‘অ্যানাইহিলিশন পলিটিকাল লাইন’ বা হত্যালীলার রাজনীতিকরণের অভিযোগে ভারতবর্ষের অন্যতম শ্রেষ্ঠ যে সাম্যবাদী তাত্ত্বিক ব্যক্তিত্বকে বাঙালি ‘হিংসার রঘুপতি’ নামে অভিহিত ক’রলো, আজ সকলের সশ্রদ্ধ স্মরণে তিনিই। আপাতদৃষ্টিতে তাঁর প্রাপ্তি ব’লতে কেবল তৎকালীন রাজ্যশাসক দলের চিরতরে পতন ঘটানো ব্যতীত অপর কিছুই নেই। সুগভীর অভিমানও সেখানেই যে জাতির সম্পূর্ণ একটি প্রজন্মকে তিনি সুখস্বপ্নের দ্বারা বিপথে চালনা ক’রলেন।
নিরন্তর স্বেচ্ছাচারের বিরূদ্ধে এই অবান্তর আগ্রাসনেই বাঙালি তাদের জীবনযাত্রার অন্তিম গগনচুম্বী ঊর্মিমালা প্রত্যক্ষ ক’রেছিলো। প্রয়োজনীয় জনসংযোগ ও কাঙ্ক্ষিত শস্ত্রবল ব্যতীত রাষ্ট্রবিরোধের বাতুলতা, উপরন্তু সমাজের কষ্টকল্পিত চরিত্র। মহাচৈনিক সমর্থনের অনতিপরেই অকস্মাৎ যখন জ্ঞাতার্থে বক্তব্য আসে যে ভারতবর্ষীয় রাজনৈতিক ভ্রান্তির দায় তাদের কর্ণধারের নয়, তখন নেতৃত্বমাত্রেই রিক্তহস্ত। স্বদেশে তিনি দুর্বৃত্ত, বিদেশে তিনি নির্বোধ। আহত মনুষ্যত্ব।
অতএব গ্রামাঞ্চলে অজস্র ভূমিহীন কৃষক, শহরাঞ্চলে ছাত্রাবস্থার ঔদ্ধত্য এসবের ভিত্তিভূমি সেই একাকী দল হ’য়ে ওঠবার জীবনদর্শন এক লহমায় সম্পূর্ণ মিথ্যা হ’য়ে গেলো। শ্রেণীশত্রুর রক্তরঞ্জিত হস্তের সমান্তরাল তাঁর ছিলো সাশ্রুনয়নও। ঘোরতর সাম্যবাদী এই ব্যক্তিত্বের হৃদয়ে কালীমাতার হিংস্রতা এবং রাবীন্দ্রিক স্নিগ্ধতার এক আশ্চর্য সহাবস্থান লক্ষ্যণীয়। অথচ অগ্নিসম সেই আটটি দলিলে মানুষ কেবল প্রথমটিরই আভাস প্রাপ্ত হ’লো, দ্বিতীয়টির কণামাত্র নয়।
আত্মপ্রবঞ্চকগণ যখন নির্লজ্জের ন্যায় নির্বাচনে পরাজিত হ’য়ে মানুষকে পরিত্যাগে উদ্যত, তখন স্মৃতিতে উদ্ভাসিত হ’য়ে ওঠেন তিনি, যাঁর মতে নির্বাচনে ফলাফল নয়, জনসমর্থনই শেষ কথা। আশার অর্থই যে সংশোধনবাদী বিচ্যুতি। রঘুপতির পরিচয়ে হিংসার এই পৃথিবীতে হিংসার সেই পরিচিত রঘুপতির সম্ভবতঃ বড়োই প্রয়োজন ছিলো। জনগণতান্ত্রিক বিপ্লবের ভারতবর্ষীয় বাতাবরণকে আন্তর্জাতিক অস্বীকৃতি দানেও স্বদেশ ও স্বজাতিকে জনৈক বিশ্বাস ক’রেছিলেন…
বস্তুতঃ “বাঙালি একটি আত্মঘাতী জাতি। “, আত্মত্যাগী নয়।