২৯-৩০ দিন পর্যন্ত চলে রমজান মাস। এই একমাস সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত উপবাস বা রোজা রাখেন ধর্মপ্রাণ মুসলিমরা। ইসলাম অনুযায়ী, হজরত মহম্মদ যখন কুরান সৃ্ষ্টি করেন তখন থেকেই রমজান মাস পালন হয়। চাঁদ দেখা দেওয়ার পর শেষ হবে রমজান মাস, পালিত হবে ঈদ। প্রচণ্ড গ্রীষ্মে রমজান পালিত হয়। অ্যারাবিক ভাষায় রমজান কথাটি এসেছে রামিদা থেকে, যার অর্থ প্রচণ্ড গরম। রমজান মাস চলে ৭২০ ঘণ্টা ধরে, যা হল চার সপ্তাহ ২ দিন। গুরুতর অসুস্থ, বৃদ্ধ, গর্ভবতী মহিলা ছাড়া প্রাপ্তবয়স্ক সব মুসলিমকেই রমজান মাসে রোজা রাখতে হয়। ঈদের অর্থ ধৈর্য্য, ভক্তি, দয়া ও সহ্য ক্ষমতার উদযাপন। নতুন জামাকাপড় পরে এই দিনটা পরিবারের সঙ্গে কাটান মুসলিমরা। এছাড়া ঈদের দিনে দরিদ্রদের খাদ্যদ্রব্য দান করারও রীতি রয়েছে।
এই ঈদ উৎসবের কী ভাবে প্রচলন হয়েছে তার ইতিহাস ও তথ্য সঠিক ভাবে আজও জানা যায়নি। নানা ইতিহাস গ্রন্থ ও ঐতিহাসিক সূত্র ও তথ্য থেকে রোজাপালন এবং ঈদ-উল-ফিতর বা ঈদ-উল-আজহা উদযাপনের যে ইতিহাস জানা যায় তাতে ১২০৪ খৃস্টাব্দে বঙ্গদেশ মুসলিম অধিকারে এলেও নমাজ, রোজা ও ঈদোৎসবের প্রচলন হয়েছে তার বেশ আগে থেকেই। বঙ্গদেশ যুদ্ধবিগ্রহের মাধ্যমে মুসলিম অধিকারে আসার বহু আগে থেকেই মধ্য ও পশ্চিম এশিয়া থেকে মুসলিম সুফি, দরবেশ ও সাধকরা ধর্ম-প্রচারের লক্ষ্যে উত্তর ভারত হয়ে পূর্ব-বাংলায় আসেন। অন্যদিকে আরবীয় এবং অন্যান্য মুসলিম দেশের বণিকেরা চট্টগ্রাম নৌবন্দরের মাধ্যমেও বাংলার সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক স্থাপন করেন। এভাবেই একটা মুসলিম সাংস্কৃতিক তথা ধর্মীয় প্রভাব যে পূর্ব-বাংলায় পড়েছিল। তবে মুঘল যুগে ঈদের দিন যে হইচই বা আনন্দ হতো তা মুঘল ও বনেদি পরিবারের উচ্চপদস্থ এবং ধনাঢ্য মুসলমানদের মধ্যে কিছুটা হলেও সীমাবদ্ধ ছিল। তার সঙ্গে সাধারণ মানুষের কিছু দূরত্ব ছিল।
আবার অন্য মতে – এই উৎসবের সূচনা করেছিলেন ইসলামের নবী হজরত মহম্মদ। মক্কা থেকে মদিনায় শরণ নেওয়ার পর মনে করা হয়, এই রীতি শুরু হয়। ইদ উল-ফিতর মানে হল উপবাস বা রোজা ভঙ্গ করা। এই দিনে পরম ঈশ্বর আল্লাকে মানুষ যা কিছু পেয়েছে তার জন্য কৃতজ্ঞতা জানান। এটা বিশ্বাস যে, আল্লা মুসলিমদের নির্দেশ দেন রমজানের শেষদিন পর্যন্ত উপবাস বা রোজা রাখার জন্য।
পবিত্র ধর্মগ্রন্থ কোরান অনুসারে, পুণ্যার্থীদের অবশ্যই ইদের নমাজের আগে জাকাত উল-ফিতর দিতে হবে। প্রথা অনুযায়ী, ইদ শুরু হয় সূর্যাস্তের পর রাতে পবিত্র চাঁদ দর্শনের পর। রমজান মাসের ২৯তম দিনের পর যদি আকাশে পবিত্র চাঁদের দর্শন না হয় তাহলে তার পরের দিন ইদ পালিত হয়। ঈদের দিন রোজা রাখা নিষিদ্ধ। এদিন সবাই লাচ্ছা বা সিমাইয়ের মতো সুস্বাদু খাবার বানান।
যেভাবেই হোক মোদ্দাকথা খুশির ঈদে আমার সকল সুহৃদদের জন্য অকুণ্ঠ শুভেচ্ছা ভালোবাসা ৷
একইসঙ্গে আজ অক্ষয় তৃতীয়াও৷
বৈশাখ মাসের শুক্লপক্ষের তৃতীয়া তিথিতে পালিত হয় অক্ষয় তৃতীয়া। এই দিনটি কিছু কেনাকাটা করার জন্য শুভ বলে বিবেচিত। অনেক জায়গায় অক্ষয় তৃতীয়া আখা তিজ নামেও পরিচিত। হিন্দু সম্প্রদায় ছাড়া জৈনরাও এই দিনটি পালন করেন
মনে করা হয় অক্ষয় তৃতীয়ায় বিষ্ণুর দশম অবতার পরশুরামের জন্ম হয়। অক্ষয় তৃতীয়া থেকেই সত্য যুগের অবসান ও ত্রেতা যুগের শুরু হয়। অক্ষয় তৃতীয়ায় শ্রীকৃষ্ণের বন্ধু সুদামা তাঁকে অন্ন ভোগ দেন। তার পরিবর্তে কৃষ্ণ তাঁর এই প্রিয় বন্ধুকে সুখ ও সমৃদ্ধির আশীর্বাদ করেন। মহাভারত অনুসারে বনবাসে থাকাকালীন অক্ষয় তৃতীয়াতেই শ্রীকৃষ্ণ দ্রৌপদীকে অক্ষয়পাত্র দান করেন। যাতে বনবাসে তাঁদের কখনোও খাদ্যাভাব না হয়। অক্ষয় তৃতীয়া থেকেই বেদব্যাস মহাভারত লেখা শুরু করেন। অক্ষয় তৃতীয়াতেই ভগীরথের প্রার্থনায় স্বর্গ্য থেকে মর্ত্যে নেমে আসেন গঙ্গা। পুরীতে জগন্নাথের রথযাত্রার জন্য রথ তৈরি শুরু হয় অক্ষয় তৃতীয়া থেকেই। প্রচলিত বিশ্বাস অনুসারে এই দিন কারও মৃত্যু হলে তাঁর অক্ষয় স্বর্গপ্রাপ্তি ঘটে। এদিনই কুবেরের তপস্যায় তুষ্ট হয়ে মহাদেব তাঁকে অতুল ঐশ্বর্য প্রদান করেছিলেন।এ দিনেই কুবেরের লক্ষ্মীলাভ হওয়ায় বৈভব-লক্ষ্মীর পূজা করা হয়।
মনে করা হয় অক্ষয় তৃতীয়ায় সোনা বা রূপো কেনা অত্যন্ত শুভ। এদিন সোনা বা রূপো কিনলে লক্ষ্মীর আশীর্বাদ লাভ করা যায় বলে প্রচলিত বিশ্বাস। এদিন সোনা কিনলে পরিবারে সুখ-সমৃদ্ধি বৃদ্ধি ঘটে। এদিন থেকে নতুন ব্যবসা শুরু করলে তা লাভজনক হবে বলে মনে করা হয়। এছাড়া অক্ষয় তৃতীয়ায় গৃহপ্রবেশ করা, দানধ্যান করা, গরুকে খাওয়ানো শুভ কাজ বলে মনে করা হয়। পুরাণ মতে, অক্ষয় তৃতীয়া তিথিতে সমস্ত পাপ নাশ এবং সমস্ত ধরণের সুখ লাভ করা যায়। এদিন কোনও দান-পুণ্য করলে তার ফল অক্ষত থাকে।
এ বারের ভয়াবহ করোনা পরিস্থিতিত দূরত্ব বজায় রেখে ছোট ছোট অংশে বিভক্ত হয়ে ইদের নমাজ পড়া হয় নাখোদা মসজিদে।
অন্যদিকে অনাড়ম্বরে নিয়মরক্ষার খাতিরে পালন হল অক্ষয় তৃতীয়া। কালিঘাটে করোনাকালের নিয়ম মেনেই পুজো অর্চনা হয়।
জোড়া উৎসবের যুগলবন্দির খুশিতে হিন্দু-মুসলমান এক সঙ্গে মেতে উঠতে পারতেন। তবে উৎসবের আঙিনায় না হলেও আমরা একে অপরের সঙ্গে হৃদয়ের বন্ধনে আবদ্ধ, তার প্রমাণ আজকের দিনটা৷