T3 || শ্যামা আমার || দীপাঞ্জলী সংখ্যায় রীতা চক্রবর্তী 

শক্তির বোধন

পুকুর পাড়ে নীলুদের বস্তি থেকে এই মাঝরাতে চিৎকার চেঁচামেচি শোনা যাচ্ছে। ডোবা পুকুরের ওপাড়ে পাঁচ ঘর ভাড়াটে আছে নীলুদের । তিনটে ঘর নিয়ে সুকু আছে দুই বৌ আর পাঁচ ছেলেমেয়ে নিয়ে। দুটো ঘর নিয়ে আছে নতুন ভাড়াটিয়া বৌটা। বছর দশ-বারোর মেয়ে আর মা দুজনে মিলে আছে মাস কয়েক ধরে।
সেই নতুন ভাড়াটের ঘর থেকেই হাঙ্গামা শোনা যাচ্ছে।
একেতো নীলুর সাথে তাপসের কদিন ধরেই খুব মন কষাকষি চলছে ওই নতুন ভাড়াটে বৌটাকে নিয়ে। বেশ কিছুদিন ধরে তাপস নীলুকে সেভাবে সময় দিতে পারছেনা।
আগে দুপুরে খাবার পরে তাপস যখন নীলুর ঘরে গিয়ে শরীরটা ছড়িয়ে দিত তখন নীলু পাশে থেকে একটু একটু করে
নদী হয়ে যেত। সমর্পণের স্রোতে ভাসিয়ে নিয়ে যেত তাপসের উজান ফেরা তাপ। নিত্যদিনের ক্লান্ত জীবনে এনে দিত এক নতুন স্বাদ।
তাপস নীলুদের বস্তিতে ভাড়াটে হয়ে এসেছিল বছর ছয়েক আগে।
ফর্সা সুন্দর জোয়ান ছোকড়াটাকে দেখে নীলুর মনে রং লেগেছিল।
এলুমিনিয়াম কারখানায় কাজ করা জোয়ান ছোকড়াটাকে দেখে নীলুর মা’রো ভালো লেগে যায় । মনে মনে তাকেই জামাই করে নিয়েছে নীলুর মা। বয়সে দুজনে মাথায় মাথায়।
নীলুর মায়ের মনের কথা বুঝতে পেরে তাপস বাধ্য ছেলের মতো চলতে থাকে। কারণ নীলুদের এতো বড়ো সম্পত্তির ভোগ দখলের মালিক তো নীলু, তার একমাত্র মেয়ে। ভবিষ্যতে জামাই হবে এই সম্পত্তির আসল মালিক।তাই নীলুর মা যখন তার কালো মাঞ্জাদেয়া মেয়েকে একটু একটু করে এগিয়ে দিয়েছে তাপসের দিকে তখন একেবারে সুবোধ বালকের মতো
নীরবে স্বীকৃতি দিয়ে অনন্ত অবগাহনে মেতেছে।
অবশ্য নীলুর মা ওদের দুজনের বিয়ের রেজিস্ট্রি করিয়ে নিয়েছে সুযোগ বুঝে। তখনো তাপস বাধ্য ছেলের মতো সব মেনে নিয়েছে।
 সেই তাপস যেদিন নতুন ভাড়াটে বৌটাকে
 চোখে চোখে ইশারা করেছিল সেদিন থেকে নীলুর সাথে বিস্তর অশান্তি। তাপসের অবহেলা নীলু একেবারে সহ্য করতে পারে না।
আর ওই ভাড়াটে বৌটা হলো নীলুর সুখের পথের নতুন কাঁটা।
ওই বৌটাকে চোখের সামনে থেকে তাড়াবার একটা উপায় খুঁজছিল নীলু।
 আজ কালীপুজোর রাতে যখন ওর ঘর থেকে
এরকম চিৎকার চেঁচামেচি কানে গেল তখনই নীলু সুযোগটা কাজে লাগাতে নেমে পড়ল।
একেবারে তর্জন গর্জন করতে করতে এগিয়ে যায় ওই ঘরের দিকে।
ওখানে গিয়ে দেখে সুকু ওই ঘরের দরজায় লাথি মারছে আর ভেতর থেকে ওই ছোট্ট মেয়েটা বাঁচাও, বাঁচাও করে চিৎকার করছে।
মুহূর্তের মধ্যে কি যে হয়ে গেল নীলুর।
হাতের কাছে একটা বাঁশ ছিল। সেটা তুলেই পর পর কয়েক ঘা দিল সুকুর মাথায়। সুকু নিস্তেজ হয়ে পড়ে গেল মাটিতে। চারদিকে থৈথৈ রক্ত আর বাঁশ হাতে নীলু একলা দাঁড়িয়ে সেখানে। এভাবেইতো বারে বারে হয়েছে মাতৃশক্তির বোধন।
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।