঁজা। এক ঝলকে খুঁটিনাটি দেখে নেবার অভ্যাস করিয়ে দেয়া হয় ডাক্তারি পড়ার শুরু শুরুতে।
তাই শ্বশুর বাড়ি যাবার জন্যে প্রস্তুত হওয়া নতুন বউ মনের খাতায় লিখলো, এই মানুষটি অর্থকে তাচ্ছিল্যের সাথে ব্যবহার করতে পছন্দ করেন।
বৌকে নিয়ে যেতে আসা পরিচিত ছেলেমানুষ খুড়শাশুড়ি পরিচয় করিয়ে দিলেন,  ছেলের বড় মাসি। হিমালয়ের কাছাকাছি থাকেন। বিয়ের টানে বোনের কাছে আসা।
হাসি হাসি মুখে মাথা নাড়েন মানুষটি।
কিন্তু মুখে কথাটি নেই। স্পিকটি নট।
হেসে গড়িয়ে পড়েন কাকি।
অনেক দিন পর দেশে আসা কিনা?  আপ কান্ট্রিতে ত আর বাংলা বলার আরাম নেই। এত কথা বলেছে দিদি,  হা হা,  গলা একেবারে বন্ধ কাল রাত থেকে।
তাই এখন একেবারে চুপ।
নতুন বউ প্রণাম করতে ফ্যাসফ্যাসে গলায়, থাক থাক,  বলে জড়িয়ে ধরলেন মাসি শ্বাশুড়ি।
মুচকি হেসে, চিকচিক করে জ্বলে ওঠা চোখে, প্রায় ফিসফিস করে বললেন ,  দুধো বহো পুতো ফলো।
কাকি হেসে গড়িয়ে পড়ে আবার।
নতুন বউ চুপটি করে ভাবে,  মানেটা কারো থেকে জেনে নিতে হবে। আশীর্বাদের মধ্যে কিছু একটা দুষ্টুমির গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে।
বরণ ইত্যাদি মিটে যাবার পর,  বর নিয়ে এল টুকটুকে ফর্সা দীর্ঘদেহী একটি মানুষের সামনে।
এই দ্যাখো দাদুভাই,  সোনালি।
প্রণাম করে উঠতেই, হ্যান্ডশেক করতে হাত বাড়িয়ে দিলেন গ্যালিস দেয়া ট্রাউজার পরে থাকা সাহেবি মানুষ।
হেসে হাত ধরতেই, হাত ঝাঁকিয়ে বললেন, বাহ, সাচ আ প্লেজার টু মিট ইউ সোনালি ডার্লিং।
মুগ্ধ হয়ে গেল নাতবউ।
সকলের কথাবার্তায় বোঝা গেল ,  বড়মাসি দাদুভাইকে নিয়ে কলকাতায় এসেছেন। দাদুভাই তাঁর কাছেই থাকেন।
মাসির পরিবারের অন্যরা আসতে পারেননি।
তারপর থেকে এদিক ওদিক ঘোরার ফাঁকে নতুন বউ মাঝে মাঝে ঢুঁ মারছিল ইনি যে ঘরে রয়েছেন সেখানে। ভারি কৌতুহল হচ্ছিল মানুষটিকে ঘিরে।
অন্য রকম গল্পের গন্ধ ভেসে আসছিল স্মিত মুখের মিতভাষী এই ভদ্রলোকের চারপাশের হাওয়ায়।
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।