সাপ্তাহিক ধারাবাহিক উপন্যাসে প্রদীপ গুপ্ত (পর্ব – ৩০)

স্ট্যাটাস হইতে সাবধান
একতারার মাঠে যেন প্রচণ্ড জোরে একটা বজ্রপাত হলো, আর তার শব্দে ফুলটুসির কানে তালা ধরে গেলো। কী ডেঞ্জারাস এই শয়তান ছেলেটা! যে করেই হোক, ওর মোবাইল থেকে ভিডিওটাকে ডিলিট করাতেই হবে। আমন্ত্রণের সামনে যে গোড়া বাঁধানো আমগাছটা আছে, সেটার গোড়ার সিমেন্টে ধপ করে বসে পড়লো ফুলটুসি। ছেলেটার হাত ধরে একটা হ্যাচকা টান মারলো। হুড়মুড়িয়ে ছেলেটা এসে যেন ওর কোলের ওপরেই এসে পড়লো। ফুলটুসি একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ছেলেটার দিকে। সে দৃষ্টিতে যেন গোলাপি চাঁদের আভা। ডান হাতের দুটো আঙুল দিয়ে ছেলেটার কপালে এসে পড়া চুলের কুচোগুলোকে যত্ন নিয়ে সরিয়ে দিচ্ছে।
— বলি একেনে এসব হচ্চে টা কী? এটা একটা পাব্লিক প্লেস, তোমাদের বেডরুম নয়। এসব আদিখ্যেতা করতে হলে বাড়িতে গিয়ে করোনা কেন বাপু?
একজন অশীতিপর বৃদ্ধ বলে উঠলেন।
— চোখ বন্ধ করে রাখলেই হয়, ড্যাবডেবিয়ে দেখতে কে মাথার দিব্যি দিয়েছে আপনাকে? এখন আর আগের জমানা নেই গো দাদু, মেট্রোরেলের কামড়ায় ইন্টুপিন্টু করা গেলে এখানে করলে দোষ কোথায় শুনি?
— একটা বখা ছেলে। বাপমা খেদানো জানোয়ার যত্তোসব।
গজরগজর করতে করতে ভদ্রলোক চলে গেলেন।
— যতই মুখে মুখে তর্ক করি না কেন, এ কথাটা তো ঠিক, এখানে তোমার এভাবে আমাকে আদর করাটা ঠিক হয় নি। অ সোনাবৌদিভাই একটুখানি রাস্তাটা পেরিয়ে মোহরকুঞ্জে চলো না গো, ওখানে যতক্ষণ ইচ্ছে, যেভাবে ইচ্ছে আদর কোরো, এই ভিডিওটা তো ডিলিট করবোই করবো তাছাড়া তোমাকে একজন সঞ্চালিকা বানিয়ে দেবো। তাহলে আর কষ্ট করে অন্যের কবিতাকে নিজের বলে চালাতে হবে না।
— সঞ্চালিকা? বাঃ, তোমার তো দারুন বুদ্ধি ভাই, তাহলে অন্যের কবিতা কইলেও অন্যায়ের কিছু থাকবে না।
— তাছাড়া শুধু কবিতাপাঠের আসরেই না গো, শ্রুতিনাটক, আবৃত্তিপাঠের আসর, এমনকি মাচার ফাংশনেও —
— উফ্, শুনেই যেন হার্টফেল করে ফেলবো গো ভাই। আমার তো আর নিজের ভাই নেই, তোমাকে আমি নিজের ভাই পাতালাম গো দুষ্টু।
— তাহলে চলো মোহরকুঞ্জে যাই?
— ওমা, সে তো আর হবার যো নেই, তোমার সাথে তো ভাই… আচ্ছা নিজের ভাইয়ের সাথে কেউ ওসব করে? বলো দেখি!
ক্রমশ