সাপ্তাহিক ধারাবাহিকে রাজশ্রী বন্দ্যোপাধ্যায় (পর্ব – ১১)

পিরিচ পেয়ালার ও একটি সন্ধ্যা
পিরিচ পেয়ালার ঠুংঠাং- এ ভরে ওঠে সন্ধ্যা, সাথে ভীমসেন মেজাজী আড্ডা৷ কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারী কচ্ছ থেকে কোহিমা গোটা ভারতটা ঘুরে ফেলি কিংবা বলা কি যায় গোটা পৃথিবীটাই হয়ত ঘুরে ফেলি আমরা আড্ডা দিতে দিতে৷ আর বিষয়? সম্পর্ক থেকে রসায়ন, রাজনীতি থেকে সংস্কৃতি কোন বিষয়ে আলোচনা হয় না বলুন তো এই আড্ডায়! যেন বিশ্বব্রহ্মাণ্ড বারেবারে ধরা পড়ে পিরিচ পেয়ালার এই সন্ধ্যার আড্ডায়৷
তেমনই এক সন্ধ্যায় জীবন বোধকে নিয়ে বাঁধল গোল৷ কোনটা ভুল আর কোনটা অন্যায় তাই নিয়ে চলল বিস্তর তর্ক৷
একেবারে চুলচেরা বিচার৷ নিত্তি মেপে এগানো৷ সমানুপাত ব্যস্তানুপাত কিছু কি বাকি থাকল? আমার আবার হিসেব কষাকষির এমন বহর দেখলে কেশব চন্দ্র নাগের কথা ভারি মনে হয়৷ আর ঐ বাঁদরটার কথা
তেল মাখা ডান্ডায় কিছুটা উঠছে আবার স্লিপ করে ততটাই নেমে আসছে৷
আত্মলোপ অঙ্গীকারে জীবনের গ্রাস মুখে তুলিনি ৷ মৃত্যুর প্রতি নৈকট্য অনুভব করি বারবার ৷ গর্ভিণী ইচ্ছেগুলোর শ্বাসরোধ করে পৃথিবীর সাত ভাগ জলের নিবিড় গর্ভগৃহে পুঁতে এসেছি কবেই ৷ প্রেমের আর্দ্রতা কুমুদিনী করে না আমাকে ৷ জ্বলন্ত অঙ্গার মারিয়ে অনন্তের পথে হেঁটে যাই ৷ ক্লান্তিহীন জঙ্গম জীবন নিয়ে অনায়সে বারোয়ারি নলকূপে ধুঁয়ে নিই ভালোবাসার স্ফটিক স্বাদ ৷ রক্তের ফোঁটা ফোঁটা বুদ্বুদে সন্ধ্যা নামে ৷ আমি যন্ত্রণার মরিচগুলো ডলে নিই জন্মান্তরের আলপথে ৷ প্রতিটি জন্মে উদবাস্তু আগুনকে বুকে জড়িয়ে খান্ডব দহনে মাতি ৷ প্রেমের কুসুমভার জ্যোতির্ময় করে না আমায় ৷ পাঁজরের ফাঁকে-ফাঁকে , জ্বলতে থাকা তুষের আগুন, জাতিস্মরের গল্প শোনায় ৷
সেই গল্পগুলো কখনও মণিমাণিক্যের মত ভেসে বেরায় তরঙ্গের সাথে, কখনও আবার জোনাকির মত উড়ে যায় তারা অরণ্যের দিকে৷ অরণ্য আলোকিত হয়৷ অধরাকে ধরার নেশা যাবৎ জীবনের আকাঙ্ক্ষা৷ যা কিছু নাগালের বাইরে হাতের পাঁচ আঙ্গুলের মধ্যে ধরার বাসনা আজীবন থেকে যাবে৷ অঙ্গীকার করেছি আর ভেঙ্গেছি আত্মানুসন্ধানে৷ তুমি আমি সকলেই স্বার্থের দাসত্ব করি৷ অসম্ভবকে পাওয়ার মোহে অনাবিল চক্রাকারে যাওয়া আসার খেলার আমরা সবাই পাকা গোলন্দাজ৷
তাই চাঁদের পাহাড়ের দিকে বরাবর হেঁটে গেছি আমরা৷ আশ্বর্য স্ফটিক দেখে হীরে ভেবে ভুল করেছি৷ মরিচীকা দেখে ছুটে গেছি জলের আশায়৷ হাঁসের মত জীবন চেয়েও, সন্দেহবশে দুধ ফেলে জল পান করেছি৷ জিঘাংসা পুষে রেখে শুধু মুঠো ভরা ছাই জোটে৷ অশনি সংকেত কেবল তারাই বোঝে যাদের আবেগের রঙ গেরুয়া, চোখের জল বেগুনি আর মৃত্যুর রঙ টাটকা সবুজ৷
আসছে সপ্তাহে আমাদের সন্ধ্যার আড্ডায় আবার কী নিয়ে দক্ষযজ্ঞ বাঁধে দেখি! চিন্তা করবেন না, একেবার সেই বিষয়টা নিয়েই চলে আসব আগামী সপ্তাহে ” পেয়ালা পিরিচ ও একটি সন্ধ্যা”-র পরের পর্বে৷ ভালো থাকুক সকলে৷
*বিঃদ্রঃ পেয়ালা পিরিচ সহযোগে সন্ধ্যায় আপনিও জমিয়ে আড্ডা মারুন।