রবীন্দ্রনাথ সাহিত্যিক না হলে, একজন আদর্শ শিক্ষক হতেন
রবীন্দ্রনাথ সাহিত্যিক না হলে, একজন আদর্শ শিক্ষক হতেন। প্রথাগত বিদ্যালয় শিক্ষা তাঁর তেমন ছিল না ঠিকই তবু তিনি মনে-প্রাণে, মর্মে ও মননে, আচার- আচরণ ও আদর্শে একজন প্রকৃত হৃদয়বান শিক্ষিত মানুষ ছিলেন। বিদ্যালয়ের ধরাবাঁধা নিয়ম-শাসন তাঁকে বিদ্যালয় শিক্ষার প্রতি অনীহা জাগিয়ে ছিল। তাই পরবর্তীতে তিনি বোলপুর-শান্তিনিকেতনে যে নতুন ভাব ও চিন্তাধারার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বিশ্বভারতী গড়ে তুললেন, তার আদর্শ হল মুক্ত প্রকৃতির কোলে পাঠদান। এতে ছাত্রছাত্রীদের কল্পনাশক্তির যেমন বিকাশ হবে, তেমনই পাঠগ্রহণ তাদের কাছে আনন্দের হবে। তারা বাস্তবের মাটিতে পা রেখে স্বনির্ভর ও যুক্তিনিষ্ঠ নাগরিক হিসেবে নিজেকে গড়ে তুলতে পারবে। প্রতি সমাবর্তনে তিনি শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে যে সংক্ষিপ্ত ভাষণ দিতেন সেগুলো পরবর্তীতে তাঁর “শিক্ষা” গ্রন্থে সংকলিত হয়েছে। আমরা সে গ্রন্থ পড়ে রুশো, ফ্রয়েবেলের মত তাঁকেও একজন আধুনিক শিক্ষাবিদ দার্শনিক হিসেবে নিঃসন্দেহে চিহ্নিত করতে পারি। বিশ্বভারতী তাঁর স্বপ্ন ছিল। স্ত্রীর সমস্ত গহনা নিজের বিষয়-সম্পত্তি, বইয়ের রয়্যালটি,এমনকি নোবেল পুরস্কারে প্রাপ্য সমস্ত অর্থ তিনি বিশ্বভারতীকে দান করেছিলেন। এর থেকে বোঝা যায়, তিনি শুধু সাহিত্যিক ছিলেন না, একজন শিক্ষানুরাগী প্রকৃত শিক্ষক ছিলেন। নিজেও নিয়মিত ক্লাস নিতেন। তাই আমার বিবেচনায় রবীন্দ্রনাথ সাহিত্যিক না হলে নিশ্চিত ভাবে শিক্ষক হতেন।