• Uncategorized
  • 0

Quick bite – প্রাপ্তি রায়

লকডাউন- আমি ও আমার বন্ধু

এই ঘটনাটা একদম সত্যি। আমার এক বান্ধবী আছে, তার নাম প্রিয়া। সে আমার ক্লাসেই পড়ে কিন্ত আমাদের স্কুল আলাদা। প্রিয়ারা খুবই গরীব। ওর মা লোকের বাড়িতে কাজ করতেন, রান্না করতেন, এখনও করেন। ওরা এত গরীব যে রোজরোজ ওদের ঠিকমতো খাওয়া জুটতো না। আর পিয়ার স্কুলের টিফিন, সেটার কথা তো ছেড়েই দিলাম। প্রিয়ার বাবাও ছিলোনা। খুবই কষ্ট ওদের। এখন লকডাউন, সারা ভারতবর্ষে পরিস্থিতি খুব খারাপ। শুধু ভারতবর্ষ কেন, কোরোনার ভয়ে সমগ্র বিশ্ব ভীত। ঠিক এমন সময়ে প্রিয়াদের বাড়িতে খবর এলো যে প্রিয়ার মা যে বাড়িতে কাজ করতো, সেই বাড়ির দিদা বলেছে যে আগামী দু মাস কাজে আসতে হবেনা। এই শুনে প্রিয়ার মায়ের সে কি কান্না! তিনি খালি বলতে লাগলেন যে ‘সর্বনাশ হয়ে গেলো গো, এবার আমরা কি খাবো, বাড়িতে তো কোনো খাবারই নেই’। সমানে কেঁদেই যাচ্ছেন। সেই দেখে প্রিয়া খুব মুষড়ে পড়লো। এরপর কিছুদিন তারা এভাবেই না খেয়ে, আধপেটা খেয়ে কাটিয়ে দিলো। একদিন প্রিয়া ভাবলো এরকম করে আর কতদিন চলবে? হঠাৎ করে তার মাথায় একটা বুদ্ধি এলো: সে ওই দিদার বাড়িতে গেলো যেখানে তার মা কাজ করতেন। সেখানে গিয়ে সে দিদাকে বললো, ‘আমাকে কিছু টাকা দিতে পারো? তোমরা তো মাকে এই বাড়িতে আসতে বারণ করে দিয়েছো, তো মা যদি বাড়িতেই রান্না করে তাহলে ঠিক আছে তো?’ দিদা বললেন, ‘সে ঠিক আছে, কিন্ত সেই রান্না নিয়ে আসবে কে?’ প্রিয়া তখন বললো, ‘সে আমিই নিয়ে আসবো, তুমি শুধু রান্নার জিনিসপত্র কেনার জন্যে আমায় কটা টাকা দাও, আমি কিনে নিয়ে যাচ্ছি।’ এরপর দিদা তাকে টাকা দিলেন, আর তারপর থেকে প্রিয়া তাদের বাড়িতে রান্না হওয়া খাবার দিয়ে আসতে শুরু করলো। হঠাৎ একদিন এক প্রতিবেশী প্রিয়াকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘হ্যাঁ রে, তোকে রোজ দেখি রান্না নিয়ে কাদের বাড়িতে দিয়ে আসিস, তোর স্কুল নেই? ‘তখন প্রিয়া বললো, ‘এখন তো ছুটি।’ তারপর প্রিয়া তাকে সব ঘটনা বললো। উনি বললেন, ‘আচ্ছা তুই আমাদের বাড়িতে রান্না দিতে পারবি?’ প্রিয়া খুব উৎসাহের সাথে ‘হ্যাঁ’ বললো। এরপর থেকে প্রিয়া চারটে বাড়িতে রান্না দিয়ে আসতে লাগলো আর তারপর থেকে আর দারিদ্রে ভুগলোনা। এখন যত ভয়ঙ্কর পরিস্থিতিই হোক না কেন, আমরা যদি সবসময় একে ওপরের পাশে থাকি তাহলে কোনো কোরোনাই আমাদের কিছু করতে পারবেনা। এবং আমার ধারণা, সত্যি হয়তো ‘ঝড় থেমে যাবে একদিন।’

 

প্রাপ্তি রায়
সপ্তম শ্রেণী, স্প্রিংডেল হাই স্কুল কল্যাণী
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।