ভ্রমণ গদ্যে ডাঃ প্রিয়াঙ্কা মন্ডল

কলকাতার ভিতর এক অন্য কলকাতার ঠিকানা
তিলোত্তমা কলকাতা মহানগরী পশ্চিমবঙ্গ তথা ভারতের অন্যতম ব্যস্ততম শহর। বহুতল বাড়ি, গাড়ির ধোঁয়া দূষণ, হর্ন, লোকজনের ভিড়, ছুটে চলা এসব কিছুই চেনা কলকাতা। এসবের বাইরেও আরো একটা কলকাতা আছে, যেখানে কোনো যানবাহনের আওয়াজ পৌঁছায় না। সেখানে শুধুই পাখির কূজন আর গাছেদের পাতা ঝরার টুপটাপ শব্দ। সেখানে শুধুই একান্তে নিরিবিলিতে গাছেদের পাখিদের সাথে মনের গোপন কথোপকথন চলে।
কি ভাবছেন? আজগুবি কাল্পনিক কিংবা গাঁজাখুরি গল্প লিখছি। না মশাই, একটু ভাবুক প্রকৃতির হলেও মিথ্যে গাঁজাখুরি এসব একেবারে নৈবঃ নৈবঃ চ।
যাই হোক, আর উৎকন্ঠা বাড়াবো না শেষে প্রেসার বেড়ে গেলে মুশকিলে পড়ে যাবেন। জায়গাটা হলো – চিন্তামণিকর বার্ড স্যাংচুরি।
কলকাতার উপকন্ঠে নরেন্দ্রপুর বাইপাসের ধারে এই পাখিরালয়। প্রায় ১৭.১৯ একর বা ৬.৯৬হেক্টর এলাকা নিয়ে এই পাখিরালয়টি গড়ে উঠেছে। বিখ্যাত ভাস্কর শ্রী চিন্তামণিকর মহাশয়ের এর নামে নামাঙ্কিত হয় এই পাখিরালয় ২০০৫ সালে, অতীতে এটি ‘কয়ালের বাগান’ নামে পরিচিত ছিল।
এখানে নানা ধরনের চেনা পাখির সাথে পরিযায়ী পাখিরাও আসে। এছাড়াও প্রজাপতি, ফড়িং, ফার্ন, অর্কিড, এপিফাইট আর বড় বড় বৃক্ষ আছে। এই বড় গাছগুলোই পাখিদের ঘরবাড়ি।একটা গাছ কত কি দেয় সে তো সবারই জানা। এখানে মেটে ফিঙে, কোকিল, দেশি ফিঙে,গো বক,কাঠঠোকরা,ছোট পানকৌড়ি,দাঁড় কাক, ঘুঘু, বুলভুলি, টুনটুনি, বেনে বউ, মৌ-টুসি ইত্যাদি নানা প্রজাতির পাখি, নানা প্রজাতির মাকড়সা দেখা যায়।শিশুদের এই জায়গাটা ভীষণ ভালোলাগবে।শিশুমনের সাথে পাখিদের,গাছেদের পরিচয় ঘটানোর জন্য কলকাতার মধ্যে এরকম জায়গায় অবশ্যই আনা দরকার।
যাই হোক, এবার আসি আমার ভ্রমণ পর্বে, এক শীতের সকালে আধো ঘুমজড়ানো চোখে উঠে পড়লাম, কলকাতার এই অভয়ারন্য তে আসবো বলে। ব্রেকফাস্ট সেরে বেরিয়ে পড়া প্রকৃতির সাথে বন্ধুত্বের জন্য। এখানে এন্ট্রি ফি পঞ্চাশ টাকা। টিকিট কেটে ভিতরে ঢুকে বিশ্বাস হয়নি, কলকাতায় আছি। কোনো কোলাহল নেই, প্রকৃতি এখানে মুক্ত।গাছেদের, পাখিদের সংসারে প্রকৃতি ভীষণ খুশি। সারাদিন ঘুরে ঘুরে পাখিদের গাছেদের সাথে মনের গোপন কথাগুলো বলতে বলতে, সূর্য্য পশ্চিমে চলে গেছিলো। এই সময় রক্তিম আলোয় এই পাখিরালয়ের পাখিরা ও গান গায়। এ এক অদ্ভুত ভালোলাগা, ব্যস্ততার লেশমাত্র নেই। কতো ফটোগ্রাফার একটা চঞ্চল পাখিকে ক্যামেরা বন্দী করার জন্য সারাটা দিন হয়তো কাটিয়ে দিচ্ছেন, এরকম ফটোগ্রাফার এখানে প্রচুর। তবে সময় একসময় শেষ হয়, সময়ের খেয়ালে সবাইকে চলতে হয়, সে ইচ্ছা হোক কিংবা না হোক !
শুধু মনে ভালোলাগার রেশটুকু থেকে যায় অনেকদিন ।
পথ নির্দেশ – শিয়ালদহ দক্ষিণ শাখার লোকাল ট্রেন ধরে গড়িয়া বা সোনারপুর স্টেশন থেকে নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশনের দিকের অটোতে রথতলা বাসস্টপে নেমে ডানহাতের গলিপথ ধরে অল্প একটু এগোলেই এই অভয়ারন্য।
বিঃদ্রঃ – এখানে এসে পাখিদের কোনো ভাবে বিরক্ত করবেন না। বেশি আওয়াজ করলে ওরা ভয় পেয়ে যায়, তাই যারা নিভৃতে একদিন কিছু সময় প্রকৃতির সাথে প্রেম করতে চান তাদের জন্যই এ জায়গা উপযুক্ত।