মার্গে অনন্য সম্মান রীতা চক্রবর্তী (সেরা)

অনন্য সৃষ্টি সাহিত্য পরিবার
সাপ্তাহিক প্রতিযোগিতা পর্ব – ১২৬
বিষয় – নতুন সাজে প্রকৃতি
রবি সংবাদ
রবিঠাকুর শুনছো!
শুনতে পাচ্ছ কি তুমি!
সাড়া দিচ্ছনা কেন রবিঠাকুর?
সারাদিন তোমার খর তাপে মাটির বুক যে ফেটে চৌচির হয়ে গেল তা কি তুমি দেখতে পাওনা? মায়ের বুকের স্নেহের ধারা যে তোমার মধ্যদিনের আগুনে শুকিয়ে গেল! ছোট্ট বাছাদের পিপাসার জলটুকুও যে আর থাকবে না! ওদের জন্য একটু সুধা বাঁচিয়ে রাখো রবিঠাকুর।
শুনেছি, চৈত্রের দুপুরে তোমার চলার পথ যখন অগ্নিদেবের ছোঁয়ায় বিশোধিত হত তখনই প্রলয়নাথ মহাকাল কালবৈশাখী হয়ে নটরাজ মূর্তি ধরে ঝড়বাদলের তান্ডবে সে তাপ দূর করে দিত। জল স্থল অন্তরীক্ষে আনন্দ লহরী বয়ে যেত। দেবী বসুন্ধরা পূর্ণ অবগাহনের পর নব কিশলয়ে নিজেকে সাজিয়ে নিত। অশোকে, কিংশুকে, পলাশের শাখায় শাখায় গোধূলির আলো যেন তোমার সন্ধ্যা আরতির লক্ষ প্রদীপ সাজিয়ে দিত। কোথায় গেল তোমার সেই স্নিগ্ধছায়া সজল সাঁঝের আকাশ? কোথায় হারালে তুমি দিগন্তপারের রংধনু?
কোথায় লুকালে তোমার বসন্ত বাহার?
জানি, তুমি বলবে, “তোরা আধুনিক কালের মানুষ।তোদের তো বনজঙ্গল একটুও ভালো লাগে না। গায়ে পায়ে ধুলো মেখে থাকা মোটেই তোদের পছন্দ নয়। তাইতো তোদের বাড়ির ছোটরা ধুলো লাগার ভয়ে মাঠেঘাটে খেলা করেনা। মাটিতে হাত দেয়না। কাদামাটিকে তোরা নোংরা বলিস। তাইতো মাটির ঠান্ডা ঘর ছেড়ে তোরা বসতি গড়েছিস ইটকাঠের ভূবনে। সেখানে ঠান্ডা মেশিনে তোদের বাড়ি ঘর ঠান্ডা হয়। সাথে থাকে সারা বছরের সর্দিকাশি! জানিস, আগেকার দিনে ছেলেরা মাঠে ধূলো কাদামেখে খেলত। সময়ে অসময়ে বৃষ্টিতে ভিজত। তাদের শরীর ছিল শক্ত যেন ঢালাই দেয়া লোহা। সামান্য সর্দি হলে তাদের “নির্বাসনে” থাকতে হতো না।
তখন তো বাড়ির মেয়ে-বৌ’রাও বৃষ্টিতে ভিজত। জল সপসপ ভেজা শরীরে পুকুরে মাঠে ঘাটে খেত-খামারে ওরা মনের আনন্দে মনকে ভেজাতো। খোলা আকাশের নিচে রিম ঝিম ধারাতে মনের আগল দিত খুলে। মন ময়ূরী তখন ওদের মন বাগিচায় নাচত পেখম মেলে। অকারণের ভালো লাগায় ওরা নিজেকে আরও গভীর করে ভালোবাসত। তাইতো খুশির চাদর জড়িয়ে নিতে তারা ভিজত সময়ে – অসময়ের বৃষ্টিতে।
সেসব ছিল কালিদাসের কালে। বর্তমানে সভ্যতার নামে তৈরি হয়েছে বড় বড় অট্টালিকা। সেখানে বড় গাছ নেহাতই কম। ধুলো নেই, কাদা নেই। প্রকৃতির হাওয়া নেই। মানুষের জীবন সেখানে বড্ড যান্ত্রিক। এই যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেতে মরিয়া মানুষ নিজেদের বন্ধ ঘরের বারান্দাতে শুরু করেছে অরণ্যের সাধনা। সাজিয়ে তুলছে একটুকরো বাগান। সেখানে তারা বর্ষায় জল ফড়িং আর রংবেরংয়ের প্রজাপতির আনাগোনা দেখতে পায়। পরিবারের ছোট থেকে বড় সবাই পায় বুক ভরা অক্সিজেন। প্রকৃতির মাঝে কাটানো সময়টুকুতে তাদের মন ভরে থাকে অনাবিল আনন্দে। নিজের মনটাকে তারা নতুন করে সাজিয়ে তোলে ঘরবাগানের সবুজ সতেজ পাতার বাহারে নানা রংয়ের ফুলের সাথে। প্রকৃতিও এখন ড্রয়িংরুমের সাজানো বাগানে একটুকরো নতুন সাজে ধরা দিয়েছে।