নভেলা গল্প হলেও সত্যি-তে রাজদীপ ভট্টাচার্য – ধারাবাহিক (রু)

তৃতীয় পর্ব

রেমির সাথে ফোনে কথা হওয়ার পরে দুটো সপ্তাহ পেরিয়ে গেছে। অবশ্য মাঝে আর একবার ফোন করেছিল পলাশ। ইন্দ্রাণী সুস্থ হয়ে উঠেছে তখন। দুজনের সঙ্গেই অনেকক্ষণ কথা হয়েছিল। তার দিন তিনেক পরেই শুনল কোলকাতা থেকে অভ্র দা’রা গাড়ি নিয়ে শান্তিনিকেতন আসছে। ওদের প্রান্তিক স্টেশনের কাছে একটা আবাসনে ফ্ল্যাট নেওয়া আছে। ওখানেই উঠবে। শনিবার রাত কাটিয়ে রবিবার বিকেলে আবার ফিরে যাবে। শোনা মাত্রই ওদের দলে ভিড়ে গেল পলাশ।

শনিবার বিকেলে মাঠপুকুর বাসস্টপ থেকেই উঠে পড়ল স্করপিওতে। পলাশকে নিয়ে দলে ছয়জন। রেমিকে আগে ফোন করেনি একটা চমক দেবে বলে। কিন্তু প্রান্তিকে ঢুকতে ঢুকতে সন্ধে গড়িয়ে গেল। তাই আজ আর খোয়াই-এর দিকে যাওয়া হল না। রাতে খেয়ে উঠে সামনের লনে গার্ডেন চেয়ার পেতে আড্ডা জমে উঠল। গ্লাসে গ্লাসে নেশা। অর্ধেক রাত কাবার করে তবে বিছানায় গেলো সব্বাই।

সাড়ে আটটা নাগাদ ঘুম ভাঙলো। অবশ্য দলের দুজন মহিলা পাশের ঘরে বেশ আগেই উঠে পড়েছে। অভ্র দা’র বউ অনুরাধা পলাশের বয়সী। ও আর ওর বোন স্নান সেরে রেডি। বাকিরা এখনো বিছানায়। ফ্রেস হয়ে অনুরাধাকে বলে বেরিয়ে পড়ল পলাশ। গোয়ালপাড়া মোড়ে টোটো থেকে নেমে এক কাপ চা খেয়ে একটা সিগারেট ধরিয়ে নিলো। রেমিরা চলে এসেছে নিশ্চয়ই। হেঁটে গিয়ে ঢুকল স্টুডিওতে।

রেমি একাই কাজ করছিল ভিতরে। পলাশ ঢুকে আর কেউ নেই দেখে জিজ্ঞেস করল — একা যে! আরেক শালিক কোথায়?

— আরে পলাশ এ সময়! ইন্দ্রাণী এখন তিন চার দিন আসবে না। একাই চালাতে হবে ব্রাদার।

— আবার কী হল! শরীর খারাপ?

— না না। ও আসলে কার্শিয়াং গেছে।

— আরেব্বাস। কার্শিয়াং! ঘুরতে? তা তুমি গেলে না?

— না হে। ঘুরতে নয়। তুমি মৃত্তিকার কথা আগে শোননি তাই। ইন্দ্রাণীর মেয়ে। ও সেখানেই পড়ে। মাঝে মাঝে ইন্দ্রাণী গিয়ে দু’এক দিন থেকে আসে।

— ও আচ্ছা। কোন ক্লাসে পড়ে?

— ক্লাস সেভেন। তা তুমি কি ডাইরেক্ট মাঠপুকুর থেকে আসছ এখন?

— না। গতকাল রাতে এসেছি। প্রান্তিকের কাছে বন্ধুদের সাথে আছি।

— বাহ, ভালোই আছ হে। একেবারে উড়ে উড়ে বেড়াচ্ছ। কতদিন থাকবে?

— আজ বিকেলেই ফিরব। তাই একবার দেখা করে গেলাম তোমার সাথে।

রেমির নতুন আঁকাগুলো দেখতে দেখতে মোবাইলে ফোন এলো। অভ্র দা দলবল নিয়ে বেরিয়ে পড়েছে। টিফিন করেই কঙ্কালীতলা যাবে। রেমি আবারও অনেকবার মহুলিতে যাওয়ার কথা বলল। যাবো যাবো করতে করতে দৌড়ে পথে নামল পলাশ। ভেবেছিল একবার রেমিকে জিজ্ঞেস করবে যে ওর নিয়ে যাওয়া ছবির মডেল কি ইন্দ্রাণী? কিন্তু জিজ্ঞেস করতে কোথাও বাধল। তাই আর জানা হল না।

★★★

শেষ অবধি আসা হয়েই গেল মহুলিতে। এরমধ্যে ফোনে অনেকবার কথা হয়েছে রেমি আর ইন্দ্রাণীর সাথে। সামান্য কিছুদিনের চেনা, অথচ ওদের সাথে কথা যখনই হয় মনে হয় যেন বহু বছরের বন্ধুত্ব। ভারি আন্তরিক দুজনেই। তাছাড়া এই বন্ধুবান্ধবহীন দেশে ওদের উষ্ণতা আরও প্রেয় হয়ে ওঠে পলাশের কাছে। তাই সোমবার একটা ছুটি থাকায় কোনো খবর না দিয়েই শনিবার বিকেলে বাসে চড়ে বসল পলাশ।

অজয়ের ব্রিজ পেরিয়েই নেমে পড়া। তারপর ভ্যানে মিনিট পনেরো গেলেই ছোট্ট গ্রাম মহুলি। একেবারে অজয় নদীর পাড়ে। ভ্যানওলাকে দুজনের নাম বলতেই বলল– বুঝেছি, আর্টিস্ট দাদা আর দিদিমনির বাড়িতে যাবেন তো। উঠে বসেন। আমি নিয়ে যাচ্ছি। ব্যাস, দুপাশে চাষের ক্ষেত পার করে দু’চারটে গ্রাম্য বাড়িঘর ছুঁতে ছুঁতে পোঁছে গেল রেমির দোতলা অট্টালিকার সামনে।

আর্টিস্টদের বাড়ি তা দেখলেই বেশ বোঝা যায়। সদর দরজার উপরে বৌদ্ধ সংঘের মতো অর্ধবৃত্তাকার ডিজাইন। বাড়ির প্রতিটি জানলা – দরজার সানসেটে শান্তিনিকেতনী নক্সার ছাপ। উঠোন পেরিয়ে খোলা দরজার কড়া ধরে নাড়া দিলো পলাশ। একটু অপেক্ষার পরে খালি গায়ে এক বয়স্ক পুরুষ এসে দেখা দিলো – কারে চান?

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *