• Uncategorized
  • 0

গল্পেসল্পে রিতা মিত্র

কানপাশা

আজ সকালে থেকেই মেঘনার
মেজাজ খিচড়ে রয়েছে।
এত কাজ । তার উপর আজ রোববার বাজার। ফর্দ ধরে রান্না। আর ভালো লাগে না।
কিন্তু উপায় কী?
অনিমেষর কথা হল ‘ সে সারা সপ্তাহ জুড়ে সকালে কোনো মতে নাকে মুখ একটু গুজে কাজে বেরিয়ে যায়। রাতে ক্লান্ত শরীরে বাড়ি ফিরে কী খায় না খায় তা আর মনে ধরে না। তাই রোববার জমিয়ে রান্না আর আয়েস করে না খেলে হবে না। আরে বাঁচতে হবে তো। আর বাঁচাতে হলে খেতে হবে সোজা হিসেব।
তা কী করার। তারপর বামন বাড়ির বউ বলে কথা। বাড়িতে বিধবা শাশুড়ি। তার জন্য নিরামিষ রান্না আলাদা ভাবে করতে হয়।
আজ বিকেলে আবার সোসাইটির মিটিং আছে বাড়িতে। তার আয়োজন। ওফ্, আজ মেঘনা পাগল হয়ে যাবে।
থেকে থেকে অনিমেষের চায়ের আব্দার। একসময় মেঘনা চিৎকার করে উঠল। ‘আর চা দিতে পারবো না’। চেয়ারে বসে ফরমাইস ঝাড়া হচ্ছে। করে দেখো এত সব রান্না টের পাবে। বাজার করে এনে দিয়েই খালাস।
হটাৎ অনিমেষে বলে উঠল ‘আচ্ছা কয়দিন ধরে মালতী মাসি কে দেখতে পাচ্ছি না তো! তার কি হল? খোঁজ নিয়েছ?
মালতী মাসির নাম শুনে মেঘনা তেলে বেগুনে জ্বলে উঠল। মনে মনে বলল মালতী মাসি না আস্ত একটা শয়তান। এত বছর কাজ করল। মেঘনা মালতী মাসি কে নিজের বাড়ির লোকের মতোই মনে করত। বিশ্বাস করত। কিন্তু সেই কিনা লোভে পড়ে এমন কাজ করলো।
বেশ করেছে সে মালতী মাসি কে ছাড়িয়ে দিয়েছে। কিন্তু একথা অনিমেষ কে বলতে পারছে না। যে মালতী মাসি আর কাজে আসবে না। বা মালতী মাসি কে মেঘনা আর কাজে নেবে না।
মেঘনার মন ভারাক্রান্ত হয়ে পড়ল। এক তো কাজের চাপ। তার উপর মালতী মাসি কথা উঠতেই বড় কানপাশার কথাও মনে পড়ে গেল।
কত সাধ করে, অনিমেষকে কত খোষামোদ করে এই কানপাশাটা আদায় করে ছিল।
সেদিন বিয়ে বাড়ি থেকে ফিরে বাথরুমে মুখ ধুতে গিয়ে খুলে রেখেছিল বেসিনের পাশে। আর পাওয়া গেল না।
কড়াইয়ে ফোড়োনের আওয়াজ, খুন্তির যুদ্ধ সব মিলিয়ে মাথার ভেতর খন্ডযুদ্ধ চলতে লাগল। তার উপর গরম।
অনিমেষ স্নান সেরে বাথরুম থেকে বেরোলে, মেঘনা স্নানে যাবে।
কাপড় হাতে নিয়ে মেঘনা তৈরি বাথরুমে যাবে, এমন সময় অনিমেষ ভেজা চুল মুছতে মুছতে
মেঘনার দিকে তাকালো।
তোমাকে একটা কথা বলব বলব করে বলা হয়ে ওঠেনি।
কি? মেঘনা বলল।
কয়দিন আগে বাথরুমের সাবান কেশে দুটো সোনার দুল পেয়েছিলাম। সেটা এনে পুরোনো চশমার খালি বাক্সে রেখে তোমার ড্রেসিং টেবিলের ড্রয়ারে রেখে দিয়েছিলাম। তোমাকে বলা হয়নি।
বাথরুমে সাওয়ারের নীচে দাঁড়িয়ে মেঘনা নোনা জলে স্নান সারছে। আয়না তার দিকে তাকিয়ে ব্যঙ্গাত্মক হাসি ছড়াচ্ছে।
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।