• Uncategorized
  • 0

গল্পেরা জোনাকি তে রীতা চক্রবর্তী

অ্যারেঞ্জ ম্যারেজ

মা আমার বিয়েরজন্য মেয়েদেখা শুরু করেছে।
মাঝেমাঝেই আমি যখন সন্ধ্যেবেলা অফিসথেকে ফিরি মা কেমন ছোটদের মত পিছু পিছু ঘুরতে থাকে।
—- “কিছু বলবে?”
—–“না, তেমন কিছু না, ওই একটা মেয়ের ফটো আছে, যদি তুই একটু দেখিস, তাই।” বলে বাচ্চাদের মত ফিকে করে হেসে ওঠে।
মাকে কি করে বলি, সুরঙ্গমাকে আমি ভালোবাসি সেই ছোট্টবেলা থেকে। আমার দশবছর বয়সে বাবা যখন স্বেচ্ছায় সংসার ত্যাগকরে সন্ন্যাসী হয়েযান, তখনথেকে মা শুধু আমার জন্য সব দুঃখ কষ্ট নীরবে মুখবুজে সয়ে গেছে। তাই আজ যখন নিজের পছন্দ মতো মেয়েদেখে ছেলেরবৌ আনতে চাইছে তখন মায়ের এই সুখটুকু কেড়েনিতে মন সায় দেয়না।
সুরঙ্গমাকে বলি সে কথা। ও তখন বুদ্ধি করে ঘটকের হাতে নিজের একটা ছবি পাঠিয়ে দেয় আমাদের বাড়িতে। অবশ্য আমিই স্টুডিওতে নিয়েগেছি সে ছবি তুলতে। তাই মা যখন বলল ফটো দেখতে তখন আমি সুবোধ বালকের মতো বলে দিলাম, “তুমি দেখেছ তো, তাতেই হবে।”
–তবে আমি ওদের বলে দিই যে রবিবার আমরা দুজন যাব মেয়ে দেখতে, মা আমার অনুমতির জন্য মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে।
—আবার দেখতে যেতে হবে? ছবি দেখে ফাইনাল করে নিলে হতনা? – – – মা চুপচাপ আমার দিকে তাকিয়ে আছে দেখে বললাম “ঠিক আছে, বলে দাও।” একগাল হাসি নিয়ে মা ঠাকুর ঘরে ঢোকে।
পরদিন বাসস্টপে ঘটকমশাইর সাথে দেখা হতেই বলেন, “আজ একবার তোমাদের বাড়িতে যাব। পরশু একটি মেয়ের সন্ধান পেয়েছি তোমাদের পাড়াতেই। মেয়েটি চাকরি করে। দেখতেও বেশ। হয়ত তুমি চিনবে! তোমাদের গলির মোড় ঘুরলে যে বাড়িটা সেই বাড়ির মেয়ে।বহুদিন আমি ওদের বাড়ি ঘুরে ঘুরে গেছি। তখন আমার কথা কানে ঢোকেনি। এতদিনে তার বিয়ের ইচ্ছে হয়েছে। তাই নিজে এসে আমাকে তার ফটো আর জন্মতারিখ ইত্যাদি দিয়ে গেছে। খুব ভালো লাগলো ওর সাথে কথা বলে। সে সব কথা তোমার মাকে বলতে আজকেই যাব তোমাদের বাড়ি।”ঘটকমশাই যে পাঁচালি শোনালেন তাতে তো আমার মাথা বন বন করে ঘুরছে। মা তবে কাল অন্য কোন মেয়ের ছবি নিয়ে এসেছিল? কি ক্যালাসের মত কাজ করেছি আমি! একবার ছবিটা দেখে নিলে তো এরকম একটা সিচুয়েশনে পরতে হতনা! কি করি এখন? কোথায় কার বাড়ি যাবার প্ল্যান করেছে মা? কি করে বন্ধ করা যায় এটা? আমিতো ঘেমে নেয়ে একাকার। এখন বাড়িতে ফিরে যাবারো উপায় নেই কারণ ঘটকমশাই যাবেন।
রবিবারের প্রোগ্রাম কি করে ক্যানসেল করা যায় তার একটা উপায় বের করতে হবে! এই সব ভাবতে ভাবতেই অফিস পৌঁছেছি। অসম্ভব ছটফট করে কোনোরকমে অফিস শেষে পরি কি মরি করে বাড়ি ফিরেছি। দেখি মা দরজা খুলেই দাঁড়িয়ে আছে।
–“কি ব্যাপার? তুমি এভাবে দাঁড়িয়ে আছ কেন? শরীর ঠিক আছে তো? ”
–“হ্যাঁ। মানে তোকে একটা কথা বলব বলে সেই সকাল থেকেই অস্থির হচ্ছি। আসলে রবিবার যেখানে মেয়ে দেখতে যাবার কথা ছিল আমরা ওখানে যাচ্ছি না। আমরা অন্য একটা মেয়ে দেখতে যাব।”
–নিজেকে সংযত রাখার প্রাণপন চেষ্টা করে আমি বললাম,” কেন? কি হল? ”
মা তখন ঘটকমশাইয়ের কথাগুলো বলে। আমিও এই সুযোগে নিজের ভুল শুধরে নিতে বলি,” আচ্ছা, ফটো গুলো নিয়ে এসো তো, দেখি একবার।” মা হাসি মুখে ফটো আনতে গেল। আমার যেন ঘাম দিয়ে জ্বর ছেড়ে গেল।
আর তার পরেরটা তো সাজানো ইতিহাস।
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।