সাপ্তাহিক ধারাবাহিক উপন্যাসে প্রদীপ গুপ্ত (পর্ব – ২৯)

স্ট্যাটাস হইতে সাবধান

— কোনো স্টিল তোলোনি?
— কেন? তুমিই তো বললে ভিডিও করতে। তাই আমি ভিডিও তুললাম।
— কিন্তু ওটা তো…
কথাটা বলতে গিয়েও অনেক কষ্ট করে চেপে দিলো ফুলটুসি। — না মানে, অতবড়ো ভিডিও কি কেউ দেখবে বলো? একটাও লাইক কমেন্ট পড়বে না কিছু না।
— তুমি কি সেজন্যই ভিডিওটা পোষ্ট করবে না, নাকি অন্য কোনো কারণ আছে?
— অন্য কারণ? অন্য কারণ আবার কী থাকবে? কবিতাটা ভালো লিখি নি বলো? সবাই কিরকম হাততালি দিলো দেখেছো তো? সবাই কি রকম উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করলো?
— সে তো করবেই। এতো ভালো একটা কবিতা পড়লে তাহলে হাততালি পড়বে না?
— যাক, আমার লেখা যে তোমার ভালো লেগেছে তারজন্য অনেকগুলো থ্যাংকু।
— সত্যিই তো অতবড়ো একটা লেখা লিখতেও তো সময় নিয়েছে। কষ্টও হয়েছে প্রচুর। বলো তাই না?

কথা বলতে বলতেই ছেলেটা ফুলটুসির কাঁধে হাত রাখলো — ও সোনাবৌদিভাই, এতো সার্ভিস দিলাম এককাপ কফি হবে না?

ফুলটুসি মাছি তাড়ানোর ভঙ্গিতে ছেলেটির হাত ওর কাঁধের থেকে নামিয়ে দিলো।
— এটা ঠিক আজ তুমি আমার নামটা লিখিয়েছিলে বলেই আমি এতো মানুষের প্রশংসা পেয়েছি, তার ওপর তুমি আবার আমার কবিতার ভিডিওটাও তুলেছো। তোমাকে তো এজন্য কিছু একটা করাই উচিত। তা আমি বলি কি, আমার না আজকে এতোটুকুও কফি খেতে ইচ্ছে করছে না। তারচে বরং হরিদার দোকান থেকে চা খাই চলো।
— কিন্তু আমার যে খুব কফি খেতে ইচ্ছে করছে গো সোনাবৌদিভাই!
—- আমার কাছে আজ বেশী টাকাও নেই রে ভাই। আর তাছাড়া তোমার ওই ভিডিওতেও আমার কোনো দরকার নেই গো ভাই। ওটা ডিলিটেড করে দাও।
— ডিলিটেড করে দেবো? অত সুন্দর কবিতাটা? এতো বড়ো লেখাটা, কতো কষ্ট করে খাতায় টুকেছো বলো দেখি? না, এটা আমি কিছুতেই প্রাণে ধরে মুছে ফেলতে পারবো না। আর কফিও আমাকে খাওয়াতেই হবে, এ কথা বলে দিলাম।
— তোমার কথা কিছুই বুঝে উঠতে পারলাম না ভাই, বলছি না আজ টাকাপয়সার সর্টেজ আছে, আজ আমি খাওয়াতে পারবো না?
— বেশ, খাওয়াতে হবে না। আমি আমার টাইমলাইনেই না হয় পোষ্ট করবো ভিডিওটা।
— আমার লেখা কবিতার ভিডিও তুমি পোষ্ট করবে কেন? ওটা আগে মোছো বলছি।
— ধমকে কথা বলছো কেন গো বৌদিভাই? কফিও খাওয়াবে না, আবার ধমকও দেবে এটা কী ধরণের ভদ্রতা?
— আমার লেখা কবিতাপাঠের ভিডিও তুমি তোমার টাইমলাইনে দেবে এটাও বা কী ধরণের ভদ্রতা?
— কবিতাটা তোমার লেখা?
— না তো কি তোমার লেখা?
— এটাই তো আমি পোষ্ট করবো আগামীকাল। তোমার নাম করে লিখবো কীকরে তুমি কবি বিষ্ণু দের লেখা কবিতাকে তোমার নামে চালিয়ে হাততালি কুড়িয়েছো। সবাইকেই তুমি অশিক্ষিত ভাবলে কীকরে বৌদিমণি? আমি কবি বিষ্ণু দে’র একজন গুণমুগ্ধ ভক্ত। তুমি সবাইকেই বোকা বানাতে পারলেও আমাকে পারো নি। যাকগে, কফি খাওয়াবে কি না বলো।

ক্রমশ

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।