সাপ্তাহিক ধারাবাহিকে রাজশ্রী বন্দ্যোপাধ্যায় (পর্ব – ৮)

পিরিচ পেয়ালার ও একটি সন্ধ্যা
পিরিচ পেয়ালার ঠুংঠাং- এ ভরে ওঠে সন্ধ্যা, সাথে ভীমসেন মেজাজী আড্ডা৷ কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারী কচ্ছ থেকে কোহিমা গোটা ভারতটা ঘুরে ফেলি কিংবা বলা কি যায় গোটা পৃথিবীটাই হয়ত ঘুরে ফেলি আমরা আড্ডা দিতে দিতে৷ আর বিষয়? সম্পর্ক থেকে রসায়ন, রাজনীতি থেকে সংস্কৃতি কোন বিষয়ে আলোচনা হয় না বলুন তো এই আড্ডায়! যেন বিশ্বব্রহ্মাণ্ড বারেবারে ধরা পড়ে পিরিচ পেয়ালার এই সন্ধ্যার আড্ডায়৷
তেমনই এক সন্ধ্যায় নারীকে নিয়ে বাঁধল গোল৷ কোনটা ভুল আর কোনটা অন্যায় তাই নিয়ে চলল বিস্তর তর্ক৷
একেবারে চুলচেরা বিচার৷ নিত্তি মেপে এগানো৷ সমানুপাত ব্যস্তানুপাত কিছু কি বাকি থাকল? আমার আবার হিসেব কষাকষির এমন বহর দেখলে কেশব চন্দ্র নাগের কথা ভারি মনে হয়৷ আর ঐ বাঁদরটার কথা
তেল মাখা ডান্ডায় কিছুটা উঠছে আবার স্লিপ করে ততটাই নেমে আসছে৷
আকাশের সামিয়ানায় স্বপ্নের বুদবুদগুলো মেঘের মত রহস্যময় হয়ে ওঠে৷ ছোট ছোট মিছরির দানার মত আলোর টুকরোগুলো জ্বলতে থাকে স্বপ্নের আনাচেকানাচে৷ অভিসারী চাঁদ রূপের বিকিকিনি সারে উরন্ত মেঘেদের সাথে৷ আমারও একটা সোনাঝুরি আছে, ঝুলবারান্দা, পাহাড়ী নদী, জামবুনীর জোৎস্না আছে৷ কেউ কি সেই স্বপ্নের খবর রাখে? সেই ঝুলবারান্দা কখন আলকাতরায় মাখামাখি হয়ে যায়,
সেই পাহাড়ী নদী কখন অন্তঃসলিলা হয়ে যায়, সোনাঝুরি কখন শুকিয়ে মরুভূমি হয়ে যায়
কেউ খবর রাখে না!
স্বপ্ন আর প্রেমের খোলস ছাড়িয়ে ভেতরের যে কঙ্কালটা রয়েছে সেটা আগুন গিলে খায়৷ কত জন খোঁজ রেখেছে চাঁদ উপোসী কিনা? কত জন খোঁজ রেখেছে পড়ন্ত বিকেলের আতরদানে আমার সর্বনাশ লেখা হয়েছে৷ স্বপ্নগুলোতে আগুন জ্বালিয়ে ধাপার মাঠে ফেলে দিয়ে এসেছে৷ চেনা মানুষের গায়ে হায়নার গন্ধ৷ আগুনের গনগনে আঁচে অগ্নিপরীক্ষা দিতে দিতে ক্লান্ত সীতারা কবেই সমাজ ছেড়ে সংসার ছেড়ে অন্ধকারের গর্ভে বাসা বেঁধেছে৷
তোমরা তার পায়ে বেড়ি পড়িয়েছ, হাতে হাত কড়া, প্রজনেনের যন্ত্র হিসাবে আদর করেছো্ আর
আশ মিটে গেলে আঁশটে হাত ধুঁয়ে নিয়েছো কলের জলে৷ বহু যুগের পুঞ্জিত ক্ষোভ যেদিন অগ্নিবর্ণা হয়ে উঠবে সেদিন অত্যাচারীর নখ, দাঁত উপড়ে তাকে বিষহীন জলঢোঁড়া সাপের মত ছুঁড়ে ফেলে দেবে সেই সব অবলারাই৷ কী কৌতুক আহা! মন্দিরে অঞ্জলি দিয়ে এসে, মায়ের পায়ের লাল সিঁদুর লাগিয়ে পরম ভক্ত হয়ে ওঠো৷ আর মন্দির থেকে বেরিয়ে ঘরের নারীটাকে, রাস্তার নারীটাকে, অফিসের নারীটাকে, বাজার নিয়ে বসে যে নারীটা তাকে ছুঁড়ে দাও অসম্মান, তুচ্ছ তাচ্ছিল্য৷
যে মানুষটা তোমার জ্বর হলে সারারাত জলপটি দেয়, প্রতিদিনের চাহিদা পূরণ করতে নিজেকে একটু একটু করে ক্ষয় করে, খরচের ভয়ে লুকিয়ে রাখে নিজের স্বপ্ন, ব্যথা এমন কি অসুস্থতার কথা, তাকে কি আগলে রাখা যায় না ভালোবাসা দিয়ে, যত্ন দিয়ে ?
দেখো তোমাদের এই সাথে থাকা, ভালবাসার এই পথচলা, তাদের মুখটাকে কেমন আলো করে রাখবে আর সেই আলোর আঁচ তোমার গোটা পৃথিবীটাকে কেমন কমলা আভায় ভরে রাখবে৷
আসছে সপ্তাহে আমাদের সন্ধ্যার আড্ডায় আবার কী নিয়ে দক্ষযজ্ঞ বাঁধে দেখি! চিন্তা করবেন না, একেবার সেই বিষয়টা নিয়েই চলে আসব আগামী সপ্তাহে ” পেয়ালা পিরিচ ও একটি সন্ধ্যা”-র পরের পর্বে৷ ভালো থাকুক সকলে৷
*বিঃদ্রঃ পেয়ালা পিরিচ সহযোগে সন্ধ্যায় আপনিও জমিয়ে আড্ডা মারুন।