সাপ্তাহিক ধারাবাহিক উপন্যাসে সোনালি (পর্ব – ১২০)

রেকারিং ডেসিমাল

নভেম্বরের তেইশে অপারেশন হল। সেদিন ছেলের বিবাহবার্ষিকী। ছেলে আর বউমা বাড়িতে পুজো দিয়ে প্রসাদ নিয়েই এসেছিল হাসপাতালে সন্ধ্যেবেলায় । খুড়শ্বাশুড়ি আর লেডিজ ক্লাবের বন্ধুরা এসেছিলেন রোগিণীকে দেখতে।
তাঁদের সবাইকে নিচে নেমে প্রসাদ দিতে দিতে, কেমন থাকবেন রোগিণী সে প্রশ্ন উঠলো।
সারাদিন সবাইকে বুঝিয়ে থামিয়ে রাখা হয়েছে। পেশেন্টকে কিছু বলা যাবে না। তাই সব সময় হাসি মুখে বলা, এই তো বাড়ি যাবে দু চার দিন পরেই।
এই দিনান্তের মুহূর্তে, ছোট ডাক্তার আর সামলাতে পারল না।
হাসপাতালের পার্কিং প্লেসে হাউমাউ করে কেঁদেই ফেলল।

ভালো নেই, ভালো নেই গো আমাদের পেশেন্ট।

সবাই চুপ করে দাঁড়িয়ে গেল এই তিরিশ ছোঁয়া দম্পতিকে ঘিরে।
ঘটনার গুরুত্ব ভারি হয়ে ছড়িয়ে যাচ্ছিল চারপাশে, কুয়াশার মতো।
মন খারাপ শুরু হল সেই থেকেই।

ডাক্তার বলে ছিলেন তিন মাস।
অব্যর্থ অভিজ্ঞতার মাপকাঠি।

সাতাশে ফেব্রুয়ারী, ভারত সেবাশ্রমের প্রতিষ্ঠাতার স্বামিজীমহারাজের জন্মদিনে , পূর্ণিমার পুজো শেষ হতেই চলে গেছিলেন শ্বাশুড়ি মা।

রয়ে গেল সাধের সংসার।
হাতা খুন্তি চামচ রান্নাঘর।
রয়ে গেল মেয়ের বৌমার ম্যাক্সি তার ঘরের আলনায়।
রয়ে গেল নাতি নাতনিদের ছোটো বালিশ বিছানা কাঁথা তার আলমারিতে। তারা যে সপ্তাহান্তে এসে শুতো তার খাটে।
রয়ে গেল পুজোয় ঠাকুর দেখতে যাবার সখ। সবাইকে নিয়ে শপিং করার আল্লাদ।
কত রকম বাজার আর রান্না করার সৌখিনতা।
এর ওর পিছনে লাগার ফাজলামো।
কত কিছুই পড়ে রইল পিছনে।
একটা মানুষ, বেড়াতে যাবো ; বলে বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলো।

ফিরে গেলো পুত্রবধূর হাতে একখানা বাঁধানো ছবি হয়ে। তার শ্রাদ্ধানুষ্ঠানের আগের দিন।
আর কোথাও তাকে খুঁজে পাওয়া গেলো না।

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *