• Uncategorized
  • 0

সাপ্তাহিক ধারাবাহিক কথা সাগরে পিয়াংকী (পর্ব – ১৩)

স্টেশন থেকে সরাসরি

ইংরেজি ১৯শে জুলাই ২০২১
বাংলা ২রা শ্রাবণ ১৪২৮
সোমবার

শ্রাবণ মাস এসে গেল। গাছের পাতায় জলের ফোঁটা। গাছের নীচে জমাট লাল পিঁপড়ে, ভেজা স্যাঁতসেঁতে মাটি, পঞ্চাশ বছর পুরোনো পাঁচিলের গায়ে শ্যাওলা, শ্রাবণ এলেই যারা তরতাজা যুবকের মত ঘন সবুজ হয়ে ওঠে। আমি স্টেশনের দিকে পা বাড়াই। ট্রেন ধরার তাড়নায় দু’চোখ ভরে দেখতেও পারি না ঋতুর অমোঘ এই চক্র।
অদৃশ্যতা বড় প্রয়োজন, মনের ভেতরঘরে যে দরজাটা টোকা দিয়ে পালিয়ে যায় কিছুদিন অন্তর তাকে আমি অভাব বলে ডাকি। ব্যস্ততার অভাব কিনতে বেরিয়ে প্রকৃতিকেই চিৎকার করে মা বলে ডাকতে ইচ্ছে করে,প্ল্যাটফর্ম জংশন স্টেশন সব কেমন শিথিল হয়ে পড়ে আছে, গায়ে গায়ে ঘেঁষাঘেঁষি নেই, দোমড়ানো মোচড়ানো তাড়াহুড়ো নেই।প্ল্যাটফর্মের ছোট্ট ঘুপচি বইয়ের দোকানটা যেখান থেকে অ্যাডাল্ট ম্যাগাজিন কিনেছিলাম প্রথমবার সেটার দেওয়ালে নাক লাগাই,গন্ধ শুঁকি।
মৃত। ঠান্ডা শক্ত সব। হাত সরিয়ে নিই।দৌড়তে থাকি, আমাকে তাড়া করছে কেউ। ইনভিসিবল কিছু। যাকে দেখা ছোঁয়া কিছুই যায় না। মা বলত,” চাইবার আগে পেয়ে গেলে উচ্ছ্বাস চেনা যায় না। তাই তুই চাইলে আমি দু’দশদিন অপেক্ষা করাই, একদিন এই অপেক্ষার অর্থ বুঝবি, সেদিন হয়ত মা আর থাকবে না”। সত্যি। সবটুকু সত্যি। অপেক্ষাকে এখন অভাবের সমার্থক মনে হয়।
পাথরের গায়ে অনামী কিছু ফুল,ঈশ্বরের চরণে অবহেলিত, তাদের সাথে জন্মের মিল খুঁজি।সারাদিন অঢেল সময়।রান্না আঁকা কবিতা লেখা। ফেসবুক ইউটিউব স্ক্রল করা।বিরক্ত হই সবচেয়ে বেশি নিজের সাথে।ছাদের দড়িতে জামাকাপড়। বিকেলে তুলতে গিয়ে দেখি ক্লিপ সমেতই ওরা উড়ছে। বুঝি, নিজের কাছেই আছে শক্তি।ভেতরেই রঙ ঢঙ। নেমে আসি সদ্য কিশোরীর মত সিঁড়ি ভেঙে। ঝপাং ঝপাং শব্দ হয়।শব্দে যে এত মারাত্মক আনন্দ আগে কেন বুঝিনি?শোবার ঘরের দক্ষিণমুখী আয়নার সামনে দাঁড়াই, ভেতর থেকে কে যেন বলে,” তুই খুব সুন্দরী”। হলুদ বিকেল। সন্ধে নেমে আসবে আরেকটু পর।একটা নীলচে বেগুনী রঙের শাড়ি পরি। খোলা পিঠে নক্ষত্র হাঁটে।
আজকাল বলতে ভালো লাগে, আমি ভালো আছি। ভালো থাকা আমার হাতের তালুতে থাকা প্রজাপতির মতো নরম আদুরে টুসটুসে …
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।