• Uncategorized
  • 0

গল্পেসল্পে রিতা মিত্র

টিফিন

আজ দুদিন ধরে শ্রেয়া র খুব জ্বর।
শরীর খারাপ থাকলে মা ছাড়া আর কারুর কাছে থাকতে চায় না শ্রেয়া।
তাই রুমি দুদিনের ছুটি নিয়েছে। কিন্তু শনিবার কম্পানির মিটিং এ মুম্বাই থেকে ডেলিগেটস আসছে।
তাদের সামনে নতুন প্রোজেক্ট সাবমিট করতে হবে।
শ্রেয়া কোল থেকে নামছে না। রুমি কাজ করবে কী করে। চাইল্ড স্পেশালিস্ট কে ফোন করে অসুধ এনে খাইয়েছে। আপাতত জ্বর নেই, কিন্তু ঘ্যান ঘ্যান করেই যাচ্ছে।
সন্ধ্যা সাতটা বাজে। শ্রেয়া এখন ঘুমিয়েছে। দরজার বেল বাজছে। আলাপন এসে গেছে।
‘একটু চা করে দেবে’।
রুমির মাথায় আগুন জ্বলে উঠলো। ‘হ্যাঁ, দেবো না কেন? নিশ্চয়ই দেবো। আমি তো আর কাজ করি না। ঘরে বসে ভাতের থালা ভাঙি দুবেলা। মেয়ে মানুষ হয়ে জন্মেছি তো, সব দায়িত্ব আমার, রান্না করবো, বাচ্চা জন্ম দেবো, সংসারের সকল দিকে নজর দেবো,লক্ষী হয়ে ধনের ঘড়া ভরব’। আরো কত কী যে বলল রুমি, হয়তো রুমি র মনে নেই।
আলাপন চুপ করে ভেতরে চলে গেল। ও চিরকাল শান্ত প্রকৃতির ছেলে। বেশি কথা বলা পোশায় না।
রুমি আর আলাপন কল্যাণির JIS Enginiring College. এক সাথে পড়তো। এক সাথে পাশ করেছে। আলাপন অবশ্য পাশ করার আগেই ক্যাম্পাসিং এর মাধ্যমে চাকরি পেয়ে গেছিল। পাশের পর রুমি চাকরি পায়
চাকরি সুত্রে আলাপন নাগপুর চলে যায়, রুমি সল্ট লেক সেক্টর পাইভে একটা কম্পানিতে জয়েন করে।
যদিও ফোনে, ফেসবুকে তাদের যোগাযোগ ছিল। আসল কথা তারা বন্ধু ছিল। তাদের মধ্যে প্রেম ছিল কিনা তারাও বুঝতে পারেনি।
2016 সালে পুজোর ছুটিতে আলাপন বাড়ি আসে। এসে একদিন রুমি দের বাড়ি যায় ওর সাথে দেখা করতে। সেখানে জানতে পারে রুমির জন্য পাত্র দেখা চলছে। অদ্ভুত এক যন্ত্রনা পায় সে। মাথা নিচু করে বসে ছিল। খেয়াল করেনি কখন ওর চোখ থেকে জল গড়িয়ে গাল বেয়ে নামছে।
সে ভারি মন নিয়ে ফিরে আসে। বিকেলে রুমির বাবা- মা হটাৎ করেই আলাপন দের বাড়ি আসেন এবং তার বাবা মার সঙ্গে কিছু কথা বলতে চান, বলে আলাপন কে জানান।
আলাপন নিজের বিছানায় চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে। হটাৎ মাথার উপর কারুর হাতের স্পর্শ অনুভব করতেই চোখ খুলে মাকে দেখতে পায়। পরম স্নেহে মা তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন।
কিছুক্ষণ পর মা বললেন আচ্ছা রুমি মেয়েটাকে তোর কেমন লাগে? প্রশ্ন শুনে আলাপন উঠে বসে। মাথা নিচু, কোনো কথা নেই।
মা অনেকক্ষণ তার কাছেই বসে থাকেন। উঠে আসার সময় বলেন আগামী লক্ষীপূজোর পর তোদের দুজনের বিয়ের দিন পাকা করব, আমরা বাড়ির বড়রা বসে।
আলাপন ছুটে গিয়ে মাকে জড়িয়ে ধরে। এখনও সে চুপ।
বাথরুম থেকে বেরিয়ে আলাপন দেখে টেবিলে চা আর টোস্ট রয়েছে। একটু মৃদু হাসি খেলে যায় তার ঠোঁটে।
রুমি ওঠো , রুমি। চোখ খুলে রুমি দেখে চা নিয়ে আলাপন দাঁড়িয়ে আছে।
রুমি ল্যাপটপে কাজ করছিল। বিছানা বসে। কিন্তু নরম বিছানায় বসে কাজ হয়না, কোমর ধরে গেছিল তাই চেয়ারে বসে অনেক রাত অব্ধি কাজ করতে হয়েছে। কখন যে ও ঘুমিয়ে পড়েছে মনে নেই।
চলো আটটা বাজতে চলল। চা খেয়ে রেডি হয়ে নাও। আজ একটা Important presentation করার দিন। দেরি কোরো না।
রুমি জানে না সকাল সকাল রান্নার মাসি ফোন করে ছুটি নিয়েছে দু তিন দিন কাজে আসতে পারবে না। তার খুড়তুতো শ্বশুরের মেয়ের নাতি হবে। তাই সকলে আর, জি, কর হাসপাতালে রয়েছে।
রুমি ছুটছে, তৈরি হয়ে চিৎকার করে বলল’ ও মানা মাসি আমার জলখাবার টা টেবিলে দাও’। ডাইনিং টেবিলে এসে দেখছে। রান্না ঘরে আলাপন কী যেন করছে। কী হল? তুমি এখানে?’ মাসি আসেনি’।
ওফ সব জ্বালা একদিনেই শুরু হবার ছিল? রুমির মাথা রাগে ফুটতে আরম্ভ করলো।
‘নাও তুমি এটা খেয়ে, তাড়াতাড়ি বেরিয়ে পড়ো’।
তুমি কী খাবে?
আরে অনলাইনে কিছু একটা আনিয়ে নেব। নো প্রবলেম। এই যে জলের বোতল, আলাপন জলের বোতল টা রুমির ব্যাগে ভরে দিল।
রুমি মেয়ের কপালে চুমু খেয়ে, আলাপন কে বাই বলে অফিসের জন্য বেরিয়ে পড়ল।
অফিসে পৌছে ব্যাগ থেকে জলের বোতল বের করতে গিয়ে রুমি দেখতে পায় একটা টিফিন বক্স।
সেটা বের করে খুলতেই ওর চোখে জল। তার প্রিয় লুচি আর সাদা তেলে, হলুদ ছাড়া গোলমরিচ ছড়ানো আলু ভাজা।
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।