সুন্দরী তরুনী
তরুনীটির বাবা স্থানীয় একটা মাদরাসার শিক্ষক ও মসজিদের ইমাম ছিলেন৷ সৎ আর ইসলামী আদর্শে বিশ্বাসী লোকটা ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়া শিখিয়েছেন তাঁর মাদরাসাতেই৷ স্ত্রী সন্তানদের ধর্মীয় বিধি বিধান, পোষাক-পরিচ্ছদ, নীতি নৈতিকতার শিক্ষা দিয়েছেন৷ পরিবারের সকলেই তা হাসিমুখেই পালন করতো৷ বড় মেয়েটি বিজ্ঞান বিভাগে ব্রিলিয়ান্ট রেজাল্ট করে গ্রাজুয়েশন কমপ্লিট করে৷ মাস্টার্সের জন্য প্রস্ততি নিচ্ছে এমন সময় গত বছর তরুনীটির বাবাকে জঙ্গী সন্দেহে পুলিশ বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যায়৷ পরদিন থানায় বাবার খোঁজ নিতে গিয়ে জানতে পারলো পুলিশ গতকাল কাউকেও তুলে আনেনি৷ হয়তো কেউ ভূয়া পরিচয়ে এমন ঘটনা ঘটিয়েছে৷ তাদেরকে বলা হলো একটা মিসিং কেস করে রাখতে৷ পুলিশ তদন্ত করে এর সমাধান দিতে পারবে৷
বাবা হারানো দরিদ্র পরিবারের তরুনীটি চোখে অন্ধকার দেখতে লাগলো৷ মা, ছোট দুই ভাই-বোন, আর তার লেখাপড়া খরচ এবং সংসার চালাবে কী করে?
বাবা বেঁচে থাকতেই মাদরাসায় যাওয়া ছাড়া বাহিরে তেমন একটা বের হতোনা৷ বের হলেও হিজাব পড়তো সব সময়৷ ফর্সা, লম্বা আর আকর্ষনীয় তরুনী বের হলেই পাড়ার বখাটেরা টোন করতো৷ শিষ দিতো৷ বলতো ইরানী গোলাপ কিংবা কাশ্মিরি সুন্দরী আরো কত কী৷ সে এড়িয়ে যেত৷
কিন্ত এখন এতসব ভাববার সময় তার নেই৷ সংসারের হাল ধরতে হবে৷ সংসার, ছোট ভাই-বোনদের লেখাপড়ার খরচ, বাড়ি ভাড়া৷ তাই সে প্রথমের দিকে কিছু বাড়িতে কুরআন শিক্ষার প্রাইভেট পড়ানো শুরু করলো৷ কিন্ত বেতন খুবই কম৷ মাসে পাঁচশত টাকার বেশি কেউ দিতে চায়না৷ তাতে সংসার চলেনা৷ তাই সে গণিত, ইংরেজি ও অন্যান্য বিষয়ের উপর কয়েকটা টিউশনি করাতে লাগলো৷ বাঁধ সাধলো স্টুডেন্টরা৷ হিজাব পড়া থাকলে নাকি তারা ভয় করে৷ তরুনীটি নেকাবটা খুলে পড়াতে লাগলো৷ স্টুডেন্টদের বাবাদের বাজে দৃষ্টি তার এড়ায় না৷ এড়ায়না শিক্ষার্থির মায়েদের চোখ৷ কিছুদিন যেতে টিউশনিগুলি হারিয়ে ফেলে৷ কেননা সে সুন্দরী তরুনী৷
দারিদ্য মানুষকে জেদী করে তোলে৷ ফলশ্রুতিতে তরুনীটি একটি প্রতিষ্ঠানে সেলস গার্ল হিসেবে চাকুরি পায়৷ প্রতিষ্ঠানের ড্রেসকোড অনুসারে তাকে শুধু নেকাব নয় হিজাবটাও খুলতে হয়৷ এখানে সুন্দর করে শাড়ি ও প্রসাধন ব্যবহার করে কাস্টমারদের আকর্ষন করতে হয়৷ বেতন ভালই ছিলো৷ তবে অফিসটাইমটা বেশি৷ সকাল ৯টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত৷ তবুও তাকে করতেই হবে৷ তা নাহলে সবাইকে রাস্তায় দাঁড়াতে হবে৷
প্রচন্ড আত্মবিশ্বাস আর সততার সাথেই সে চাকরিটা করছিলো৷ কিন্ত ম্যানেজার প্রতিদিন তাকে ইনিয়ে বিনিয়ে বাজে ইঙ্গিত করে৷ সে এড়িয়ে যেতো৷ কিন্ত একদিন অফিস ছুটির পর ম্যানেজার তাকে শারিরীক লাঞ্চিত করতে উদ্যত হওয়ায় কোনভাবে পালিয়ে বাঁচে সুন্দরী তরুনীটি৷
ভাগ্যক্রমে একদিন এক বড় কর্পোরেট অফিসে বসের পিএস হিসেবে চাকরি পেয়ে যায় সে৷ বেতন এতবেশি হবে তা কখনো কল্পনাই করেনি তরুনীটি৷ নতুন অফিস৷ নতুন আইন৷ নতুন ড্রেস কোড৷ এখানে পিএসের ড্রেস কোড হলো স্কাট ও টপস কিংবা প্যান্ট ও শার্ট/টিশার্ট৷
তরুনীটি নতুন আদলে নতুন পরিবেশে মানিয়ে নিতে থাকে৷ কেননা তার হাতে কোন অপশন নেই৷ আধুনিক আর বাহারি সজ্জায় সজ্জিত অফিস৷ অভিজাত আর কেতাদূরস্ত পোষাকে আবৃত পরচুলায় ঢাকা এক মধ্য বয়সি পৌঢ় যেন জোর করে নিজেকে যুবক প্রমাণে সদা তৎপর৷ কাজে অকাজে নিজের চেম্বারে ডেকে গুলতানি আলাপটাই যেন তার কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ৷ কথার ফাঁকে বস কিছু যেন ইঙ্গিত দেয়৷ না বোঝার ভান করে তরুনীটি৷ ক্ষিপ্ত বস চোখের ইশারায় যেন বোঝাতে চান এর বদলা নেবো৷
কিছুদিন পর অফিসে বিদেশি একটা ডেলিগেট টিম আসলো৷ তারা এই প্রতিষ্ঠানের ফিসিবিলিটি, ভিজিবিলিটি ও সক্ষমতা যাচাই করবেন৷ ইতিবাচক হলে জয়েন ভেঞ্চার ইন্ডাস্ট্রি স্থাপন করবে৷ অফিসে সাজ সাজ রব৷ সকলে ব্যতিব্যস্ত৷ কনফারেন্স রুমে ডেলিগেট টিমের সাথে বস মিটিং করছেন৷ ইন্টারকমে টেলিফোন পেয়ে তরুনীটি সকলের জন্য স্ন্যাক্স ও ব্ল্যাক কফি পরিবেশন করে চলে আসবে কিন্ত বস বসতে বললেন৷ তরুনীটি বসলো৷ পরিচিতি পর্বের ভাষাটা বুঝতে পারলেও পরের সংলাপগুলো বুঝতে পারেনা তরুনী৷
বস বিদেশিদের আস্বস্থ করে যে তাঁদের সমস্ত এন্টারটেইনের ব্যবস্থা করা আছে৷ আর এই দায়িত্বটা পালন করবেন আমাদের পিএস৷ সেদিন রাতে আর বাড়ি ফিরতে পারেনা তরুনীটি৷
পরেরদিন খবরের কাগজের ভেতরের পাতায় ছোট্ট একটা সংবাদ প্রকাশিত হয়৷ মৈত্রি সেতুর রেলিংয়ে ঝুলন্ত অবস্থায় বস্তাবন্দী এক সুন্দরী তরুনীর মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ৷