সাপ্তাহিক ধারাবাহিক উপন্যাসে সোনালি (পর্ব – ৬৮)

পুপুর ডায়েরি
চৈত্র দিনের ঝরা পাতার পথে
দিনগুলি মোর কোথায় গেলো
বেলা শেষের শেষ আলোকের রথে..
বাবামশাইদের পছন্দসই এইসব গান কথা, গল্পের ঝুলি খুলতেই মিঠু শুনিয়ে দিলো,
“এপারে থাকব আমি, তুমি রইবে ওপারে.. ”
সে গান শুনতে শুনতে ইস্কুলের ওপরের ক্লাসে চলে এসেছিলাম।
অজয় দাস যখন এ গান তৈরী করছেন, ভাই সুখেন দাসের ফিলিম জীবন মরন -এর জন্যে তখন পুপু ক্লাস টেন।
এত দিন পরে বললে, আশা করি, “নেম ড্রপিং ” দোষ লাগবে না, যে শ্রী সুখেন দাস পুপুর বাবার ইস্কুলের বন্ধু ছিলেন। এই দুই ভাইয়ের সাথেই ভাব ছিলো বাবা মশাইয়ের। পুপু বাবার ছায়াসঙ্গী। ছোটো বেলায় বাবার সাথে গিয়ে দেখেছে এনাদের সাথে বাবার আড্ডা।
কত খাতির করে বাবাকে “গুরু” বলে গল্প করতেন এঁরা।
পুপু নি:শব্দে বাবার গায়ের সাথে লেপ্টে বসে থাকত।
এখন, ফাল্গন চৈত্র দিনের উল্টো পালটা হাওয়া দিচ্ছে চারদিকে ফের।
সবেই বসন্ত পঞ্চমীর হলুদ সবুজ পলাশ আমের মুকুল পেরিয়ে, মহাশিবরাত্রির উদযাপন। শুকনো পাতারা ঝরে যাচ্ছে সর সর করে শিরশিরে হাওয়ায়।
চার প্রহর পুজো ত রাত জেগে একবারই করেছি। মা চলে যাবার দিন। মহা শ্বাসকে বুকে নিয়ে।
মা জননী বিবেচক মানুষ।
ভোরবেলা, সবার পারণ করা হবার পরে রওনা হয়েছিলেন।
এইসব সাত পাঁচ ভাবতে ভাবতে , গানের রেশ ধরে মনে পড়ছিল, শ্রী মান্না দে মহাশয়ের, এই কূলে আমি আর ওই কূলে তুমি….
আর, বঁধু কি কূলে বসেই মধু হেসে দেখবে শুধু সারা বেলা…
মাথা হাবিজাবি ফাজলামো করে।
বলে, হ্যাঁ হ্যাঁ, কুল কয় প্রকার ও কি কি?
নারকেলি কুল, টোপা কুল, সে তো আবার সরস্বতী পুজো না হতে খেতে নেই।
আর, মা কী ভালো কুলের আচার বানিয়ে হরলিক্সের কাঁচের বয়ামে ভরে রাখেন।
বা-মশাই, পুপুর থেকে থেকে গলা ব্যথা, জ্বর হয় বলে, বেশী খেতে বারন করেন। বলেন, টোপা কুলে হাড়ের জ্বর টেনে বার করে।
তাতে লোভা-রা নিরস্ত হয় না। কে না জানে দুপুরে একটা মোটা গল্পের বই হাতে থাকলে, সঙ্গে ইস্টিলের চামচ আর কুলের আচার লাগে।
পুপু জানে। পরে পরে বুতা বাবান ও জানে।
সেই কুলের আচারের শিশি কত কত লুকোনো জায়গা থেকে আবিষ্কার হয় যে।
আধখালি, কখনো পুরো ফাঁকা।
মা তেঁতুলের আচার ও করতেন।
পুরোমাত্রায় আপিস করেও একটা মানুষ কী যে না করতে পারে!!
রসগোল্লার পায়েস, পাটিসাপটা, কড়াইশুঁটির কচুরি, দুধপুলি, নারকেল ছাপার সন্দেশ। মায়ের কাঠের কতরকম ছাঁচই আছে সন্দেশ বানানোর। পুরো এক কৌটো। আবার লাউয়ের পায়েস ও।
ঘরে ছানা কেটে পুপুকে সামনে রসগোল্লা বানিয়েও খাইয়েছেন মা৷ গরম গরম ফুলকপির সিঙ্গারা।
এইসব বেশির ভাগই অ্যানুয়াল পরীক্ষার আগে। এক মাস ছুটি নিতেন ত মা।
পুপুকে পড়াতে আর পরীক্ষা দিতে ইস্কুলে নিয়ে যেতে।
পুপু ভালমানুষ হয়ে সারা বছর ঘাপটি মেরে থাকলে কী হবে, জেহাদ ঘোষণা করে রাখত বরাবর, পরীক্ষা দিতে মা নিয়ে না গেলে পরীক্ষা দেব না।
ইস্কুলে বন্ধুদের মায়েদের সঙ্গে খুব ভাব মায়ের।
তাঁরা ও জানতেন, বছরের শেষে সোনালির মায়ের সাথে গল্প হবে।
মায়ের অফিসে ছুটি ফুরিয়ে গিয়ে উইদাউট পে লিভ চলত।
এই শব্দবন্ধটা খুব চিনত পুপু।
মানে না বুঝলেও।