• Uncategorized
  • 0

গল্পবাজে রিতা মিত্র

পেন

অনেক দিন কিছু লেখা হয়নি। লেখার মতো কিছু মগজে আসছে না। তবুও ,একটা সাদা খাতার পাতা নিয়ে বসেছি। সামনে পেন দানি। কত রকমের পেন। রঙে, রুপে সকলেই ভিন্ন। এখন জেল পেনের যুগ।
আমরা যখন স্কুলে পড়াশোনা করি, তখন কালি পেন চলত। ডট পেন এসেছে বাজারে তবে তা দিয়ে লেখার অনুমতি ছিল না।
কালি ভরা পেনে, ফাউন্টেন পেনের খুব নামডাক ছিল।
ফিরে আসি কালি পেনের কথায় –
এই কালি পেন কখনও – কখনও খুব বিভ্রাট সৃষ্টি করত। কালি লিক করে খাতাময় ছড়াত, আঙ্গুলে কালি লাগা নিত্য নৈমিত্তিক ব্যাপার ছিল। পেনের নিব, জিভ পাল্টাতে হত।
আমার মনে আছে ড্রপার দিয়ে পেনে কালি ভরতাম আমরা, সুলেখা , চেল পার্ক কালির ব্রান্ডের নাম ছিল।
আবার এই কালি নিয়ে কালি ছোঁড়াছুঁড়িও কম হতো না। প্রতিটি ক্লাসেই কিছু দামাল ছাত্র – ছাত্রী থাকে। তারা জন্মগ্রহণ করে সমস্যা সৃষ্টি করার জন্য।
কখনও বেঞ্চে কালি ছড়িয়ে রাখলো, না দেখে বসলেই হল, ব্যাস হাসির পাত্র আপনি।
কখনও মনোমলিন্য হল তো খাতার উপর কালি ছড়িয়ে দিল কাজ বিগড়ে, এবার ঠ্যালা সামলাও। বকাবকি শাস্তি জুটলো কপালে। দিদিমনি কে বললে ‘ ও তুই কিচ্ছু করিস নিই? এমনই এমনই তোর খাতায় কালি দিয়েছে কেউ?
বুঝুন অবস্থা
এদিকে কুয়ো ওদিকে খাই। যাই তো কোথায় যাই!
আবার কখনও বন্ধুরা মিলে খেলতে বসতাম,সাদা খাতার পাতায় একটু কালি ছিটিয়ে, সেটিকে দু ভাঁজ করে চেপে দিতাম।
পরে কাগজ খুললে, কালি ছড়িয়ে এক এক রকমের ডিজাইন ফুটে উঠতো। তার পর শুরু হতো বিশ্লেষণ। এই দেখ এটা ঘোড়ার মুখ, এটা সাপের ফণা, এটা ভোলে নাথের জটা, আরো কত কী। কখনও কখনও ভবিষ্যতে কী হবে তাও দেখে ফেলতাম আমরা। সে এক যুগ ছিল।
মনে আছে ম্যাট্রিক পরীক্ষার( আমাদের বিহারে -ঝাড়খণ্ডে মাধ্যমিক পরীক্ষাকে ম্যাট্রিক পরীক্ষা বলা হয়) শেষ দিন। পরীক্ষা দিতে যাবার জন্য একটা অটো ঠিক করা হয়েছিল। আমরা চার বান্ধবী আর একজনের পরিবারের বড় কেউ সঙ্গে যেতেন। আমি ধারে বসতাম।
তো শেষ পরীক্ষার দিন ফেরার সময় সুতপা বলে উঠলো ‘ তুই খুব চালাক’ ধারে বসে হাওয়া খেতে খেতে যাস। আমরা গরমে সেদ্ধ হয়ে যাই।এখন আমি ধারে বসব। তাই হবে। আমি কিছু বললাম না। চলল অটো, ঠিক ফেরায়ালাল চৌক( এখন আলবার্ট এক্কা চৌক, পরমবীর চক্র প্রাপ্ত সেনানী মূর্তি) এসে আটকে গেল। খুব জ্যাম রাস্তায়। বেশির ভাগ, আমাদের মতো পরীক্ষা দিয়ে ফেরা ছাত্র ছাত্রীদের ভিড়। তার মধ্যেই একটা সাইকেল গলে ঢুকে পড়ে পাশে এসে দাড়িয়েছে। তাতে দুটো ছেলে। তারাও পরীক্ষা দিয়ে ফিরছে। যেই জ্যাম খুলছে গাড়িগুলো এগোনো শুরু করেছে, ওমনি ‘ হোলি হ্যায়’।
দুদিন বাদে হোলি। সবাই জানতাম।
সুতপার পুরো সাদা স্কার্ট জুড়ে কালি আর কালির ছিটে। বাকি বন্ধুরা বলল, ‘ হাওয়া খাওয়ার শখ মিটলো তো’ ? আমি চোখ রাঙিয়ে চুপ থাকার ইশারা করলাম। কেননা সামনে আমার দাদা বসে। কানে গেলে, রাস্তায় ধুন্ধুমার লেগে যেত।
আজ কাল সব পাল্টে গেছে। এত যে কথা লিখলাম তা কালো জেল পেন দিয়ে। সামনে পেনদানিতে লাল, নীল, সবুজ কত রঙের জেল পেন সাজানো আছে।
তবুও সেই কালি দেওয়া পেন এর কথা বড্ড মনে পড়ে।
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।