অথ শ্রী উপন্যাস কথা-তে প্রদীপ গুপ্ত – ধারাবাহিক – পঞ্চম পর্ব

পশমিনা
কাশ্মীর উপত্যকার দৈনন্দিন সমস্যা,রাজনৈতিক ঘাতপ্রতিঘাত ও প্রেমের এক অনুভূতিশীল জীবনালেখ্য।
— স্যারজি, এই দিকে, এদিকে মুখ করে খাড়া হো যাইয়ে, সূর্যের উল্টোদিকে স্যারজি, নেহিতো বো ফোটো কালা হো যায়েগা। আরে স্যারজি হাতে বরফ নেবেন তো, হ্যাঁ, ওগুলোকে গোল্লা পাকিয়ে আশমান কি তরহা – হ্যাঁজি, এইসে, ফির শো যাইয়ে — আরে স্যারজি কুছ নেহি হোগা, আপ তো উইণ্ডচিটার পহেনাই হ্যায়, বো ভিঙেঙ্গা নেহি। এহি সাহি হুয়া, রুখ যাইয়ে যারাসা, কেয়া লাগতে হ্যায় আপকো স্যারজি, দেখিয়ে তো জারা, ভাবিনে শোচেগি কিউ আয়ি নেহি আপকো সাথ।
ছেলেটির ভেতর আমি এক কিশোরকে দেখছি যেন, কী তার উৎসাহ, কী তার উচ্ছ্বাস!
— রুখো আভি তুমহারা ফোটো খিচেঙ্গি।
সাথে সাথেই সেই কিশোর কোথায় উধাও হয়ে গেলো। আমার সামনে নতমুখে সেই ড্রাইভার দাঁড়িয়ে আছে।
— বাবুজি হমারা কামই তো হ্যায় আপলোগোকি কশ্মীর দিখানা। হামারা তসবির সে আপ কেয়া করেঙ্গে স্যারজি? আভি চলো, আভিভি অউর চার পয়েন্ট ঘুমানা হ্যায় আপকি স্যারজি, টাইম ভি উতনাহি কম হ্যায়।
বুঝলাম ছবি তোলায় ওর সম্মতি পাওয়াটা সহজ হবেনা। আমি ড্রাইভারের উল্টোদিকের দরজা খুলে ড্রাইভারের পাশের সিটে গিয়ে বসলাম।
— কিরে ছবি তোলা হলো?
আমার সাথে যে আরও দুজন আছে, ট্রাভেল এজেন্ট আর ওর সহযোগী সেটা বিলকুল ভুলেই গেছিলাম। আমাদের ট্রাভেল এজেন্টের সহযোগী ছেলেটি বেশ চনমনে।
— কিরে মাইকেল তুই নামলি না কেন রে?
— তুমি ডাকলে কোথায়? একাএকাই তো নেমে গেলে।
— চল, দুজনের একটা ছবি তুলি। বুঝলি মাইকেল, দুনিয়ায় আর কিছুই থাকবেনা, শুধুমাত্র ছবি ছাড়া।
ফের নেমে এলাম বরফের চাতালে। ড্রাইভারভাইও নেমে এলো, দুজনে পোজ দিয়ে দাঁড়িয়েছি —
— বিলকুল রনধির কাপুর অউর দেবানন্দ য্যায়সা লাগতা হয় আপলোগোকি।
— হো হো শব্দে বরফের বুকে কাঁপন ধরে গেলো।
— বহত খুব বহত খুব ভাইয়া, কতোদিন হলো প্রাণখুলে হাসতে ভুলে গেছি। এটা ঠিক ফরসা গোলগাল, দাঁড়ি গোঁফ কামানো মাইকেল বেশ লালটু টাইপের, এটাও ঠিক রনধিরের মতো না হলেও মাইকেলের ভেতর বেশ একটা কাপুর কাপুর স্মেল আছে। কিন্তু তাই বলে দেবানন্দ!তাও আবার আমাকে?
গাড়ি হঠাৎ করে ঝাঁকুনি দিয়ে দাঁড়িয়ে গেলো।
— স্যারজি? রাজকাপুরকা ববি ফিল্ম দেখে হ্যায় আপ? ডিম্পল কাবাডিয়া? হাম তুম এক কামরো মে বন্ধ হ্যায়? বো গানা কা স্যুটিং এহি পে হুয়া থা।
এবার আমার পালা। মুখটাকে সামান্য সিরিয়াস করে বললাম — বুড়া না মানো তো এক বাত বাতাউ?
— কিউ নেহি স্যারজি!
— তুম বিলকুল ঋষি কাপুর য্যায়সা লাগতে হো।
এনার ওর হাসির পালা। গাড়ির বডি দুলতে লাগলো ওর হাসির দমকে।
লেকিন স্যারজি, কশ্মীরমে কিতনে সারি ফিলম কা স্যুটিং হুয়া হ্যায়, কিতনা রোজগার হোতা হ্যায় ফিল্ম বানানেওয়ালা লোগোকো, লেকিন উসসে হমলোগোকা, কশ্মীরি লোগোকা কেয়া ফয়দা হুয়া। কশ্মীরকে বারেমে কোই নেহি সোচতা স্যারজি, আপকা ইণ্ডিয়া কি হর ইস্টেটকো সাথ কশ্মীরকো কম্পেয়ার করনেসে… গুস্তাফি মাফ কিজিয়েগা স্যারজি। আপ হামারা মেহমান। আপলোগোনে ইহা আতে হ্যায় তো হামারা ভুখ কা আগ নিভতে হ্যায়, এসব কথা আপনার সাথে বলাটা অন্যায় স্যারজি। এসব বললেই কি আর হমারা বদনসিব পালটে যাবে?
আমি চুপ করে ওর কথা শুনছি। এখন আমার রাস্তার দুধার ধরে ঝাউ আর পাইনের সারি, মনে হচ্ছে ওরা যেন আকাশের দিকে হাত বাড়িয়ে আল্লাহর কাছে দোয়া প্রার্থনা করছে কাশ্মিরী মানুষদের মাগফেরাতের জন্য।
ক্রমশ…