গদ্যানুশীলনে রোহিত কুমার সরদার
by
·
Published
· Updated
আজ বৃষ্টির বিয়ে
আজ আষাঢ়ের প্রথম দিন, মেঘেদের গ্রামে উৎসবের ঘনঘটা। আকাশে আলোর ফুলঝুরি, থেকে থেকে বিজলির ছটা। মেঘেরা ব্যস্ত। কারণ, আজ যে বিবাহ উৎসব। দেখছনা প্রকৃতি অপরূপ সৌন্দর্য্যে সজ্জিত! পাত্র হলো বাদল।আর পাত্রিকে তো চেনোই তোমরা – এ পাড়ার মেয়ে বৃষ্টি। দুজনের হঠাৎ দেখা আকাশপথে সূর্য যেদিন মুখ ঢেকেছিল। সেখানেই আলাপ, আলাপ থেকে প্রেম। এই নিয়ে ফিসফাস-গুঞ্জন-রটনা সাতকান করে বাতাস। সখী ঝর্ণা এই প্রেমের মেলবন্ধনের কারিগরি। দূত হিসাবে সঙ্গত দিয়েছিল রবি।
প্রথম প্রথম গুরুজনেরা গুরুগম্ভীর আওয়াজ তুলে বাদ সধেছিল ; এমনকি কালবৈশাখীর তান্ডবের মতো ভয় দেখিয়েছিল। কিন্তু -” মিঞা বিবি রাজি তো কেয়া করেগা কাজী! ” অবশেষে হার মানতে হয়।উভয়ের অভিভাবক কথা হয় বিয়ের বিষয় নিয়ে। ঠিক হয় বৈশাখ মাসে শুভদিন দেখে দুহাত মিলন হবে। কিন্ত তা তো হবার নয়,বৈশাখেই তো বৃষ্টির জন্ম। জন্ম মাসে বিয়ে দিতে কন্যার বাবা সম্মত নয়।এদিকে বাড়ির বড়ছেলে বাদল,তাই জৈষ্ঠ্যমাস জেষ্ঠ্য পুত্রর বিয়ে! পাত্র পক্ষও রাজি নয়।সুতরাং আষাঢ়স্য প্রথম দিবসে বাজবে নহবতের সানাই, হবে প্রজাপতির নির্বন্ধ – ” যদিদং হৃদয়ং তব,তদিদং হৃদয়ং মম।”
চারিদিকে সাজ সজ রব।অন্তঃপুরে চলছে কনে সাজানোর পর্ব। না কোনো বিউটি পার্লার নয়,সখীরা নিজেরাই সাজিয়েছে বৃষ্টিকে।কপালে চন্দনের তড়িৎ বরণ ফোঁটা, মেখলা বরণ টিপ।কানে পেঁজা তুলোর মতো কদম ফুলের ঝুমকো। ঝিঙে ফুলের টিকলি, পিপুল পাতার মুকুট। হাতে জ্যোৎস্নার মতো সাদা পদ্ম মৃণালের চূড়।তিলের খচিত কঙ্কণ, শঙ্খর চেয়ে সাদা বেলফুলের শাঁখা। চেরি ফলের রাঙা পোলা, জুঁইফুলের বাজু,চম্পা ফুলের তাগা।গলায় সাতনরি নারকেল ফুল,খেজুর ফুলের নেকলেস আর পুষ্প ভরা হার।কোমরে টগর ফুলের কটিবন্ধ, পায়ে জল নুপুর আর রামধনু রঙ আলতা,উচ্ছে ফুলের আঙট।
ময়ূরপঙ্খি পবন নায়ে চড়ে বর এসেছে বাদল!উলুধ্বনির আর গুরু গুরু শঙ্খরবে মুখরিত মেঘেদের গ্রাম।বরকেও সুন্দর সাজিয়েছে প্রকৃতির সাজে।বৃষ্টি-বাদল দুজনকে মানিয়েছে বেশ ভালো। বিবাহের ছাঁদনাতলায় মালাবদল শুভদৃষ্টির মুহূর্তে পুষ্প বারিধারা ঝরছে অঝোর ধারায়। ধরনীর খাল-বিল,নদী-নালা, ফুল-ফল, বৃক্ষরাজি,পাখপাখালি, প্রাণীকুল আনন্দে ধেই ধেই করে নৃত্য করছে। তুমিও কি ঘরের মধ্যে বসে থাকবে? এসো এসো এই আনন্দে আমরাও সামিল হই, এসো সবাই।