ক্যাফে কলামে সঙ্কর্ষণ

জল কোথায় গিয়ে দাঁড়ায়

অবচেতনে কখনও এমন এক প্রজন্মের আমরা সাক্ষী থেকেছি, যাঁরা স্বয়ং নিশ্চিত ক’রেছেন যে ছাত্রজীবনে তাঁদের উপস্থিতি গুরুত্বহীন। ‘সমাজের মেরুদণ্ড’ উপাধি ধারণে যতোখানি দৃঢ়তা প্রয়োজন, তার সঙ্গে পরিচয় করানোই জনৈক শিক্ষকের প্রাথমিক দায়িত্ব ও সাফল্য।

তথাকথিত উত্তরণের অংশীদারিত্বে ‘শিং ভেঙে বাছুরের পালে’ যোগদানের এই হাস্যকর ও অহৈতুকি প্রচেষ্টায় যে অনৈতিকতার সংক্রমণ তা কেবল নিম্নগামীই নয়, বরঞ্চ পারিপার্শ্বিক ক্রমান্বয়ে অসুস্থ ক’রে তুলতে এর অবদান যথেষ্ট এবং ভবিষ্যতের চরিত্রগঠনে এ অন্যতম অন্তরায়।

মেধাবী ছাত্রের যেমন অনবদ্য শিক্ষকতায় অক্ষম হওয়া সম্ভব, তেমন তালিকাভুক্ত ১৮৩ জনই যে আপনাপন ছাত্রগণের অযোগ্য, সে বিষয়ে অধম সন্দিহান। কিন্তু বিবেকবোধের সঙ্গে যিনি স্বয়ং অপরিচিত, বিশ্বব্যাপী বৈষয়িক অসভ্যতা তাঁর নখদর্পণে থাকলেও শিক্ষা শূন্য।

“কলিযুগে বাঁচতে গেলে টাকা লাগে। “, এই মন্ত্র আমরা কিন্তু এমন কারো নিকট শিক্ষা ক’রিনি, যাঁরা অসদুপায়ে শিক্ষকতার পথে এসেছেন। কিন্তু এই পথের প্রাত্যহিক সমস্যায় তাঁদের প্রতিক্রিয়া আমাদের কৈশোরে বৃহত্তর ভূমিকা গ্রহণ ক’রেছে। পরোক্ষে এ এক অভিভাবকত্বই।

মাধ্যমিক স্তরের অঙ্কে যেখানে প্রায় সকলের ২জন ক’রে শিক্ষক, সেখানে ভাষা, ভূগোল বা ইতিহাস পঠনকালীন আমরা অকাতরে নিদ্রা গেছি। বিত্তশালী অভিভাবকগণ বাড়িতে ঐ বিষয়গুলির জন্য অন্ততঃ ১জনকে রাখলেও, কখনও পঠনপাঠনের গতিপ্রকৃতি সম্পর্কে চিন্তিত হননি।

অঙ্ক অথবা বিজ্ঞান আমাদের ‘ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত’ ক’রবে এবং ঐ বিষয়ের শিক্ষকগণ হবেন ‘উন্নততর ভবিষ্যতের প্রহরী’। ২য় শ্রেণীর কেবল কৃতকার্য করা ব্যতীত অপর কোনো দায় নেই, বরঞ্চ বিষয়গুলিরও পাঠ্যতালিকায় অন্তর্ভুক্তি নিতান্ত অর্থহীন। শিক্ষকের কোনো মূল্যই নেই।

অতঃপর শিক্ষকের গুরুত্বের পরিমাপ তার বিষয়ে এবং বিষয়ের গুরুত্ব জীবনে তার অর্থকরী ভূমিকা। ইঙ্গমাধ্যম বা যে ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলি বস্তুতঃ শিক্ষাকে বিক্রয় করে, তারা যেহেতু অজস্র অর্থের বিনিময়েও সারস্বত সাধনার মূল্য বোঝেনা, তারা ‘পাখিটিকে মারিয়া ফেলে’।

ঐ ১৮৩জন নির্বোধ এটুকুও অনুধাবনে অক্ষম যে শিক্ষা যতোটুকুই হোকনা কেন, যোগ্যতা অনুযায়ী ভরণপোষণ ও শ্রমবন্টনও একটি আদর্শ রাজ্য সরকারেরই দায়িত্ব। তাঁরা এই চাকুরিটি অসদুপায়ে গ্রহণ ক’রে যে কতোগুলি সর্বনাশ ঘটালেন তা তাঁরা স্বয়ং অবগতই নন সম্ভবতঃ।

প্রথমতঃ তাঁদেরই মতো অসহায় কয়েকলক্ষ ছাত্রছাত্রীর সঙ্গে প্রতারণা ক’রলেন, দ্বিতীয়তঃ নিশ্চিত ক’রলেন অর্থ ব্যতীত প্রাপ্তি অসম্ভব। চাকুরি তো গেলোই উপরন্তু তাঁরা যে উপলব্ধি নিয়ে পরবর্তী প্রজন্মের চরিত্রগঠনে ব্রতী হ’য়েছিলেন, তাতে এই সরকার পুনরায় ক্ষমতাসীন হবে।

তখন ১৮৩ নয়, ১৮টি আসনের জন্য প্রতিযোগিতা হবে প্রায় ১৮,৩০,০০০জনের মধ্যে এবং শিক্ষকতায় চাকুরির সুরক্ষা হ’তে প্রাপ্য সমস্ত হ্রাস পাবে ক্রমান্বয়ে। ফলস্বরূপ বর্ধিত হবে স্বৈরাচারীর চাহিদা, অযোগ্যতর শিক্ষক এবং অশিক্ষিত ছাত্র। আদর্শ অবৈতনিক শিক্ষাও লুপ্ত হবে।

এই সুযোগে শিক্ষা বিক্রী বর্ধিত হবে ক্রমানুপাতে। সমস্ত অর্থ কুক্ষিগত ক’রবে ধনতান্ত্রিক শ্রেণী। ‘জাতে মাতাল, তালে ঠিক’ এই ইতরগণের ‘পেট ভর্তি অশিক্ষা’ সত্ত্বেও এরা উন্নততর শোষক তৈরী ক’রতে আমাদেরই অর্থে শিক্ষিত ক’রবে পরবর্তী প্রজন্মকে। সৎপথে উপার্জিত!

বর্তমান তো অবশ্যই, ভবিষ্যতেও আমাদের তথাকথিত উন্নতির পথ বন্ধ ক’রে দিচ্ছি আমরা। এই প্রজন্মের মেরুদণ্ডহীনতাই আজ এই পর্যায়ে উপনীত ক’রেছে আমাদের। স্মর্তব্য যে মূলকে বিস্মৃত জাতির ভবিষ্যৎ কখনও উজ্জ্বল হয়না। দুর্নীতিগ্রস্থরাও তো ছাত্র ছিলেন…

অর্থপিশাচ অমানুষ মাত্রেই মনুষ্যত্বকে ভয় করে। অতঃপর চরিত্রগঠন একটি অবৈতনিক দায়িত্ব।

ধন্যবাদ।

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।