প্রিয় সপ্তর্ষি, মাঝে মাঝে কেন যে আকাশ গাঙে চোখ আটকে যায় – আশৈশব কাদের খুঁজে খুঁজে রাত পেরিয়ে যায়,তুমি কি জানো তার উত্তর? গভীর রাতে অনিদ্রার বিছানা ছেড়ে ওঠে নয়ন ভরে দেখেছি সে অপূর্ব রূপ,সেই রূপের বিভায় আমি বার বার চমকে উঠেছি।এই মর্ত্যের কুয়াশার রাত,সুদূর বিস্তৃত গভীর সমুদ্র পেরিয়ে তোমরা পৌঁছিয়েছো অমৃত নন্দনে।জানো সপ্তর্ষি, পৃথিবী এখনো বড়ো সুন্দর, পাখির কিচিরমিচির গানে ভোর হয়,সোনালী রঙ ছড়িয়ে পূব দিগন্তে ধীর পায়ে সূর্য এগিয়ে আসে আকাশের নরম শরীরে।আর এই সময় দিঘি জলে ফুটন্ত পদ্মরা আনন্দে সাঁতার কাটে।মাঠভরা সবুজ ধানক্ষেত, বিল জলে সারস-সারসী,কোথাও কোথাও সাদা বক,ডাহুকের ডাকে পৃথিবীটি সংগীত ময় হয়ে ওঠে।সূর্য যখন অস্তরাগের সুর বাজায়,ইচ্ছা করে দিগন্তের ওপারে ছুটে যায়,তাই অশ্বের খুরে মন ছুটে চলে রহস্যের অবগুণ্ঠন উন্মোচনে।
আমাদের এই সুন্দর পৃথিবীটার এখন অসুখ।গৃহবন্দী মানুষের নাভিশ্বাস ওঠে – এই অবস্থায় কত প্রিয়মুখ চলে গেলো আমার বাবার মতো।আচ্ছা, পৃথিবী ছেড়ে যারা চলে যায় তারা তো আর ফিরে না কখনো; তারা কি সকলেই তোমাদের মতো সুন্দর নীল আকাশের গায়ে উজ্জ্বল নক্ষত্র হয়ে ফুটে ওঠে? যদি জেনে থাকো,তাহলে খুঁজে দিও আমার বাবাকে আর তিন বছরের ছোট্ট রোহনের মা-বাবাকে। রোহন যে বড়ো একা,প্রতি রাতে ওর মাকে মনে পড়ে।আমায় জিজ্ঞেস করে,”মা,কবে ফিরে আয়বে?”আমি উত্তর দিতে পারি না,তার চোখে জল দেখে কখন যে আমারও চোখ ভিজে যায়; কান্না আটকিয়ে বলি,”ঐ তারাদের দেশে গেছে তোমার মা আর বাবা।”