আইনস্টাইনের আপেক্ষিকতা তত্ত্বের জন্য নোবেল প্রাইজ না পাওয়ার কারণ খুঁজতে গেলে পদার্থবিদ্যার ইতিহাসেই খুঁজতে হবে। নিউটনের মহাকর্ষ তত্ত্বানুযায়ী একটি আলোক রশ্মি যদি মহাবিশ্বে এক জায়গা থেকে আরেকজায়গায় যায় তবে আলোকের সরন দুজন দর্শকের কাছে অবশ্যই আলাদা হবে কিন্তু তাদের সরনকাল একই থাকবে কারন মহাবিশ্বের কোন বস্তুই বাস্তবিক
স্থির নয় সেহেতু আলোর গতিও দুজনার কাছে ভিন্ন(কারণ এক্ষেত্রে আলোর গতি= অতিক্রান্ত দুরত্ব/ সময়)। এটা ঠিকই মনে হচ্ছিল 1865 সালের আগে পর্যন্ত যতদিন না ম্যাক্সওয়েল প্রমান করলেন যে মাধ্যম নিরপেক্ষভাবে আলোর গতি সবসময় একই থাকে। আলোর গতি একই কিন্তু বিশ্বের কোনবস্তুই স্থির নয় এটা জানা ছিল তাই আলোর গতি ইথার নামে এক সর্বব্যাপী বস্তুর সাপেক্ষে একই থাকে এই ধারনা করা হল। কিন্তু উৎস বা দর্শকের গতি অনুযায়ী এই গতি পরিবর্তিত হতে পারে এমন ধারনা করা হল।কিন্তু 1887 সালে মাইকেলসন এবং মরলে নামক দুজন আমেরিকান বিজ্ঞানী পরীক্ষাদ্বারা প্রমাণ করলেন যে আলোর গতি উৎস বা দর্শকের গতির উপর নির্ভর করে পরিবর্তিত হয় না।এই ঘটনাটা ব্যাখ্যা করার জন্য তার পরবর্তি প্রায় বিশবছর মানে 1905 সাল পর্যন্ত বিজ্ঞানীরা নিরন্তর প্রচেষ্টা চালালেন।অবশেষে 1905 সালে আইনস্টাইন তাঁর বিশেষ আপেক্ষিকতা তত্ত্ব উপস্থাপন করলেন। যা নিউটনের মতই মেনে নিল যে বিশ্বে কোনকিছুই স্থির নয় কিন্তু দুজন দর্শকের কাছে একইধরনের ঘড়ি থাকলেও দুটি ঘটনার মধ্যবর্তীসময়কাল দুটি ঘড়িতে একই দেখাবে না ।কারণ সময়ের পরিমাপ বিভিন্ন দর্শকের কাছে বিভিন্ন।এই জায়গায় ঈশ্বরের বিশ্বসৃষ্টির ধারণা ধাক্কা খেল।কারণ আইনস্টাইনের তত্ত্বানুযায়ী সময় কোন অসীম রাশি নয়, দুটি ঘটনার অন্তর্বতী সময় দুজন দর্শকের কাছে দুরকম,কোন সসীম সময় আগেই কেবল এই বিশ্ব তৈরী হয়েছিলো,বিশ্ব ক্রমাগত প্রসারনশীল এবং সময়ের ধারণা এসেছে বিশ্বসৃষ্টির শুরু থেকে,তার আগের কোনঘটনার কোন প্রভাব সৃষ্টির পরবর্তী ঘটনাকে প্রভাবিত করতে পারবে না।যেটা ঈশ্বরবিশ্বাসী কোন ধর্মপ্রতিষ্ঠান বা ধর্মবিশ্বাসী ভক্তই মেনে নিতে পারে না। বিশ্বসৃষ্টিতে ঈশ্বরের প্রভাব যে নেই তা এখানে প্রমাণিত।বিজ্ঞানীদের অনেকেরই মনে এই ধর্মীয় গোঁড়ামি হয়ত ছিল।অন্ততঃ আইনস্টাইনের নিজের ছিল।তাই তাঁর নিজের তত্ত্বের মধ্যে অযৌক্তিকভাবে মহাজাগতিক ধ্রুবক ঢুকিয়ে উনি প্রসারণশীল বিশ্বের ধারণা অস্বীকার করতে চেয়েছিলেন যতদিন না বিজ্ঞানী এডউইন হাবল পর্যবেক্ষণ দ্বারা প্রসারণশীল বিশ্বের ধারণা প্রমাণ করেন।ধর্ম চিরকালই মুক্তচিন্তাভাবনা বন্ধ করতে চেয়েছে।এক্ষেত্রে তার প্রভাব থাকতেই পারে।
আর বিশেষ আপেক্ষিকতা তত্ত্ব থেকে সাধারণ আপেক্ষিকতা তত্ত্বে উত্তরণ সেও তো মহাকর্ষকে ব্যাখ্যা করতে বিশেষ আপেক্ষিকতা তত্ত্বের ব্যর্থতার জন্য। বিজ্ঞানে সমস্ত তত্ত্বই ততক্ষনই ঠিক যতক্ষন পর্যন্ত সেই তত্ত্বদ্বারা সংশ্লিষ্ঠ সবঘটনাকে ব্যাখ্যা করা যায়।যখনই লক্ষঘটনার ক্ষেত্রে ঠিক প্রমাণিত হওয়ার পর যদি একটি ক্ষেত্রেও বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব একটি ক্ষেত্রে ব্যাখ্যা দিতে অপারগ হয় তবে সেটি ভুল প্রমাণিত হয়। যেমন করে তত্ত্ব আবিষ্কারের প্রায় তিনশত বছর পরে নিউটনের মহাকর্ষ সূত্র ভুল প্রমাণিত হয়েছে আপেক্ষিকতাতত্ত্বের আগমণের পর । কাজেই কোন কাজের জন্য নোবেল প্রাইজ দিতে হলে নোবেল কমিটিকেও অনেককিছূ বিবেচনা করতেই হয়।এরজন্য রাদারফোর্ডয়ের মত বিজ্ঞানীর কাছেও নোবেল প্রাইজ অধরা থেকে গেছে।
আর 1919 সালে হওয়া যে সূর্যগ্রহনের সময় আর্থার এডিংটনের নেতৃত্বে পূর্ব আফ্রিকায় আলোর সূর্যের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় বঙ্কিমগতি হওয়ার প্রমাণ হিসাবে সর্বজনবিদিত তা যে ভুল পরীক্ষা ছিল তা প্রমাণ হয়ে গেছে।ঐ পরীক্ষা থেকে প্রাপ্ত তথ্য পরবর্তীকালে বিশ্লেষন করে দেখা গেছে যে নয় তারা ভুল তথ্য থেকে ভাগ্যবশতঃ ঠিক ফল পেয়েছেন আর নয়ত ফল সম্বন্ধে তারা এত নিশ্চিত ছিলেন যে সেই বিশ্বাসই তাদের ভুল করিয়েছে।
বুধগ্রহের কক্ষপথের বিচ্যুতি কেবল বিরাট ভারী বস্তুর পার্শ্ববর্তী স্পেসের দুমড়ে যাওয়া থেকেই ব্যাখ্যা করা যায়। এই স্পেসের দুমড়ে যাওয়া কেবল সাধারণ আপেক্ষিকতা তত্ত্বদ্বারাই ব্যাখ্যা করা যায়। স্পেস-টাইম কোয়ার্ডিনেটের প্রতি বিন্দুতে ভর এবং শক্তির সমানভাবে উপস্থিতি কেবল সাধারণ আপেক্ষিকতা তত্ত্ব থেকেই পাওয়া যায় ।অন্যকোন তত্ত্বদ্বারা বুধের কক্ষপথের বিচ্যুতি ব্যাখ্যা করা যায় না।কিন্ত মহাবিস্ফোড়ণের পরে সেকেন্ডের ভগ্নাংশ পরিমান সময় পর্যন্ত আইনস্টাইনের তত্ত্ব সব ব্যাখ্যা করতে পারলেও ঠিক মহাবিস্ফোরণের সময় বা সিন্গুলারিটিতে এই তত্ত্ব ব্যর্থ।কাজেই এই তত্ত্বের উপরও বিজ্ঞানীরা এখনও কাজ করে চলেছেন কোয়ান্টাম গ্র্যাভিটী বা স্ট্রিং থিয়োরি ধরনের কোন তত্ত্বের জন্য যা বৃহৎ এবং ক্ষুদ্র দুই বস্তুর ক্ষেত্রেই সমানভাবে প্রযোজ্য হবে।এটাই পদার্থবিদদের কাছে নতুন চ্যালেঞ্জ।