• Uncategorized
  • 0

সম্পাদিকা উবাচ

বরাবরই প্রথম বিশ্বের দেশগুলোকে আমরা অনুকরণ বা অনুসরণ করে থাকি৷ তথাকথিত কোন লিখিত নিয়ম নেই, তথাপি এই অন্ধ অনুকরণের কারণ খুঁজতে গেলে ২০০ বছরের ইংরেজদের গোলামির সময়কালকে কবর খুঁড়ে বের করতেই হয়৷ কারণ ঐ সময়েই মানুষের শিরদাঁড়াটা ভেঙ্গে গুড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল৷ হয় অর্থের লোভ দেখিয়ে না হলে ক্ষমতার লোভ দেখিয়ে৷ কারোর যশ আছে অর্থ দরকার, কারোর অর্থ আছে যশ দরকার, কারোর যশ আছে আরও যশ দরকার,কারোর অর্থ আছে আরও অর্থ দরকার৷ সুতরাং প্রতিটি মানুষের দূর্বলতা আছে, তাকে টোপ দেওয়ার মত অনুষঙ্গও তাই রয়েছে৷ ইংরেজরা সেই কাজটিই চাতুর্যতার সঙ্গে করেছে নিপুণ ভাবে৷ চাহিদা অনুযায়ী চার সাজিয়ে টোপ তৈরি করত তারা আর শিকার হা মুখ করে সে টোপ গিলেও নিত৷
সেই তবে থেকে প্রথম বিশ্বকে স্বর্গ আর প্রথম বিশ্বের মানুষ জনকে সেই স্বর্গের দেবতা ভাবার মূর্খামি করতে শুরু করেছি আমরা৷ তাদের সব উত্তম, সব সব ক্ষেত্রেই সঠিক এবং অনুকরণ তথা অনুসরণ যোগ্য৷ ফরাসি জনতত্ত্ববিদ ও ইতিহাসবিদ আলফ্রেড সউভির, ১৯৫২ সালের ১৪ আগস্ট ফরাসি ম্যাগাজিন L’Observateur-এ তিনি এই পরিভাষাটি অর্থাৎ তৃতীয় বিশ্বের দেশে কথাটির প্রথম ব্যবহার করেন। আজ সেই সব তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোর মধ্যে থেকে বহু দেশ শিল্প সংস্কৃতি সাহিত্য বিজ্ঞান বিভিন্ন ক্ষেত্রে উল্ল্যেখ যোগ্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে৷ তাই বোধহয় কিছুটা ক্ষমাঘেন্নার চোখে, কজ্জল ভাষায় developing বা উন্নয়নশীল শব্দটির ব্যবহার চলছে রমরমিয়ে৷ এখন বিড়াল কবে বাঘে পরিণত হবে, তারই অপেক্ষায়৷ দেখি আর কত সহস্র পেরবে ললিপপ চুষে চুষে ৷
কিন্তু সব গননা, নামকরণ, সাফল্যকে নির্মম হাতে কার্যত ধুয়ে মুছে দিয়েছে কোভিড৷ আমরা দেখেছি ইউরোপ ইতালি অষ্ট্রেলিয়ার মত প্রথম বিশ্বের দেশগুলো মুখ থুবড়ে পড়েছে৷ আমেরিকা ইতালির প্রায় ৫০% মানুষ নিশ্চহ্ন হয়েছে কোবিড অতিমারীর প্রকোপে৷ প্রায় মৃত নগরীরতে পর্যবসিত হয়েছিল এই দুটো দেশ৷ এই প্রথম বিশ্বের উন্নত দেশগুলোও কিন্তু তার উন্নত টেকনলজি উন্নত চিকিৎসা ব্যাবস্থা স্বত্বেও একেবারে গো হারান হেরে গিয়েছিল ৷ হালে পানি পায়নি৷ আমার দেশেরও প্রচুর মানুষ মারা গেছে করোনার দুটো ঢেউয়ে৷ যে কোন মৃত্যুই বেদনাদায়ক৷ তবে সংখ্যা তত্ত্বের বিচারে এটা আমাদের অবশ্যই নজর করা উচিত ভারতবর্ষের লোকসংখ্যার নিরিখে কোভিডে মৃত্যুর শতাংশ অন্য আরও পাঁচটা প্রথম বিশ্বের দেশের থেকে অনেক কম৷ কারণ সেই সমস্ত দেশের লোকসংখ্যা ভারতবর্ষের লোকসংখ্যার থেকে অনেক কম৷
ভারতবর্ষের মানুষ প্রথম বিশ্বের মানুষদের মত অতটা অতিআধুনিক মানসিকতার নয়৷ তাদের এই তুলনামূলক সাদামাঠা ছাপোষা জীবন যাত্রা, অবাধ যৌনতার প্রতি খানিক রক্ষণশীল মনোভাবই হয়ত ভারতবর্ষের মানুষকে এ যাত্রায়, জনসংখ্যার নিরিখে কোভিডে মৃত্যুর শতাংশের ভিত্তিতে যে হার তা, অনান্য প্রথম বিশ্বের দেশগুলোর তুলনায় অনেক কম৷ এই একটা জায়গায় পিছিয়ে পড়া মানসিকতার জন্য কিছুটা হলেও একটা ধন্বাতক ফলাফল পাওয়া গেছে৷ অবাক হয়ে গেলাম ইউরোকাপের ফাইনালের দিন৷ এক বছর আগে এই দেশগুলোর মৃত্যু মিছিল দেখে আমাদের গা শিউরে উঠেছিল, কত যে পরিবার শেষ হয়ে গেছে, কত মানুষ স্বজন হারা হয়েছে, তার যে সত্যিই কোন হিসাব রাখা সম্ভব নয়! অথচ যখন W.H.O ঘোষণা করছে করোনার তৃতীয় ঢেউয়ের কথা তখন ফাইনালের দিন হাজার হাজার মানুষ চরম উল্লাসে মেতেছে, তাদের না আছে একজনের মুখেও মাস্ক, না আছে শারীরিক দূরত্ব ! দেখে আঁতকে উঠেছিলাম৷
এদের দেখে আমার সেইসব ছাত্রছাত্রীদের কথা মনে হয়, যারা পড়াশোনায় তুখোড় অথচ অহংকার আর দম্ভে সর্বদা বুঁদ হয়ে থাকে৷ ভারতবর্ষের মানুষ অনেক সচেতন ৷ শুনতে অবাক লাগলেও দ্বিতীয় ঢেউ দেখার পর ঘটনাটা তাইই৷ আমি না পরিসংখ্যান বলছে৷ বিশ্বাস করুন খুব কম সংখ্যার মানুষ Rare species, হ্যাঁ বিরল প্রজাতির, যারা মাস্ক পড়ে না, নিরুপায় না হলে সব সময় শারিরীক দূরত্ব বজায় রাখতে চেষ্টা করে বেশির ভাগ মানুষ৷ আমরা ভারতবর্ষকে জগৎ সভার শ্রেষ্ঠ আসনে বসাতে চাই, তবে তার আগে ভারতের প্রতিটা নগরিককে করোনার তৃতীয় ঢেউ থেকে বাঁচাতে চাই৷
খুব সাবধানে থাকুন, করোনার তৃতীয় ঢেউকে রুখতেই হবে৷ তার সাথে অবশ্যই লিখতে থাকুন এবং পড়তে থাকুন ৷

রাজশ্রী বন্দ্যোপাধ্যায়

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।