গল্পেরা জোনাকি তে রীতা চক্রবর্তী (পর্ব – ৫৪)

নীল সবুজের লুকোচুরি
তাইতো মা’কে যেন আজকাল বড্ড বেশি বেশি করে ভালবাসে। ইদানিং বাবার ওপরেও শ্রদ্ধা যেন অনেক বেড়ে গেছে। আর সেই অবুঝ শিশুর মত আরিয়ানকেও খুব ভালোবাসে মিঠি। নিজে মা’ হয়ে বুঝেছে সন্তানকে কোলে তুলে নেবার সাথে সাথে সব মায়ের কাছে স্নেহ-প্রেম-ভালবাসা নিজেদের যথার্থতা নিয়ে সম্পর্কের মধ্যে ধরা দেয়।
প্রেম সাগরে ডুব দিয়ে মন মুক্তা পেলে যদি
ফসল তোমার উঠল ফলে জোয়ার জলে যেমন করে ফুসলে ওঠে শীর্ণা ধারার নদী।
চোখের কাজল রঙ তার লাল ভালোবাসার দুনিয়াতে
সবাই বড় আপন লাগে, মন্দভালোর মিশেলতে।
মন কোকিলা রঙের নেশায় কুহুতানের সুর ধরে।
মধুরবেলা মিলনমেলা
কিম্বা সে সুর বিরহীনির বোঝে না সে।
বন্ধ মনের খোলা দুয়ার
তৃষ্ণা জাগে চোখের পাতায়
অনুরাগের বৃষ্টি ভেজা জানালাতে
মন রেখেছে মন পাগলের হাতটাতে।
স্বপ্নে দেখা রূপকথাতে সোনারকাঠি রূপোরকাঠি কন্যা যেন খোলা আঁচল উড়িয়ে দিয়ে দুধ সাদা ওই মেঘের পাড়ে চলছে পথে খেয়াল মতো খেলছে জীবন দেয়া নেয়া পূর্ণিমাসির জ্যোৎস্নাধোয়া শেষরাতে।
সেই সন্ধ্যা কোনোদিন মন থেকে মুছে ফেলা যাবে না। দেশিকান স্যার এসেছিলেন আনসারি স্যারের সাথে। একটা গুরুত্বপূর্ণ মিটিংয়ে মিঠিকে মাদার ডেকে পাঠিয়েছেন। হঠাৎ কি এমন ঘটনা ঘটল যে এক্ষুণি যেতে হবে, ভেবে কোন কূল কিনারা খুঁজে পায় না মিঠি। তবুও মাদার ডেকেছেন মানেই কোনো গুরুত্বপূর্ন বিষয় নিশ্চয়ই! তাই একটুও দেরি না করে মিঠি বেরিয়ে পরে। গিয়ে দেখে মা আগে থেকেই ওখানে রয়েছেন। বেশ কিছু কাগজপত্র নিয়ে মাদার মাকে কিছু বোঝাচ্ছেন। মিঠিকে দেখেই কাছে ডেকে নিলেন।
একটা স্টাম্পপেপার হাতে তুলে দিয়ে বললেন, “ভালো করে দেখে নাও।” মিঠি সেটা হাতে নিয়ে হাঁ করে তাকিয়ে থাকে অনেকক্ষণ।
তারপর ধীরে ধীরে পড়তে শুরু করে। এটাতো আনসারি স্যারের প্রোজেক্টের ব্লু প্রিন্ট!
ডাক্তার আনসারি এখানে যে ড্রিম প্রজেক্ট করবেন সেখানে ডাক্তার সুমিতা মৈত্র, ডাক্তার আয়ুস্মিতা মৈত্র, ডাক্তার আরিয়ান আনসারি, ডাক্তার সাহানা আখতার, ডাক্তার দেশিকোত্তম দেশিকানের নাম রয়েছে। ডাক্তার আনসারির পক্ষ থেকে এঁদের সকলকে অনুরোধ করা হয়েছে এই প্রোজেক্টের পঁচিশ পার্সেন্ট শেয়ার কিনে নেবার জন্য।কাগজটা বেশ কয়েকবার পড়েছে মিঠি। কিন্তু কি করতে হবে কিছুই বুঝতে পারছে না। মাদার মিঠির মনের কথা বুঝতে পেরে বলেন, “দু’একদিনের মধ্যেই ল’ইয়ার এসে সব কিছু বুঝিয়ে দেবেন। অত ভাবনার কিছু নেই।” আচ্ছা, তাহলে তো কোন সমস্যাই নেই। তবুও বসতে বললেন যখন তখন তো ফিরতে পারবেনা। মা ও খুব টেনশন করছে কোন কিছু নিয়ে। সেটা যে কি তাতো বোঝা যাচ্ছে না। এখন অপেক্ষা করতেই হবে। একটা ড্রিম প্রোজেক্টর শেয়ার হোল্ডার হবে মিঠি ভাবতেই রোমাঞ্চিত হয়ে পরছে। কিন্তু আসল চমকটা তখনও বাকি ছিল। মাদার কিছুক্ষণ মায়ের সাথে কথা বললেন। তারপর দেশিকান স্যারকে কাছে ডেকে নিয়ে বললেন, ” আজ আমার খুব আনন্দের দিন। মাদার হয়ে এই অরফান হাউসে এসে আমি অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ করেছি। কিন্তু সংসারের ছোট ছোট কর্তব্যে লুকিয়ে থাকা আনন্দ কখনো পাইনি। তবে আমার এই হীরের টুকরো ছেলে আমাকে সেই সুযোগ করে দিয়েছে। এই ছেলেকে আমি সুখি দেখতে চাই। কাজ পাগল ছেলে আমার কোনদিন যে নিজে থেকে সংসার করতে চাইবে, আমি ভাবতেও পারিনি। আজ তাঁর পছন্দের মতো একজন নারীকে সে খুঁজে পেয়েছে। যদিও মুখ ফুটে তাকে এখনো বলতে পারেনি। তবে তার অভিভাবকের সাথে কথা হয়েছে। এখন সেই মেয়েটির যদি আপত্তি না থাকে তবে আমি নিজে তাদের বন্ধনকে স্বীকৃতি দিতে চাই। ”
এক অদ্ভুত নীরবতা নেমে এল মুহূর্তে। মিঠির মনে ঝড় উঠেছে। সব কিছু যেন লন্ডভন্ড হয়ে গেল সেই মুহুর্তে। দেশিকান কোনো মেয়েকে পছন্দ করেছে? তাকে বিয়ে করতে চায়? কে সে? মিঠি যে নীরবে ভালোবেসেছে তাকে! কি করে সবাইকে বোঝাবে এখন? নিজের ভালবাসার কথা কি করে বলবে দেশিকানকে? মাদার আবার বলে ওঠেন, “তোমরা নিশ্চয়ই জানতে চাও সেই মেয়ের নাম? সে হল আমাদের আয়ুস্মিতা।”
আসছি পরের পর্বে